ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বিয়ের গেরোয় মোদী

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৪
বিয়ের গেরোয় মোদী ছবি: প্রতীকী

নরেন্দ্র মোদী সোজা রাস্তায় হাঁটছেন না। ছুটছেন আঁকাবাঁকা নদীর মতো।

সেভাবেই হোক সমুদ্রে ঝাঁপাতে হবে। তাতেই কেল্লাফতে। দিল্লীর তখতে নিশ্চিন্ত অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন যাঁর, তাঁর ইমেজ পরিষ্কার রাখাটা খুবই দরকার। সেটাই ভাবছেন না; ভাবছেন, নদী বেগবান হলে সব জঞ্জাল সাফ। স্রোতের টানে আবর্জনা নস্যি। ২০০২-এর গুজরাট দাঙ্গার দায় উড়িয়ে, ঘুরিয়েছেন প্রচারের মুখ। উন্নয়নের নামাবলী বলে উড়ে বেড়াচ্ছেন হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা। চেন্নাইয়ের মেগাস্টার রজনীকান্তর আপ্যায়নে অভিভূত। দিন গুনছেন দক্ষিণা বাতাসের প্রতীক্ষায়। দক্ষিণ ভারত বিজেপিকে কোন দিনই সাদরে গ্রহণ করেনি। তারকার আলোয় উজ্জ্বল হতে চাইছেন মোদী। যদি বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে। ছেঁড়াছেঁড়ি চলছে তো বিজেপি দলের মধ্যেই। মোদীকে বিপদ মনে করছেন অনেক নেতাই। শঙ্কা, মোদীর কড়া আঁচে ভোটের ভাত পুঁড়ে না যায়।  

 

মোদী দমে গিয়েও নিজেকে নিজে তুলে ধরতে চ‍াইছেন।  বলছেন, সামান্য চা-ওয়ালা থেকে দাবার চালে আজ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। একার সংগ্রামেই তাঁর আকাশ ছোঁয়ার শপথ। সম্পূর্ণ মিথ্যে তথ্য। তিনি কোনদিনই কেটলি হাতে রেলযাত্রীদের কাছে চা বিক্রি করেননি। স্টেশনে তাঁর চাচার চায়ের দোকান ছিল। সেখানে ফাস্টফুডও বিক্রি হতো। চাচা, দোকানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মোদীকে।   সেখানে মোদীর কৃতিত্ব কী? এটা নিশ্চিত বণিক বৃত্তিকে অযথা গৌরবান্বিত করার চেষ্টা। দোকানটা তাঁর অর্থনৈতিক ভাগ্য শুধু নয়, রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দরজাও খুলে দিয়েছিল। সেখানেই আলাপ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস-এর নেতাদের সঙ্গে। আরএসএস-এ যোগ দিয়ে তিনি রাজনীতির সিঁড়ি ভেঙে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হোন। তিনদফা মূখ্যমন্ত্রিত্ব ভোগ করে এবার দিল্লী জয়ের স্বপ্ন। তিনি যে গাড়িতে চলেছেন তার চাকা আরএসএস।  


Gujarat_Riotsশীর্ষ নেতার মাথার চুল থেকে পায়ের নখের খবর জানার অধিকার মানুষের আছে। সেখানে তথ্যে ফাঁকি অবিবেচনার কাজ। নরেন্দ্র মোদী যে বিবাহিত এতোদিন সেটা বেমালুম গোপন করেছেন। এতোদিন বিষয়টি গোপন রাখলেন কেন? বিয়ে করাটা কি তাঁর চোখে অপরাধ। নাকি নিজেকে সন্নাসী প্রমাণ করতেই এই গোপনীয়তা।  

 

ঊনিশ বছর বয়সে মোদী বিয়ে করেন যশোদা বেনকে। বিয়ের পক্ষে এখন এটা আন্ডারএজ। একুশের কমে বিয়ে করাটা আইন বিরুদ্ধ। মোদীর বিয়ের অনেক পরে এ আইন হয়েছে। তাই মোদীর বিয়েটা আইনে আটকায়নি। আটকেছে মোদীর মনে। ২০০১, ২০০২, ২০০৭, ২০১২ বিধানসভা প্রার্থীপদ দাখিলের সময় বিয়ের ব্যাপারটা বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন। ফর্মে বিয়ের জায়গাটা ফাঁকা রেখেছিলেন। বিয়ের দু’সপ্তাহ পরেই স্ত্রীকে ত্যাগ করেন মোদী। বিচ্ছেদের কারণটা তাঁর ব্যক্তিগত। সে নিয়ে প্রশ্ন তোলা অশোভন। কিন্তু বিয়েটা তো সামাজিক বিষয়। সেটা এড়িয়ে যাওয়ার অর্থ কী? আশ্চর্যের বিষয়, এতোদিন পর বিয়ের ব্যাপারটা মেনে নিয়েছেন। সংসদীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় জানিয়েছেন তাঁর বিয়ের কথা। তিনি নিশ্চয় জানতেন, তথ্যটা আর গোপন রাখা সম্ভব নয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে এ নিয়ে আরও গোলমাল বাঁধত। বিজেপির প্রথম প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী অকৃতদার। পদ থেকে সরে যাওয়ার পরও তাঁর ভাবমূতি এতোটুকু টলেনি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিষয়ে সবসময় তিনি সত্যে অবিচল থাকার চেষ্টা করেছেন। ২০০২ -এ গুজরাট দাঙ্গায় মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন। বিজেপিকে যারা পছন্দ করেন না তারাও বাজপেয়ীকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছিলেন। জনপ্রিয়তায় বলিউড তারকাদের ছাপিয়েছিলেন।  

 

মোদী ভাদোদারাতে নির্বাচনপ্রার্থী। সেখানকার ধর্মভীরু, রক্ষণশীল সমাজ ইস্যুটাকে ভাল চোখে দেখছে না। মোদীর প্রতিদ্বন্ধী আম আদমী পার্টির সভাপতি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পালে হাওয়া। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ধারণা, তিনি মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হলে মোদীর বিপদ বাড়ত। কংগ্রেসের জয়ের রাস্তা খুলত।

 

ফান্দে পড়িয়া প্রিয়াঙ্কা কান্দে

 

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।