ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

নতুন বছরকে বরণ করে নিলো কলকাতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৪
নতুন বছরকে বরণ করে নিলো কলকাতা

কলকাতা: আগামী ১৯ এপ্রিল ভারতে প্রথম ধাপের লোকসভা নির্বাচন হতে চলেছে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে। আর তারই মধ্যে পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বরণ করে নিলো কলকাতা।

রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ। ফলে বাংলা আজ মেতেছে বাঙালির উৎসবে। আর তাই জাতি বর্ণ, ধর্ম, নির্বিশেষে বাংলার মুখে আজ একটি বাণী, আমি বাঙালি। বাংলা আমার মাতৃভাষা।

নতুন বছরকে বরণ করে নিলো কলকাতাও। দিনটিতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। আনন্দ যাত্রায় পা মেলান বাংলার সব ধর্মের মানুষ। স্বতঃস্ফূর্তভাবে শামিল হন নবীন থেকে প্রবীণ। শোভাযাত্রায় পা মেলায় শহরের শিক্ষার্থীরা। নাচে গানে ছন্দে, বিভেদ ভুলে সম্প্রীতি বার্তা দিলেন সমাজের সব স্তরের মানুষ।

দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলী বাগান থেকে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। শহরের নিরিখে সবচেয়ে বড় এবং জাঁকালো শোভাযাত্রায় পা মেলান বাংলাদেশের উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউর রহমান, ভাষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকার, সঙ্গীতশিল্পী কাজী কামাল নাসির, নাট্যব্যক্তিত্ব সঞ্চীব সরকারসহ পা মেলান ওই অঞ্চলের মসজিদের ইমাম এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষ।

কলকাতার এ অঞ্চলের শোভাযাত্রায় প্রতিবছর একটি থিম বা ভাবনার ওপর ভিত্তি করে সেজে ওঠে। এবারে ভারতে লোকসভা ভোট। তাই এবারে তাদের ভাবনায় তুলে ধরা হয়েছে ‘বিভেদ ভুলে সম্প্রীতি’। ছিল ১০ ফুট উচ্চতায় বিশালাকায় মাটির টেপা পুতুল, বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যে সৃষ্টি বোঁঙা হাতি, মৎস্যকন্যার আদলে নৌকা ও আগ্রাসী বাঘ। ছিল মুর্শিদাবাদের লাঠি খেলা, কাগজের মুখোশ, টুপিসহ নানা সরঞ্জাম। ঢাকের বাদ্যের তালে মেতে ওঠেন সকলে।
কলকাতায় এ ধরনের মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখে আপ্লুত বদিউর রহমান।  

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাংলাদেশে বহুকাল ধরে এই ধরনের আয়োজন হয়ে থাকে। কলকাতায় বেশি পুরোনো নয়, এর আগে ৮০’র দশকে সৈয়দ হাসান, লায়লা হাসান এবং আমি কলকাতায় এসেছিলাম। তখন কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে থেকে একটা মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হতে দেখেছি। অল্প লোকজনকে নিয়ে বের হতো এই শোভাযাত্রা। সেটাই প্রথম কলকাতায় দেখেছিলাম। আমাদের কাছে সেটাই ছিল সিম্বলিক। এরপর যাদবপুর এটা ধারন করেছে এবং এই শোভাযাত্রা একটা একাডেমিক রূপ পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।

অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, বাঙালিকে সম্প্রীতি ধরে রাখতে হলে আরও সচেতন হতে হবে। তবেই অপশক্তি ঠেকানো যাবে। তবে তার জন্য বাঙালি সংস্কৃতির আরও প্রসার ঘটাতে হবে। শোভাযাত্রা শেষে একে অপরকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানান।

অপরদিকে ‘জাতীয় নববর্ষ উৎসব’ নামে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ভাষা ও চেতনা সমিতি কলকাতার বুকে বর্ষবরণ উদযাপন করে আসছে। তারাও ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের পাশ থেকে বের করে এক রঙিন শোভাযাত্রা। শেষ হয় রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন রানু ছায়ামঞ্চে। এরপর দিনভর বাংলা গান, নাটক, কবিতা আর সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে উদযাপন করছে পহেলা বৈশাখ। আর সেই উপলক্ষে খাওয়া-দাওয়াতেও রেখেছে আদি বাঙালিয়ানা। রয়েছে পান্তা ভাত, শুঁটকি, ভর্তা, আম পোড়া শরবত, ভাত, ডাল, আলু পোস্ত, মাছ আরও কত কি!

ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক ইমানুল হক বলেন, পূর্ববঙ্গে উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে লড়ে ছিল ওদেশের মানুষ। আমাদের এখানে এখনো সেই সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। আর তাই কলকাতা শহরে বাংলা হরফ দেখা দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। বাংলায় নাম ফলক উঠে যাচ্ছে। বহু জায়গায় হিন্দিতে কথা বলতে হচ্ছে এবং বাংলায় কথা বললে অনেক জায়গায় বাংলাদেশি শুনতে হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের ২৬ বছর ধরে লড়াই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মতো বড় অনুষ্ঠান আমাদের হয় না। কিন্তু আমরা প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে টানা ১২ ঘণ্টা অনুষ্ঠান করে থাকি।  

২০২৪ সাল ভারতের লোকসভা ভোট। তবে বাঙালির কাছে এটা ১৪৩১ বঙ্গাব্দেরও ভোটও। কারণ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠজুড়েই চলবে ভোটপর্ব। শুরুতেই রাজ্যের উত্তরবঙ্গের তিন আসন কোচবিহার, আলীপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে ভোটগ্রহণ আগামী ১৯ এপ্রিল। তার ওপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলা বছরের প্রথম দিনটিতে ‘রাজ্য দিবস’ হিসেবে ঠিক করেছে। এমনকি ঠিক হয়েছে, ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের মতো রাজ্য সঙ্গীত। সেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি রাজ্য সঙ্গীতের মর্য়াদা পেয়েছে। গানটিতে জাতীয় সঙ্গীতের মতোই সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে।

সেসব মাথায় রেখেই রোববার বাংলার অধিকাংশ আসনে প্রচারের রূপরেখা তৈরি করেছে শাসকদল। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিতে বড় মিছিল করতে চলেছে তৃণমূল। পাশপাশি দিনটিতে জনসংযোগের জন্য বেছে নিয়েছে রাজ্যের শাসক, বিজেপি ও বামেরা। রোববার সরকারি ছুটির দিন। এদিন সাতসকালেই বাজার হাটে ঘুরে জনসংযোগ করেন তৃণমূল প্রার্থী ও অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ।

বামমনস্ক নাট্যব্যক্তিত্ব সঞ্জীব সরকার বলেন, সকলে তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে, এই কথাটি পৃথিবীতে সত্যি করে তোলার চেষ্টা করে একমাত্র বাঙালি জাতি। কিন্তু একটা দুর্বিষহ সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। যে সময়টা আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা করছে বাইরের কিছু শক্তি। আমরা সেই জায়গায় সজাগ এবং সচেতন থাকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা এক থাকবো, খণ্ডিত হবো না। বাংলায় বছরের প্রথমদিন তারই শপথ নেওয়ার দিন। ভোটের সময় সবাই বলব আপনার যাকে পছন্দ তাকেই ভোট দিন। কিন্তু পছন্দটা একটু ভাবুন। কাকে দেবেন এই পছন্দটা ভাবা দরকার। কারণ একটা অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৪
ভিএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।