ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অভিযোগ প্রমাণের পরও পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির ছাত্রকে বাঁচানোর চেষ্টা

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
অভিযোগ প্রমাণের পরও পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির ছাত্রকে বাঁচানোর চেষ্টা ...

চট্টগ্রাম: এক ছাত্রীকে ‘হত্যা, গুম ও ধর্ষণের’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করার অভিযোগ ওঠেছে চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।  

তদন্ত কমিটি ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির তদন্তে ওই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হলেও কয়েকজন শিক্ষক তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে ক্যাম্পাসে আলোচনা রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

জানা যায়, নিজের বিভাগের জুনিয়র ছাত্রীকে প্রায় এক বছর ধরে নানাভাবে হেনস্তা করে আসছিলেন সুমন বৈদ্য নামের ওই ছাত্র।

ছাত্রী প্রতিবাদ করলে উল্টো তাকে হত্যা, গুম ও ধর্ষণের হুমকি দিতেন। পরবর্তীতে বিষয়টি সবাইকে জানানোর কথা বললে সুমন আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন মিডিয়া হাউস তার পকেটে আছে দাবি করে ওই ছাত্রীকে হুমকি দিতে থাকেন। ক্রমাগত হুমকিতে মানসিক যন্ত্রণা ও আতঙ্কে ওই ছাত্রীটি বেশ কিছুদিন ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়াও বন্ধ করে দেন। তবে জুলাই বিপ্লবের পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে সহপাঠীরা সাহস জোগালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে আরও কয়েকজন ছাত্রীকে হয়রানির অভিযোগ সামনে আসে।  

গত ১৯ আগস্ট ছাত্রীর করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর এস এম ওসমান গনিকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির কাছে সুমন তার বিরুদ্ধে   আনা অভিযোগ স্বীকার করে নেন এবং তার আচরণের জন্য ক্ষমা চান। এসময় সাময়িক বহিষ্কারাদেশ জারি করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ছাত্রকে তার অপরাধের প্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করা হয়। এ অবস্থায় নিজের বক্তব্য পাল্টে ফেলেন সুমন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থাসহ তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন এবং ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন।

এর ভিত্তিতে গত ১৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি ওই ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের প্রায় দুই সপ্তাহ গড়ালেও এখনো বহিষ্কারাদেশ জারি করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কয়েকজন শিক্ষক ওই বহিষ্কারাদেশ আটকানোর চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ‘ওই ছাত্র শুধু একজন নয়, বহু ছাত্রীর জীবন বিষিয়ে তুলেছে। সবকিছু প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও হয়েছে। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছেন কয়েকজন শিক্ষক। একজন অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে এই শিক্ষকেরা মূলত এমন জঘন্য অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। দ্রুত ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা না হলে আমরা আন্দোলনে নামবো’।

তদন্ত কমিটির সদস্য ও সহকারী প্রক্টর তাসলিমা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও সাবেক প্রক্টর এস এম ওসমান গনি বলেন, ‘এটা নিয়ে পরে কি হয়েছে আমার জানা নেই। এখন আমি প্রক্টরের দায়িত্বে নেই’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ওবায়দুর রহমান মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে গড়িমসির কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তদন্ত কমিটি একটি সুপারিশ জমা দিয়েছে। সেটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে। পরে এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সভায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে’।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর রাশেদ খান মিলন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি মাত্র যোগাদান করেছি। অনেক বিষয়ে এখনো ওয়াকিবহাল নই। সবাই আমাদের শিক্ষার্থী। বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে’।

২০১২ সালে নগরের খুলশী এলাকায় গড়ে তোলা হয় পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২৪ 
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।