চট্টগ্রাম: বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা। নগরের কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে জামালখান পর্যন্ত যানজট।
গণি বেকারি মোড় থেকে জামালখান যাওয়ার যে রাস্তা, সেখানে গাড়ি দাঁড়ানোর কোনও সুযোগ নেই। একটি গাড়ি রাস্তায় দাঁড়ালেই যানজট লেগে যায়। সেখানে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে নিতে এসে ডজন ডজন গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। আসকার দীঘি মোড় থেকে সার্সন রোড হয়ে চট্টেশ্বরী মোড় পর্যন্ত সড়কেও একই চিত্র।
এটি শুধু একদিনের দুর্ভোগ নয়, স্কুল খোলা থাকলে প্রতিদিনই এসব সড়কে যাতায়াতকারী মানুষকে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন কষ্ট।
এদিকে রমজানে চট্টগ্রাম ওয়াসার পাইপলাইন মেরামত করার জন্য আসকার দীঘি-কাজীর দেউড়ি সড়কে রাস্তা কেটে ফেলা হয়। এখনও সে রাস্তা সংস্কার করা হয়নি। ভাঙা রাস্তায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকির পাশাপাশি লেগে থাকছে যানজট।
চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী সাঈদ মোস্তফা সাদিক রিজভী এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন প্রতিদিন। কলেজ মোড় থেকে গাড়িতে উঠে যানজটের কারণে তাকে নেমে যেতে হয় গণি বেকারি মোড়ে। সেখান থেকে হেঁটে জামালখান মোড় হয়ে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে কাজীর দেউড়ি থেকে অন্য গাড়িতে উঠতে হয় তাকে।
এমন দুর্ভোগের কথা জানালেন ব্যাংক কর্মকর্তা সাজিদুল কবির চৌধুরীও। তিনি চকবাজারে একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। জামালখান আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে সন্তানদের ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারে নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। গাড়িগুলো স্কুলের সামনেই সারি সারি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, যার কারণে সকাল থেকেই শুরু হয় যানজট। এ সড়কের হাজারও যাত্রীর ভোগান্তির শেষ নেই।
একই চিত্র চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলের সামনে। ছুটি হওয়ার আগেই সেখানে শত শত গাড়ি শিক্ষার্থীদের নিতে আসতে সড়কেই সারি সারি লাইনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। যার কারণে প্রায় প্রতিদিনই এ সড়কে লেগে থাকে যানজট। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থেকে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা।
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ বালক উচ্চ বিদ্যালয়, লালখান বাজার মোড়ের স্যার মরিস ব্রাউন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সানমার ওশান সিটির উল্টো দিকে উইলিয়াম ক্যারি একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমির পাশে বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের বহনকারী ব্যক্তিগত গাড়িগুলো সৃষ্টি করছে জানজট।
সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এন এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলের প্রধান শিক্ষক তহসিন খান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সিকিউরিটি গার্ড ৩০ জনের ওপরে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাতে এ সড়কে যানজটের কারণে জনগণের দুর্ভোগ না হয়। প্রত্যেকটি পয়েন্টে তারা কাজ করেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা ব্যক্তিগত ড্রাইভারকে ট্রাফিক নিয়ম অমান্য করলে নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা হয়। এর পরও যদি একই অপরাধ পুনরায় করে তাহলে শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে মূলত জনসচেতনতার প্রয়োজন। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো বাস এ সড়কে চলাচল করে। তারা চাইলে অন্য সড়ক ব্যবহার করতে পারেন। তাদেরকে আমরা অনুরোধ করেছি, কিন্তু শুনছে না।
চট্টগ্রাম আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. ইউসুফ বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা নিজেরাও বিব্রত৷ আমরা অভিভাবকদের নোটিশ দিয়ে জানিয়েছি, যাতে তারা সড়কে গাড়ি পার্কিং না করেন। এরপরও তারা এটা করছেন৷ আমরা বাধ্য হয়ে পুলিশকে অবহিত করেছি, সড়কে কোনও গাড়ি পার্কিং করলেই যাতে জরিমানা করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, স্কুল ছুটির আগে যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে অবৈধ গাড়ি পার্কিং রোধে ব্যবস্থা নিতে অবহিত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২২
বিই/এসি/টিসি