ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘চবিতে ১৬ বছর মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল হানিফ গং'

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৪
‘চবিতে ১৬ বছর মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল হানিফ গং' ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ১৬ বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক ব্যবসা, ওয়াইফাই ও ডিসের ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল যুবলীগ নেতা হানিফের অনুসারীরা। সেই হানিফ গং এখন শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছে চবি নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক ঐক্য।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টায় চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।  

লিখিত বক্তব্যে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ফুয়াদ হাসান বলেন, বিপ্লবত্তোর সময়ের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে আমরা যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক ক্লাস পরীক্ষার পরিবেশ তৈরিতে ব্যস্ত, ছাত্রদের অধিকার গুলো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যার যার জায়গা থেকে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছি, ঠিক তখনই আমরা দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রেলগেট এলাকায় বসবাসরত একদল সন্ত্রাসী এবং ফাসিবাদের দোসররা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত এবং ব্যাহত করতে চাইছে।

 

এরই অংশ হিসেবে গত (২১ অক্টোবর) ভোরবেলা রেলগেট এলাকার হানিফ গং এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যপক ভাঙচুর চালিয়েছে এবং ছাত্রদের মধ্যে যারা সেই ঘটনা প্রতিহত করতে গিয়েছিল তাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে।  

শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, এই হানিফ বাহিনী এবং তার দোসররা বিগত ১৬ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক কারবারি, ওয়াইফাই এবং ডিস ব্যবসা এককভাবে নিয়ন্ত্রণের নামে চাঁদাবাজি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় শিক্ষকদের বাসার টিএন্ডটি টেলিফোন লাইন ও ইন্টারনেটের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে বারবার, যেকোনো ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেই মালিকের ওপর চাঁদাবাজির খড়গ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব কিছু প্রশাসনের নাকের ডগায় হলেও স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করেছে। ফলে তারা ছাত্রদের ওপর আক্রমন করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতার প্রতিবাদ ও সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে ড. ফুয়াদ আরও বলেন, গত (২১ অক্টোবর) আক্রমনের সময়ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ঘটনা নিরসনে কোনো সহযোগিতা করেনি বললেই চলে। আমরা হানিফ বাহিনীর প্রধান হানিফসহ তার সহযোগিদের অতিদ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে উক্ত ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের যারা নিরব ভুমিকা পালন করেছে তাদেরও বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ছাত্রছাত্রীদের ধৈর্যচ্যুতর দায়ভার নেওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। '

অবৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষকরা বলেন, অবৈধভাবে বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগকে বৈধ করার জন্য বিগত প্রশাসনে নতুন আইন তৈরি করেছিলো। সেটা হলো- অতিরিক্ত এই নিয়োগপ্রাপ্তরা পরবর্তীতে বিজ্ঞাপন ছাড়াই শুধু প্লানিং কমিটির মাধ্যমে আবেদন করে নিয়োগ পাকাপোক্ত করতে পারবে। বর্তমান প্রশাসন এসব নিয়োগ ও উক্ত আইন বাতিল করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

একই প্রসঙ্গে ওশানোগ্রাফী বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন বলেন, ওশানোগ্রাফি বিভাগে বিজ্ঞপিত পদের অতিরিক্ত দুইজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও নিয়োগের দিন পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ডের মেম্বার কারা তা জানতে পারিনি। আমি বোর্ডে গিয়ে মেম্বার দুইজনকে দেখি, যাদের সঙ্গে বিভাগের দুরতম সংশ্লিষ্টতাও ছিলো না।  

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক ঐক্য চবির সমন্বয়ক প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান,  অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ফুয়াদ হাসান, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক, বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আকতার হোসেন, ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোছাইন, গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল আলীম, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম কিবরিয়া, ওশানোগ্রাফী বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাছলিম উদ্দীন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৪
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।