ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বাংলাদেশেও একই কালি

অমিত বসু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৪
বাংলাদেশেও একই কালি

বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়ার ভোটের কালি এক। ভোট দিলে আঙুলে কালো ছোপ।

সাবানে হাজার ধুলেও উঠবে না। কম করে তিন সপ্তাহ চামড়া কামড়ে থাকবে। ব্ল্যাক দাগটা দেগে দেওয়ার উদ্দেশ্য একটাই, ভোটার যাতে দ্বিতীয়বার পোলিং বুথে গিয়ে ভোট দিতে না পারে। দাগ না থাকলেও একাধিকবার ভোট দেওয়া কঠিন। পরিচয়পত্র ছাড়া এখন আর ভোটিংয়ের সুযোগ নেই। আগে ছিল। একজন অন্যজনের ভোট দিতে পারত নাম ভাঙিয়ে। রাজনৈতিক দলের এজেন্টরা খবর রাখতে, কোন বাড়িতে কে ভোট দেবে, আর কে দেবে না। ফটোসমেত ভোটার আইডি হওয়ার পর সেটা আজ হওয়ার নয়। তাই বলে, ফলস ভোটিং বন্ধ হয়নি। রাস্তা বদলেছে মাত্র। যে দলের যেখানে প্রভাব সেখানে বুথ দখল পরিচিত ঘটনা। প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের হটিয়ে পটাপট ইভিএমের বোতাম টেপা। শাসক দলের পক্ষে কাজটা সহজ। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে। যদিও নির্বাচনের সময় পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে যায়, তবুও সরকারী কর্মীরা, সরকারকে অবজ্ঞা করতে পারে না। তারা জানে, ভোটের পর এই সরকারের অধীনে কাজ করতে হবে। তাদের চটিয়ে সততার নজির গড়তে গেলে ভবিষ্যতে বিপদ অনিবার্য। এমন জায়গায় পোস্টিং দেবে যেখানে ভূতেও থাকতে পারে না।

এসব অনাচার সত্ত্বেও যারা ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করেন তাঁদের কাছে আঙুলে কালো দাগটা কিন্তু বিউটি স্পটের মতো। গর্বের নজিরও বটে। আঙুল তুলে বলতে পারেন, এই যে আমি ভোট দিয়ে জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছি। সেলিব্রেটিরা ফেসবুকে আঙুলের ছবিটা তুলে ধরেন। সেটা দেখে ভোটে উদাসীন লোকেরাও উৎসাহিত হয়ে পোলিং বুথে ভোট দিতে ছুটে যায়।

১৯৭৩-এ বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে আঙুলে কালি দেওয়া শুরু। ভারতের শুরুতে এটা ছিল না। ১৯৫২-তে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের আঙুলে ব্ল্যাক স্পট দেওয়া হয়নি। ১৯৫৭-তে দ্বিতীয়বার নির্বাচনেও আঙুলে কালো দাগ দেওয়া চালু হয়নি। ১৯৬২-র নির্বাচনে এর প্রথম প্রচলন।

এ কালি কিন্তু বাজারে চাইলেই পাওয়া যায় না। কর্ণাটকের ফ্যাক্টরি থেকে সোজা নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে যায়। মাইনোর পেন্টস অ্যান্ড ভার্নিশ লিমিটেড এর প্রস্তুতকারক। আরও দু’এক ছোট কারখানাতেও হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ভোটের কালি যায় ভারত থেকে।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, নেপাল, মালদ্বীপ, পাপুয়া নিউগিনি, ফিজি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ডেনমার্ক, কানাডাতেও ভোটের কালি যায় কর্ণাটক থেকে। ইউরোপের অনেক দেশও নিচ্ছে। এবার ভারতে ভোটের জন্য লেগেছে ২২ লাখ শিশি। এক একটি শিশিতে থাকে দশ মিলিলিটার। এক শিশির দাম বাংলা টাকায় প্রায় দু’শো। এবার ভারতের নির্বাচন কমিশন ভোটের কালি কিনেছে ৩২ কোটি টাকায়। কালি ফ্যাক্টরির পোয়াবারো। যত নির্বাচন তত লাভ। তারা কী মনে মনে চায়, পাঁচ বছর অন্তর নির্বাচন না হয়ে বারে বারে অন্তর্বতী নির্বাচন হোক। ভোটে কে জিতল না জিতল তাতে তাদের কিছু এসে যায় না। তবে বিক্রিতে যত প্রফিট হোক, সেটা কারোও পকেটে ঢুকবে না, যাবে কর্ণাটক সরকারের ঘরে। কারণ, কারখানাটা কারোও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, সরকারের।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।