চট্টগ্রাম: দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর মজলুম ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
রোববার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে নগরের কাজীর দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, কাউকে সন্তুষ্ট করতে কোনো কিছু করা যাবে না। যা কিছু করতে হবে সব হবে আল্লাহর জন্য।
আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন তিনি হেদায়তপ্রাপ্ত হন। হেদায়াতপ্রাপ্ত হলে সেই মানুষের জীবন পাল্টে যায়। মুমিনের জন্য পেছনে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। মুমিনদের আল্লাহ যেকোনোভাবে সাহায্য করবেন। এখলাসপূর্ণ সহিহ্ নিয়ত নিয়ে আল্লাহর জন্য কাজ করতে হবে। দ্বীন বিজয়ী হবে আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে। আমাদের বেশি বেশি কোরআন ও হাদিস পাঠ করতে হবে। নবীর জীবনীর সবকিছু মানবজাতির জন্য অনুসরণীয়।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বেশি বেশি আত্মসমালোচনা করতে হবে। আল্লাহর জন্য নিজেকে সোপর্দ করতে হবে। চিন্তা-চেতনা, আমল-আখলাক সবকিছুতে আল্লাহকে হাজির নাজির জানতে হবে। ইনসাফ অত্যন্ত কঠিন একটি বিষয়। জীবনের সবক্ষেত্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষকে দ্বীনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। বাংলার জমিনে জামায়াতে ইসলামী একমাত্র আল্লাহর দ্বীনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কারো ছোটখাটো বিষয়কে বড় করে দেখা যাবে না। ঘুমানোর আগে অপরকে ক্ষমা করে দিয়ে ঘুমাতে হবে। বিদ্বেষমুক্ত অন্তরের অধিকারী হতে হবে।
চট্টগ্রামকে ইসলামের প্রবেশদ্বার উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, আগামী দিনে আমরা যেন এই চট্টগ্রাম থেকে ইসলামি বিপ্লবের সূচনা করতে পারি তার জন্য প্রত্যেক সদস্যদের ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় রুকন সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহান।
এতে দারসুল কোরআন পেশ করেন বাইতুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ, ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর ড. অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়েদ আবু নোমান।
বিশেষ অতিথি মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ফ্যাসিবাদ ও জুলুমের ধারা থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। আর কোনো ফ্যাসিবাদকে এই জমিনে মাথা ছাড়া দিতে দেওয়া হবে না। ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্রের কারণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমানসহ শীর্ষ নেতৃত্ববৃন্দকে অন্যায়ভাবে হত্যা করছে। যে আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে, সেখানে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে এই দেশের মানুষের মনজয় করেছে। এজন্য আজ বাংলাদেশের মানুষ জামায়াতের নেতৃত্ব দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। সৎ, যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব না হলে বাংলাদেশের কোনো কল্যাণ হবে না। এ জন্য আল্লাহভীরু জীবন গঠনের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্বদানের জন্য জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের (রুকন) জীবন গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রয়োজনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তৈরি করেছেন। এদেশের মানুষ জামায়াতকে নিরাপদ মনে করে। দেশের খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব মানুষ জামায়াতকে দেশ পরিচালনায় দেখতে চায়। ইসলামের ভিত্তিতে বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তাই দেশ ও জাতি গঠনে জামায়াত ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, দ্বীন কায়েমের দায়িত্ব মহান আল্লাহ তা-আলা মুমিনদের ওপর অর্পণ করেছেন। এ ব্যাপারে রুকন ভাইদের সচেতন ও যত্নশীল হতে হবে। ময়দানে বলিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য আমাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। চট্টগ্রামের প্রতিটি মানুষের মাঝে ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আমাদের দিকে চেয়ে রয়েছে। গত ১৮ বছরে দুর্নীতি লুটপাট করে, ভূমি দখল থেকে শুরু করে নৈরাজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে যে সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে সেই অবস্থান থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যে টাকাগুলো পাচার হয়েছে শুধু দুইটা পরিবার থেকে যে টাকা পাচার হয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে পারলে ৩ বছরের বাজেট হয়ে যাবে। আগামী দিনের বাংলাদেশে ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে রুকন ভাইদের ভূমিকা পালন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৪
বিই/টিসি