আগরতলা (ত্রিপুরা): বাংলাদেশের সিলেট জেলার পার্শ্ববর্তী হওয়ায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর জেলার কদমতলা বড়গোল মহেশপুর রানীবাড়ীসহ আশপাশ এলাকার মাটিতে মিশ্রিত উপাদান প্রায় এক রকম। তাই ত্রিপুরার এই এলাকাগুলোতে ভালো মানের আগের চাষ হয়।
রাজ্যের অর্থনীতিতে আগর চাষের গুরুত্ব অনুভব করে বর্তমান সরকার ‘ত্রিপুরা আগর উড পলিসি’ নামে একটি নীতি গ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে আগর চাষ এবং আগর উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও উৎসাহিত ও ত্বরান্বিত করার জন্য রাজ্য সরকার ‘ত্রিপুরা আগর বোর্ড’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এই বোর্ডের মাধ্যমে আগর চাষি এবং আগর উৎপাদকদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের তরফে উত্তর জেলায় একাধিক আগর চাষিকে ইতোমধ্যে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে তারা কারখানা স্থাপন করে আগর কাঠ থেকে মূল্যবান তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করতে পারছেন। ক্ষুদ্র চাষিরাও তাদের জমিতে চাষ করা আগর গাছ এখন এই সব কারখানা মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন।
কদমতলা এলাকার আগর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আনফর আলী লাইসেন্স নিয়ে একটি কারখানা গড়ে তুলেছেন। আগর উড পলিসি সম্পর্কে নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ আগর চাষিদের কাছে একটি বড় পাওনা হচ্ছে এই আগর উড পলিসি। যার জন্য চাষিদের দীর্ঘ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। এই নীতি গ্রহণ করার ফলে রাজ্যের চাষিরা কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই আগর চাষ এবং প্রক্রিয়াজাত করতে পারছেন। সেই সঙ্গে দেশে-বিদেশের আগর ব্যবসায়ীরা নিয়মিতভাবে রাজ্যে আসছে, যা কয়েক বছর আগে আশা করা যায়নি বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি ত্রিপুরার আগরের কথা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে সরকার একাধিক সামিটের আয়োজন করেছে।
তিনি আরও বলেন, তার কারখানায় আগর কাঠ থেকে তেল আহরণ ও চিপস তৈরি করা হচ্ছে। শ্রমিকেরা তার বাড়িতে বসে আগর গাছ থেকে ছোট ছোট ধারালো চাকু দিয়ে অপ্রয়োজনীয় কাঠগুলো কেটে ফেলে মূল্যবান আগর সংগ্রহ করছেন। বেশিরভাগ শ্রমিক এখান থেকে কার্ড সংগ্রহ করে নিজেদের বাড়িতে বসেই এই কাজগুলো করেন এবং কাজ শেষে নিজেদের সুবিধামতো আগর এনে জমা করে আবার নতুন আগর কাঠ নিয়ে যান।
শুধুমাত্র আগরের তেল প্রক্রিয়াকরণ করলেও আগামী দিনে উঁচুমানে আগরবাতিসহ অন্য সামগ্রী তৈরির ইউনিট স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। কারখানায় উৎপাদিত এক কেজি আগর তেল সর্বাধিক ৭ লাখ রুপি দামে বিক্রি হয়। তিনি একটি বড় বোতল ঘর থেকে বের করে এনে দেখিয়ে বলেন, এরমধ্যে দুই কেজি আগর তেল রয়েছে। যার মূল্য ১৪ লাখ রুপি।
আগর ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আনফর আলী বলেন, আগরের গাছ থেকে শুরু করে পাতা সব কিছুই মহা মূল্যবান, এগুলি দিয়ে কোনো না কোনো সামগ্রী তৈরি হয়। আগর কাঠ থেকে তেল বের করার পর যে পরিত্যক্ত অংশ থাকে তা দিয়ে সুগন্ধি আগরবাতি, সাবান, প্রসাধনী ক্রিম পাউডার তৈরি করা যায়। এছাড়াও আগর গাছের যে অংশ পরিত্যক্ত সেই অংশ দিয়ে কাগজ, প্লাইউড ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব। এমন কি সাগরের তেল বের করার সময় যে পানি ব্যবহার করা হয় এগুলো আয়ুর্বেদিক ওষুধ শিল্পের ব্যবহার হয়ে থাকে।
আগর গাছকে ভিত্তি করে যখন অন্যান্য শিল্প স্থাপিত হবে তখন আরও বেশি লাভবান হবেন চাষিরা। সেইসঙ্গে বিদেশে আগের রপ্তানির নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনার প্রয়োজন রয়েছে। আগামী দিনের সরকার এই নীতিমালায় সহজ পরিবর্তন আনবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তার কারখানা ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় স্টিলের হাঁড়ির মধ্যে আগরের চিপস গুলো সেদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যেগুলো থেকে বের হবে মূল্যবান তেল। তাছাড়াও আলাদা আলাদা পাত্রে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে চিপস।
বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যে ৫৫ লাখের বেশি আগর গাছ রয়েছে বলে রাজ্য সরকারের বন দপ্তরের প্রাথমিক ধারণা। এর প্রায় ৯৫ শতাংশই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন এবং বেশিরভাগ বাগান কদমতলা এলাকায়। তবে রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও সাধারণ মানুষ নতুন করে আগর চাষ শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রাজ্যে আগর চাষের মাধ্যমে দুই হাজার কোটি রুপির ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৩
এসসিএন/এসএম