ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ত্রিপুরা থেকে কেন্দ্র সরকারের উৎখাতের ডাক দিলেন মমতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
ত্রিপুরা থেকে কেন্দ্র সরকারের উৎখাতের ডাক দিলেন মমতা

আগরতলা (ত্রিপুরা): ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে তৃণমূল কংগ্রেস। এই কাজে সহায়তা করবে ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্য।

নির্বাচনী প্রচারে ত্রিপুরা এসে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) মঞ্চ থেকে এই হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস দলের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী ও পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  

নির্বাচনী প্রচারের উদ্দেশ্যে দুদিনের সফরে সোমবার ত্রিপুরায় আসেন তৃণমূল কংগ্রেস দলের সর্বভারতীয় সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরায় পৌঁছে তিনি ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরে গিয়ে পূজা দেন এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

মঙ্গলবার মমতার সফরের দ্বিতীয় ও শেষ দিন। এদিন তিনি আগরতলা শহরে একটি পদযাত্রা অংশ নেন এবং সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। রাজধানীর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে থেকে পদযাত্রাটি শুরু হয় এবং শহরের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাজপথ পরিক্রম করে আবার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুরুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,  ত্রিপুরা আমার খুব পরিচিত একটি জায়গা। কংগ্রেস দলের হয়ে রাজনীতি করার সময় আমি সারা রাজ্য ঘুরে বেরিয়েছি। রাজ্যের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আমি যাইনি।  

তিনি বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে ত্রিপুরা রাজ্য রাজনৈতিক সন্ত্রাসে জর্জরিত। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তার দলের যে নেতারা এসেছেন, সবাই প্রাণঘাতী আক্রমণের শিকার। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর যে প্রাণঘাতী আক্রমণ হয়েছিল, বুলেটপ্রুফ গাড়ি যদি না থাকতো তাহলে বেঁচে ফেরা কষ্টকর হত। অভিষেক, কুনাল ঘোষ, সুস্মিতা দেবসহ অন্যান্য নেতার ওপর একাধিক মামলা হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যজুড়ে। তবে এসব করে তৃণমূল কংগ্রেসকে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়।

মমতা অভিযোগ করেন, বাংলায় বিজেপি কংগ্রেস ও সিপিআইএম একজোট হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। পাশাপাশি তিনি নাম না করে সুদীপ বর্মন এবং সুবল ভৌমিককে কটাক্ষ করে বলেন, দল বদলুরা সারাক্ষণ ক্ষমতায় থাকার জন্য একের পর এক দল পরিবর্তন করছেন।

তৃণমূল কংগ্রেস দল গঠন প্রসঙ্গে তিনি জানান, একদিকে যেমন আগের সিপিএম নেই, ঠিক তেমনি কংগ্রেস দল আগের মতো নেই। তাই তিনি বাধ্য হয়ে কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেস দল গঠন করেছিলেন। দলটি টানা প্রায় ২৩ বছর ধরে লড়াই করে যাচ্ছে।  

এদিন মমতা ত্রিপুরার প্রয়াত সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বাম গণ আন্দোলন গড়ে তোলার অন্যতম নেতা নৃপেন চক্রবর্তীর প্রতি তিনি শ্রদ্ধা করেন। নৃপেন চক্রবর্তীও শেষ জীবনে বাম নেতাদের কাজকর্মে হতাশায় ছিলেন বলে জানান তিনি।

ত্রিপুরা রাজ্যের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তার অভিযোগ, বামফ্রন্ট থেকে শুরু করে বিজেপি সরকার, কেউ ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি। তাই তার দাবি ত্রিপুরা রাজ্যে উন্নয়ন শান্তি কর্মসংস্থান এবং ঐক্য বজায় রাখতে পারবে শুধু তৃণমূল কংগ্রেস। তাই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পশ্চিমবাংলার উন্নয়নের সঙ্গে ত্রিপুরার উন্নয়নের পার্থক্য টেনে মমতা বলেন, এই রাজ্যের কয়েকজনকে বিনামূল্যে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে, পশ্চিমবাংলায় নিঃশর্তে মানুষদের জমি পাট্টা দেওয়া হয়েছে। অসহায় পরিবারের সদস্যদের মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য ২৫ হাজার রুপি করে দেওয়া হয়। এমনকি যে অসহায় লোকেরা পরিবারের সদস্যদের মৃতদেহ সৎকার করতে সমস্যায় পড়েন, তাদেরও তৎক্ষণাৎ দুই হাজার রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবাংলার মেয়েদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে যে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করা হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য বার্লিনে আগামী কিছুদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সম্মান জানানো হবে।

পশ্চিমবাংলার যে সকল ছাত্রছাত্রী ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়ার জন্য গিয়েছিল দেশের যুদ্ধের কারণে মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে তারা দেশে ফিরে এসেছে। তারা যাতে এই দেশে পড়াশোনা করতে পারে তার জন্য ভারত সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েও কোন কিছু পাননি। তারপরও পশ্চিমবাংলার সরকার নিজেদের উদ্যোগে তাদের পড়ানোর ব্যবস্থা করছে।

শিক্ষার উন্নয়নের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন ২০১১ সালের তৃণমূল কংগ্রেস দল পশ্চিমবাংলায় ক্ষমতার আসার আগে মাত্র ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, তাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই কয়েক বছরে ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। তৃণমূল সরকার ত্রিপুরা রাজ্যে গঠিত হলে এ রাজ্য শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নতি করা হবে।

সেই সঙ্গে মমতার আরও দাবি, সারা দেশে বিজেপি সরকারের আমলে ৪০ শতাংশ বেকার বেড়েছে, অপরদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সময়ে পশ্চিমবাংলায় ৪০ শতাংশ বেকার কমেছে। বিজেপি মুখে উন্নয়নের কথা বললেও তারা চোর।  

এম জি এন রেগা প্রকল্পের শ্রমিকদের অর্থ চুরি করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাই বিজেপিকে একটি ভোটও না দেওয়ার আহ্বান রাখেন।  

বিজেপি দল ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসার আগে চাকরিচ্যুত ১০ হাজার ৩২৩ জনকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পাঁচ বছর হয়ে গেলেও তারা তাদের জন্য কোন কাজ করেনি কেন- সেই প্রশ্ন তুলে মমতা তৃণমূল ক্ষমতায় এলে তাদের সহায়তার আশ্বাস দেন।

সেই সঙ্গে তিনি বলেন, সবাই তৃণমূলকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তবে এখন আর কেউ ধ্বংস করতে পারবে না কারণ একটি বড় গাছ হয়ে উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেস দলই বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন সরকারকে ক্ষমতা থেকে তাড়াবে। আর এই কাজে ত্রিপুরা ও মেঘালয়বাসী সহায়তা করবে। ২০২৪ সাল আসতে আসতে মানুষ আরও অনেক কিছু দেখবে।  

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ডাবল ইঞ্জিনের একটি সিবিআই, আরেকটি ইডি। এখানেও চুরি করবে, কেন্দ্রও চুরি করবে। কেউ কাউকে ধরবে না। ত্রিপুরায় আর ডাবল ইঞ্জিন সরকার চায় না। চায় বাংলার সিঙ্গেল ইঞ্জিন সরকার। আগামী মার্চ থেকে দুয়ারে উন্নয়ন চাই। মমতার নেতৃত্বে ত্রিপুরার মাটিতে পরিবর্তনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  

বিজেপির বিকল্প যে সিপিএম বা কংগ্রেস হতে পারে না, সেটা এদিন আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

অভিষেক বলেন,  প্রায় ২৫ বছর ত্রিপুরা সিপিএমের অপশাসন দেখেছে। বাংলা ও ত্রিপুরা দুটি রাজ্যকে ধ্বংসাবশেষ করে দিয়েছে বামেরা। সিপিএমের সেই হার্মাদরাই আজ বিজেপির জল্লাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩ 
এসসিএন/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।