কলকাতা: অর্থাভাবে লাশবাহী গাড়ি না মেলায় মায়ের মরদেহ কাঁধে তুলে হাঁটলেন ছেলে। পাশে মৃতের স্বামী।
বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) এমনই মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা। যা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা রাজ্যকে।
স্মৃতিতে ভেসে এলো ২০০৬ সালে প্রতিবেশী রাজ্য উড়িষ্যার কালাহান্ডির করুন স্মৃতি। সেখানেও অর্থের অভাবে স্ত্রীর মরদেহ কাঁধে নিয়ে কয়েক মাইল হেঁটেছিলেন স্বামী।
জলপাইগুড়ির ক্রান্তি এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মীরানী দাস। অসুস্থ হয়ে গত কয়েকদিন ধরেই জেলার সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) সকালে ওই নারীর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল থেকে ক্রান্তির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। মায়ের মরদেহ বাড়ি নিয়ে যেতে লাশবাহী গাড়ির খোঁজ করেন ছেলে। তিন হাজার রুপি দাবি করে সেই গাড়ি। কিন্তু এতো দেওয়ার সামর্থ নেই দিনমজুর ছেলের।
নিরুপায় হয়ে ছেলে ঠিক করেন মায়ের দেহ কাঁধে তুলেই ৫০ কি.মি. পথ হেঁটেই বাড়ি যাবেন। সঙ্গ দেন মৃতের স্বামী। কিছুটা হাঁটা কিছুটা বিশ্রাম, এইভাবে পথ চলা শুরু করেন বাপ-ছেলে। সেই দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে যায় স্থানীয়রা। এরপরই এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় লাশবাহী গাড়িতে করেই বাড়িতে পৌঁছায় মৃতদেহ।
যদিও পশ্চিমবঙ্গের সব সরকারি হাসপাতালে প্রান্তিক মানুষের জন্য বিনামূল্যে লাশবাহী গাড়ির পরিষেবা রয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে, তাহলে কেনো সেই পরিষেবা পায়নি তারা?
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মৃতের পরিবার লাশবাহীর গাড়ির কোনো আবেদনই জানায়নি। তবে মৃতের ছেলে জানান, অনেক আবেদন নিবেদন করেও কাজ হয়নি।
এই ঘটনায় শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর গোস্বামী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, হতভাগ্য সন্তান এবং স্বামী। হতভাগ্য আমরাও, তাই এই দৃশ্য দেখতে হলো। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, গরীবদের জন্য তার সব কাজ সম্পন্ন। এদিনের মর্মান্তিক ঘটনা সেই সম্পন্ন কাজের প্রমাণ দিলো।
এদিকে, গোটা বিষয়কে দুঃখজনক বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৩
ভিএস/এনএস