কলকাতা: তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ এখন একটি শক্তিশালী দেশ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, ভোট এলে বিরোধীরা আওয়ামী লীগকে গালিগালাজ শুরু করে দেয়। ভারতের বিরোধিতা করে। তারা খুঁজে খুঁজে বের করে, হিন্দুদের কোন অনুষ্ঠানে কোথায়, কোন মন্ত্রী মাথায় টিপ পড়েছে বা প্রণাম করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সেখানে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে যে দলটি সবসময় সংগ্রাম করেছে, অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে যে দলটি প্রতিষ্ঠিত, সেটি হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনার জন্যই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবার একযোগে লড়াইয়ে, মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে আমাদের বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর সাম্প্রদায়িকতাকে আবার ফিরিয়ে আনেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ওপর ভিত্তি করে প্রচারণা চালায় বিএনপি। তাদের জোটের দলের নেতারা অনেক আফগানিস্তানে ট্রেনিংয়ে গিয়েছিল তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য। তারা প্রকাশ্যে স্লোগান দেয়, আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপির ক্ষমতায় আসার পর তাদের নেতৃত্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন হয়েছে শুধুমাত্র নৌকা চিহ্নে ভোট দেওয়ার অপরাধে। এমনকি নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, মন্দির ভাঙা হয়েছে। এ কারণে আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসগুলোতে লঙ্গরখানা খুলতে হয়েছিল হিন্দুদের আশ্রয়ের জন্য। এই হলো বিএনপি।
তিনি বলেন, যখন বাংলাদেশে আমরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করলাম তখন বেগম খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন, চুল-দাড়ি বড় হলে তাদের জঙ্গি আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ তারা জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক এবং সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পৃষ্ঠপোষক। এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। সুতরাং বাংলাদেশে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকে তাহলে সেই সাম্প্রদায়িকতা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় থেকে শুরু করে অন্যান্য সংখ্যালঘুরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। এটি অতীতে প্রমাণিত। এখন তারা আরও বেশি আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে।
পশ্চিমা শক্তির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, যদি আপনাদের বিষয়ে কেউ নাক গলায়, সেটা কি সমীচীন হবে? আমি জানি আপনার মানবেন না। আমাদের ক্ষেত্রেও তা সমীচীন নয়, বলে আমি মনে করি। চীনের সঙ্গে আমাদের কোনো সীমান্ত নেই। এ অঞ্চলের একটা শক্তি বলতে পারেন। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় তারা কন্ট্রাক্ট পায়। এ রকম কন্ট্রাক্ট তারা ভারতেও পায়।
আগামীতে বিএনপির পরিণতি কী হবে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা দাবি করে তারা জনগণের দল। তবে বিএনপি দলটি ক্রমাগতভাবে নির্বাচন বর্জন করছে। একটি দল যদি ক্রমাগতভাবে এভাবে নির্বাচন বর্জন করে, তাহলে সেই দল মানুষ করবে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এভাবে তারা যদি নির্বাচন বর্জন করতে থাকে, তাহলে আমি মনে করি আগামী নির্বাচনে তারা হাড়ে হাড়ে টের পাবে।
মিয়ানমারের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের এখন ১৫ লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে আছে। বাংলাদেশেই তাদের দুই লাখ জনসংখ্যা বেড়েছে। সবমিলিয়ে আমার হিসাবে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সেই প্রেক্ষাপটে নিশ্চিতভাবে আমাদের ওপর চাপ হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিতেও চাপ এবং বৈদেশিক সাহায্য আগের মতো আসছে না। সেই সাহায্য ইউক্রেনে চলে যাচ্ছে। এই নিয়ে ভারতের সঙ্গে সবসময় আলোচনা চলছে। ভারতেরও সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের মণিপুরের অস্থিরতা তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সঙ্গে ভারতের এবং অন্যান্য দেশের আঞ্চলিক সহযোগিতা আছে। শুধু বাণিজ্য সহযোগিতা নয় নিরাপত্তা সহযোগিতা থেকে শুরু করে নানাবিধ সহযোগিতা আছে। আমরা মনে করি আমাদের অঞ্চল নিরাপদ রাখা এবং বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা এগুলো রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সেই দায়িত্বের কথা যখন আমরাও মনে করি, আমরা জানি ভারতও সেটা মনে করে। সেই আলোকে আমাদের দুই দেশের সহযোগিতা রয়েছে।
সম্প্রতি কলকাতা করপোরেশনের মেয়র ফিরাদ হাকিম বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যারা আসছেন তাদের রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। ডেঙ্গু নিয়ে এমন মন্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ে ভারতে আসার জন্য কী টেস্ট করতে হবে, সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
এ ছাড়া টাকা-রুপির বিনিময়, নাম না নিয়ে হিরো আলমের ঘটনায় পশ্চিমা দেশের কর্তৃত্ব, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সহ একাধিক বিষয়ে কলকাতা প্রেসক্লাবে হাছান মাহমুদের মুখোমুখি হন সাংবাদিকেরা।
এদিনের অনুষ্ঠানে সন্তোষ শর্মা, শ্যামল দত্ত, আশিকুর রহমান ছাড়া উপস্থিত ছিলেন, কলকাতা প্রেসক্লাব সভাপতি স্নেহাশিস সুর, সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিকসহ কলকাতাস্থ ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, ২৭ জুলাই, ২০২৩
ভিএস/আরএইচ