ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জিপিএ ফাইভ নয়, জানার জন্য পড়ো: জাফর ইকবাল

স্টাফ করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪
জিপিএ ফাইভ নয়, জানার জন্য পড়ো: জাফর ইকবাল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: বছর শেষের প্রচন্ড শীতেও চট্টগ্রামে পড়ছে টিপটিপ বৃষ্টি। আর বৃষ্টি বড্ড ভালবাসেন তিনি।

ভালবাসেন তার ক্ষুদে ভক্তদেরও।

তাই প্রিয় ভক্তদের কথা রেখে আবারও চট্টগ্রাম আসলেন সবার প্রিয় ড.জাফর ইকবাল।


গ্রন্থবিপনী বাতিঘরের ১০বছর পূর্তি উপলক্ষে পাঠকের মুখোমুখি শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বুধবার বিকেলে সপরিবারে চট্টগ্রাম আসেন ড.মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

চট্টগ্রামের ড.খাস্তগীর স্কুলের মাঠে এ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আদনান মান্নানের সঞ্চালনায় স্বরনন্দন প্রমিত বাংলা চর্চা কেন্দ্রের আবৃত্তির পরই স্টেজে উঠেন জাফর ইকবাল।

স্টেজে উঠে তিনি বলেন, এই টিপটিপ বৃষ্টি আমার খুব ভাল লাগে। তবে আরও ভাল লাগতো যদি মুষলধারে বৃষ্টি পড়তো।

ক্ষুদে ভক্তদের তিনি বললেন, আমি যেদিন এদিনটা নিয়ে লিখবো সেদিন লিখবো আমরা টিপটিপ নয়,মুষলধারা বৃষ্টির মধ্যে বসেছিলাম। বাংলাদেশের বৃষ্টির মত সুন্দর দৃশ্য পৃথিবীর আর কোথাও নেই।

তিনি ক্ষুদে ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন,আমাদের সবার মাথায় ১ দশমিক ৩ কেজির একটা মষ্তিষ্ক আছে। এই ব্রেইন নিয়ে খুশি থাকলে হবেনা। একে ব্যবহার করতে হবে,বদলাতে হবে,শক্তিশালী করতে হবে।

ড.জাফর ইকবালের বক্তব্যে ভক্তদের তুমুল করতালিতে খাস্তগীর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ভরে উঠে। তিনি বলেন,তোমরা জিপিএ ৫ এর পেছনে ছুটবেনা,তোমরা বই পড়। বেশি বেশি বই পড়।

ফেইসবুক ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিয়েল বুক আর ফেইসবুকের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তোমরা রিয়েল বুকটাই বেশি বেশি পড়বে।

পাঠকদের প্রশ্নের জবাবে শৈশবের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমাদের বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। আমাদের অর্থ কষ্ট ছিল, কিন্তু বই পড়া ছিল আমার বাবার বিলাসীতা। আমরা বই পড়তে পড়তে বড় হয়েছি।

তিনি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা যারা রবীন্দ্রনাথ ,নজরুলকে দেখোনি,তারা তাদের বই পড়ে তাদেরকে চিনতে পারবে।

ক্ষুদে ভক্তদের প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল মজার মজার প্রশ্নে ভরা। বেশিরভাগ প্রসঙ্গ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস,সৃজনশীল প্রশ্ন,পাঠ্যপুস্তক,রাজনীতি,ইন্টারনেট ব্যবহার,বই পড়া নিয়ে।

ভক্তদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,চাকরি পাওয়ার জন্য নয়,দেওয়ার জন্য পড়। একটা কিছু কর যাতে তোমরা চাকরি দিতে পারো।

প্রশ্নফাঁস হলে সেই শিক্ষার কোনো দাম নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটাকে যেকোনো উপায়ে বন্ধ করতে হবে। তোমরা জানো,শেখো,জিপিএ,মার্কস নিয়ে মাথা ঘামাবেনা।

ঠিকমত বই পড়লে জিপিএ ৫ পাওয়া খুব সোজা, বলেন তিনি। কিন্তু জানার জন্য পড়তে হবে।

আগামী প্রজন্মের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন,রাজনীতির নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তরুণরা রাজনীতিতে যোগ দিতে চায় না। কিন্তু তোমরা তো এক নাম্বার মানুষ। তোমরা যোগ দেবে,কারণ,তোমরা রাজনীতির নোংরামি পরিষ্কার করবে।

এক শিশু বই পড়তে দেয়া হয়না অভিযোগ করে প্রশ্ন করলে জাফর ইকবাল তাকে বলেন,বাসায় বলবে আমি বলেছি বই পড়তে দিতে। বই পড়লে কখনই পরীক্ষা খারাপ হয়না।

অনুষ্ঠানে জাফর ইকবালের দু’সন্তান নাবিল ইকবাল, ইয়েসিম ইকবাল তাদের পিতা সম্পর্কে বক্তব্য দেয়। বক্তব্য দেন তার স্ত্রী ড.ইয়াসমিন হকও।

পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ম ও ৮ম শ্রেনীর পরীক্ষা থাকার কোনো দরকার নেই। এটা শিশুদের ওপর চাপ তৈরি করছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইকুইটি প্রোপার্টিজ ম্যানেজম্যান্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম মামুদ, ড.খাস্তগীর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হাসমত জাহান ও মুসলিম বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস.এম জিয়াউর হায়দার হেনরী। স্বাগত বক্তব্য দেন বাতিঘরের স্বত্তাধিকারী দীপংকর দাশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।