ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চার বছর পর কাল থেকে আবার বাঘদর্শন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
চার বছর পর কাল থেকে আবার বাঘদর্শন রয়েল বেঙ্গল টাইগার (ফাইল ফটো)

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা আসার প্রথমদিন বাদে আজ পর্যন্ত তারা ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। লাল-সবুজের পর্দায় মোড়ানো ছিল তাদের ‘ঘরের’ চারপাশ। এবার সেই পর্দা তোলা হচ্ছে। বাঘ-বাঘিনী নতুন বছরের প্রথমদিনের সকালেই উম্মুক্ত হচ্ছে দর্শককুলের সামনে? এর মধ্যে দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর চার বছর বাঘ না দেখার আক্ষেপ ফুরাচ্ছে।

 

আফ্রিকা থেকে ৩৩ লাখ টাকায় আমদানি করা এই এক জোড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পৌঁছে চলতি মাসের ৯ ডিসেম্বর। এর একটি বাঘের বয়স ১১ মাস, অপরটির ৯ মাস।

চট্টগ্রামে চিড়িয়াখানায় আসার পর থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছিল তাদের। খাচার চারপাশে কাপড়ে মোড়ানো থাকায় প্রথমদিন ছাড়া দর্শকরা তাদের আর দেখতে পারেনি।

নতুন বছরের উপহার হিসেবে তাদের এবার সবার সামনে আনা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০১৭ সালের প্রথমদিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে তাদের দর্শকদের সামনে উন্মুক্ত করা হবে। এ উপলক্ষে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। ’

তিন আরও বলেন, এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের নতুন বছরের উপহার। সবাইকে তাদের দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ’

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. মনজুর মোরশেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাঘ দুটির কোয়ারান্টাইন পিরিয়ড ২৪ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। বাঘ দম্পতি সুস্থও স্বাভাবিক রয়েছে এবং আমাদের চিড়িয়াখানার পরিবেশের সাথে ভালোভাবে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। বছরের প্রথমদিন হতে নববর্ষের শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে চিড়িয়াখানায় আগত সকল দর্শনার্থীদের জন্য বাংলার বাঘ দেখার সুযোগ করে দেয়া হবে। ’রয়েল বেঙ্গল টাইগার (ফাইল ফটো)

এর আফ্রিকা থেকে বিমানযোগে কাতার হয়ে বাঘের শাবক দুটি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানোর পর রাত পৌনে তিনটায় ট্রাকে তুলে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা। পরদিন ৯ ডিসেম্বর বাঘ সকাল পৌনে ১০টায় বিশেষভাবে তৈরি সুদৃশ্য দুটি কাঠের বাক্সে ভরা বাঘ দুটিকে বহনকারী ট্রাক চিড়িয়াখানায় পৌঁছে। একইদিন দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বাঘ দুটিকে দর্শকদের জন্য বড় খাঁচায় উন্মুক্ত করে দেন। এদিন দর্শকদের জন্য বাঘ দুটি উন্মুক্ত রাখা হলেও পরে কোয়ারান্টাইন পিরিয়ড এর জন্য বাঘ দুটির খাচা

সে সময় চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. মনজুর মোরশেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ‘আমাদের সুন্দরবনে ২০১৫ সালে বাঘ শুমারি হয়েছিল। তখন ১০৬টি বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু সুন্দরবন থেকে বাঘ ধরা অসম্ভব। অন্য কোনো চিড়িয়াখানা থেকেও সংগ্রহ করা যায়নি। তাই দরপত্রের মাধ্যমে চার বছর বাঘশূন্য থাকা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য বাঘ আমদানি করতে হয়েছে। বাঘগুলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া বাবদ ৩৩ লাখ টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে প্রথম ১৫ দিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থাকবে বাঘগুলো। যদি টিকে যায় তবে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে। ’

এই ১৫ দিন শেষ হয়েছে ২৪ ডিসেম্বর।

চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০০৩ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি বাঘ আনা হয়েছিল।  ২০০৬ সালে বাঘ ‘চন্দ্র’ মারা যায়।   ২০০৯ সালে তার সঙ্গী ‘পূর্ণিমার’ ক্যান্সার ধরা পড়ে।   ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পূর্ণিমা মারা যায়।   এরপর থেকে গত চার বছর বাঘহীন অবস্থায় আছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।

পূর্ণিমার ক্যান্সার ধরা পড়ার পরই বাঘ ও বাঘিনী চেয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা ও ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছিল।   কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি।   এরপর মন্ত্রণালয়েও বেশ কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়েছিল।  

বারবার চিঠি লিখে সাড়া না মেলায় চলতি বছরের ২৫ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নির্বাহী কমিটির সভায় প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে নিজেরাই বাঘ কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।  

মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাবার পর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুটি বাঘ কেনার জন্য চলতি বছরের ১৯ আগস্ট আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়।   চারটি প্রতিষ্ঠান বাঘ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করে দরপত্রে অংশ নেয়। সর্বনিম্ন ৩৩ লাখ টাকায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর বন্যপ্রাণী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফেলকন গ্রুপকে কার্যাদেশ দেয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বাঘ কেনার পুরো টাকা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার তহবিল থেকে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।