কলকাতা: ভারতে মেট্রোরেলের ইতিহাসে নতুন নজির গড়ল পশ্চিমবঙ্গ। দেশটিতে এই প্রথম নদীপথ অর্থাৎ গঙ্গাবক্ষ ভেদ করে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়।
মধ্য কলকাতার এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত গঙ্গাবঙ্গে সবুজ পতাকা দেখিয়ে মেট্রোর উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদ্বোধনের পাশাপাশি শহরের ক্ষুদে শিক্ষার্থী নিয়ে মেট্রোয় সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। মেট্রো সফরের পাশাপাশি গঙ্গার মেট্রো স্টেশন ঘুরে দেখেন তিনি।
উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কলকাতা শহরের মেট্রো দেখেই ভারতের একটা প্রজন্ম বড় হয়েছে। ছোট বয়সে আমিও যখন কলকাতায় আসতাম, তখন আমারও শখ হতো মেট্রোরেলে চড়ার। এই কলকাতাকে দেখেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় মেট্রো হয়েছে।
বিজেপি সরকারের প্রশংসা করে মোদি বলেন, গত ৪০ বছরে মেট্রো রেলের ২৮ কিলোমিটার পথ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিজেপির আমলে ১০ বছরের আরও ৩১ কিলোমিটার রেলপথ বিস্তার করেছে। বাংলা এবং দেশের বিকাশে বিজেপি সরকার কাজ করে চলেছে।
বুধবার (৬ মার্চ) কলকাতা মেট্রোর পাশাপাশি একই সঙ্গে পুনে, কোচি ও আগ্রা মেট্রো প্রকল্প এবং নমো ভারতের সঙ্গে জড়িত একাধিক ভারতীয় রেল প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের মধ্যে প্রথম কলকাতায় মেট্রো চলাচল শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর। ৪০ বছর পর আবার নতুন পালক জুড়ল কলকাতার মুকুটে। ঠিক কতটা সময় মেট্রো গঙ্গার নিচ দিয়ে যাবে, কীভাবে যাত্রীরা বুঝবেন মেট্রো গঙ্গা পার হচ্ছে, তা বোঝার একটি উপায় রেখেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
৫২০ মিটার দীর্ঘ গঙ্গাপথ তা পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৪৬ সেকেন্ড। মেট্রো যে মুহূর্তে গঙ্গার নিচে প্রবেশ করবে, তখনই একটি নীল আলো জ্বলে উঠবে রেলের ভেতর। নীল এলইডি আলোই বোঝাবে যে, মেট্রো গঙ্গার নিচ দিয়ে ছুটছে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের হাওড়া টু এসপ্ল্যানেডের অংশে ৫২০ মিটার রেললাইন গিয়েছে গঙ্গার তল দিয়ে। নদীর উপরের পানিস্তর থেকে ৩৩ মিটার নিচে তৈরি হয়েছে মেট্রোর জোড়া সুড়ঙ্গ। নদীখাত থেকে আরও ১৩ মিটার গভীরে পলিমাটির ভিতর দিয়ে গিয়েছে টানেল। তার উপরেই রেল লাইন বসানো হয়েছে। অর্থাৎ, মেট্রো যাত্রীদের মাথার উপর দিয়ে বয়ে যাবে গঙ্গা। পানির নিচে ফাইভ জি গতির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগও মিলবে।
টিকিট মূল্যও রাখা হয়েছে সাধ্যের মধ্যে। এমনিতে কলকাতায় মেট্রো ভাড়া অনেক কম। ভাবা হয়েছিল গঙ্গাবক্ষে মেট্রো চলাচল শুরু হলে বাড়বে টিকিটিরে মূল্য। কিন্তু তা হয়নি। হাওড়া ময়দান থেকে ডাউনের শেষ অর্থাৎ কবি সুভাষ (নিউ গড়িয়া) পর্যন্ত ভাড়া ৩০ রুপি।
অন্যদিকে হাওড়া ময়দান থেকে আপ লাইনে দক্ষিণেশ্বর, বরানগর ও নোয়াপাড়া যেতে ভাড়া যেতে ভাড়া পড়ছে সেই ৩০ রুপি। তবে হাওড়ার যাত্রীদের গড়িয়া বা দমদম যেতে হলে এসপ্ল্যানেড থেকে ট্রেন পরিবর্তন করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভাড়ার পরিবর্তন হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, ৬ মার্চ ২০২৪
ভিএস/আরএইচ