ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবিতে হামলার পরই জোরালো হয় ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৪
চবিতে হামলার পরই জোরালো হয় ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: গত ২১ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের গুপ্ত হামলার জেরে মাঠে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা৷ আর তখন ৫ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবরে সূর্যোদয়ের আগেই চবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। ভোরে শতশত শিক্ষার্থীর স্লোগানে প্রকম্পিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো এলাকা।

 

এদিকে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে উস্কে দেয় স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলক্রসিং এলাকায় স্থানীয়রা অবস্থান নিলে সেখানে আঁটকে পড়ে পুলিশ।

বিষয়টি অমীমাংসিত অবস্থায় বেশ কয়েকঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ তখন একাই এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এবং শিক্ষার্থীরা প্রক্টরকে একা যেতে দেননি। প্রক্টরকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হওয়া সেই স্থানের দিকে। ততক্ষণে চবি প্রক্টরের সাহসী ভূমিকা বেশ প্রশংসিত হয়।

ঘটনাটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস ও স্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্র-জনতা। সন্ধ্যায় টিএসসিতে মশাল মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর শুরু হয় ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন। একের পর এক কর্মসূচি, বিবৃতিতে অভ্যুত্থানের পর থেকে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের সেই দাবিটি আরও জোরালো হতে থাকে। অবশেষে বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।  

এদিকে ঘোষণার এরপরই সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসেও শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আনন্দ মিছিল। শুরুটা যেহেতু এই ক্যাম্পাসে, তাই শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসটাও একটু বেশিই। বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে এসে জড়ো হতে থাকে শতশত শিক্ষার্থী।   

এরপর জিরো পয়েন্ট থেকে আনন্দ মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী মোড়, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ হয়ে দক্ষিণ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পুনরায় জিরো পয়েন্টে এসে ঘণ্টাব্যাপী চলা মিছিলটি সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।  

মিছিলে স্লোগান দিতে দেখা যায় কোটা আন্দোলনের শুরুতে চবি ছাত্রলীগের নিপীড়নের শিকার হওয়া, পুলিশের বন্দুকের সমানে বুক পেতে দাঁড়িয়ে যাওয়া সেই খান তালাত মাহমুদ রাফিকে। এছাড়া চট্টগ্রামের আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে থাকা মোহাম্মদ আলী, ইব্রাহিম রনি, ইসহাক ভূঁইয়া, আব্দুর রহমানসহ অনেকেই অংশ নেন আনন্দ মিছিলে।  

এসময় শিক্ষার্থীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণও করতে দেখা যায়। শুধু তা-ই না, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় টান পড়ে মিষ্টিরও। তবে ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে চবিতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন আর দেখা যায় না। গত কয়েকবছরে চবি ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড দেখলে খুব সহজেই অনুমান করা যায়, কতো ঠুনকো বিষয় নিয়ে নিজ দল-মতের মানুষের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ানো যায়। তাই মিষ্টির টান পড়লেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যা চবি ক্যাম্পাসের জন্য স্বস্তির ব্যাপারই বলা যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চবির অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী বলেন, বিশ্বজিৎ, আবরার ফাহাদসহ অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষকে দিনেদুপুরে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। দেশের মানুষ এই পেটুয়া বাহিনীর কাছ থেকে মুক্তি চেয়েছে বহুবছর ধরে। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর রাতে চবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী হামলার পর দাবিটি আরও জোরালো হয়। চবি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সারাদেশে একযোগে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।

মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, চবি ক্যাম্পাসে এই ছাত্রলীগের দ্বারা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, ব্যবসায়ী- কমবেশি সবাই নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও আনন্দ মিছিল হয়েছে। মিছিলের ঘোষণা শোনামাত্র মুহূর্তেই শতশত শিক্ষার্থী জড়ো হয় জিরো পয়েন্টে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এতোটাই বেশি ছিলো যে, মিষ্টির টান পড়েছে। এটা চবি ক্যাম্পাসের নির্যাতিত মানুষের জন্য একটি আনন্দঘন ঐতিহাসিক দিন হয়ে থাকবে।

এদিকে রাতেই ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার গ্যাজেট প্রকাশ করে সরকার। যেখানে উল্লেখ করা হয়, 'আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নানা সময়ে হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার'।  

ঘোষণার পরপরই সারাদেশে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণসহ ক্যাম্পাসগুলোতে ভোজের আয়োজন করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাতভর সরব থাকতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৪
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।