ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভারতের মসনদে জোটের ঘূর্ণিপাক

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৬ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৪
ভারতের মসনদে জোটের ঘূর্ণিপাক রাহুল গান্ধী, নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়, জয়ললিতা, মায়াবতী, লালু প্রসাদ যাদব, মোলায়েম সিং যাদব

Jasmin_papriদিল্লী থেকে: জোট সংস্কৃতির ঘূর্ণিপাকে এখন ভারতের সিংহাসন। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের এই দেশে গত আড়াই দশক ধরে কোয়ালিশন কালচারই যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলমান ষোলতম লোকসভা নির্বাচনে কয়েকটি দলের সমন্বয়ে আরেক জোট সরকার আসতে পারে এবারও।

সে সরকারের নেতৃত্বে বিজেপি থাকবে, নাকি কংগ্রেস? নাকি তৃতীয় কোন ফ্রন্ট এবার শাসন করবে ভারত? দেশটির রাজনীতি বোদ্ধারাও এখন এমন প্রশ্নের কুলকিনারা করতে পারছেন না।
 
অনেক হিসেব কষে তিনটি পথ দেখাচ্ছেন তারা। বলছেন, মিডিয়ার মোদী হাওয়া ঠিক মত কাজ করলে ভারতীয় জনতা পার্টিই (বিজেপি) সরকার গঠন করবে। সঙ্গে এনডিএ জোটে থাকা ২২টি দলসহ আরো আঞ্চলিক দলকে নিতে হবে। এর বিকল্প হতে পারে টানা তৃতীয়বারের মত কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার গঠন। তবে নানা সমীকরণ বলছে, এটি অনেক দূরের পথ। তাই জোরদার হয়ে উঠেছে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের আলাপ।

এই তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে বড় হয়ে উঠবে অন্যদলগুলোর মোদী বিরোধী মনোভাব। সেক্ষেত্রে মোদীকে ঠেকাতে কংগ্রেস ক্ষমতার মায়া ত্যাগ করে এই তৃতীয় ফ্রন্টকে সমর্থন দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

তবে এসব ঘটতে পারে কোনো দল সরকার গঠনের ম্যাজিক সংখ্যা ২৭২ আসন না পেলে। কারণ, কোন দল এ সংখ্যক আসন পেলে চোখ বন্ধ করে বসে যাবে দিল্লির মসনদে।
 
কিন্তু রাজনীতিকরা বলছেন, এবারের লোকসভায় সরকার গঠনের জন্য কোন দল ম্যাজিক সংখ্যা ২৭২ আসনের ধারেকাছে যাচ্ছেই না। তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে জোটের হিসেব।

সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সূত্র বলছে, কংগ্রেসের ধারণা, বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট ২১০ থেকে ২৩০ আসনের গন্ডি পেরুতে পারবে না। আর তখনই এনডিএ জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে কংগ্রেস৷ অঙ্ক মেলানোটা বেশ কঠিন হলেও চেষ্টার কমতি করবে না ভারতের অন্যতম প্রাচীন এই দলটি। মোদীর নেতৃত্বে সরকারে যেতে আঞ্চলিক দলগুলো রাজি হবে না ধরে নিয়ে, এরইমধ্যে তৃতীয় শিবিরের দলগুলির সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টা করছে তারা।

এদিকে কংগ্রেসের ঝুলিতে ১৩০ থেকে ১৪০টি আসন না থাকলে অঙ্ক আরো বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। সেসময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন ভারতের রাজনীতি জগতের তিন রানী। দিদি খ্যাত পশ্চিবঙ্গের মমতা ব্যানার্জি, বহেনজি খ্যাত উত্তর প্রদেশের মায়াবতী কিংবা আম্মাখ্যাত দক্ষিণের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা জয়ারাম। এমনকি একাধিক বামদলও জুটতে পারে এ জোটে। ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়তে প্রয়োজনে চিরশত্রু মমতার দল তৃণমূলের সঙ্গেও যেতে রাজি আছে তারা।

দিল্লির রাজনৈতিক সূত্র বলছে, কংগ্রেস, উত্তর প্রদেশের মোলায়েম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি, বিহারের লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং বামপন্থিদলগুলো কোনভাবেই বিজেপির আশ্রয়ে যাবে না। তবে মমতা, মায়াবতী বা জয়ললিতাদের কাছে নিজ রাজ্যের স্বার্থই বড়। সে কারণে তারা জোটে না গিয়েও বাইরে থেকে বিজেপিকেও সমর্থন দিতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতার রাজ্য পশ্চিবঙ্গ ঋণে জর্জরিত। কংগ্রেস সরকারের কাছে ঋণের সুদ স্থগিত করার সুবিধা চেয়েও পায়নি। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে মমতাকে আর্থিক সুবিধা প্যাকেজের টোপ দিয়েই রেখেছেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং। এক সময়ের অটল বিহারি বাজপেয়ীর রেলমন্ত্রী থাকা মমতা সেই টোপ নিতেও পারেন। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে মোলায়েম সিংয়ের দলকে হারাতে মায়াবতীকে বিজেপি সঙ্গ দিলে তিনিও সঙ্গী হবেন এ দলটির। একইভাবে নিজ রাজ্য এবং দলের স্বার্থে বিজেপির পক্ষে ঘুরে যেতে পারেন দক্ষিণের নেত্রী জয়ললিতা জয়ারাম।

বিজেপির সরকার গড়তে আঞ্চলিক দলগুলোর সমর্থন পেতে মোদীই আবার বাধা হয়ে আসতে পারেন বলে মনে করেন অনেকে। সমর্থনের শর্ত হিসেবে তারা নেতৃত্বে মোদীর পরিবর্তে অন্য কাউকে চাইতে পারেন। তখন কংগ্রেসের ভেতরে থাকা মোদী বিরোধীরাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠবেন। মোদীকে সরে যেতে বাধ্য করতে পারেন তারা। এই শঙ্কা তখনই সত্যি হবে যখন মোদী তার কাঙ্খিত সংখ্যক আসন পাবেন না।
 
এ বিষয়ে দিল্লির প্রবীণ সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বাংলানিউজকে বলেন, ভারত বড়ই রাজনৈতিক বৈচিত্রের দেশ। কখন কি হয় বলা খুব কঠিন। তবে আঞ্চলিক দলগুলোই চমক দেখাতে পারে।
 
দিল্লির দ্যা টেলিগ্রাফ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সম্পাদক জয়ন্ত রায় চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ভারতে সরকার বদলাবে এটা সবাই জানে। জোট সরকারই আসবে ধরেই নিতে হবে। সব হিসেব তেমনই বলছে। এখন দেখার বিষয় কোন দলের নেতৃত্বে আসছে সেই জোট।

তিনি বলেন, ভারতের জনগণের ভোটেই বারবার জোট সরকার গঠন হচ্ছে। অর্থাৎ জনগণ চাইছে দলগুলো যৌথভাবে দেশ পরিচালনা করুক।

বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতে কোয়ালিশন সরকারের জন্ম সেই ১৯৮৯ সাল থেকে। আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তারা হয়ে ওঠে সরকার গঠনের অন্যতম হাতিয়ার।

১৯৮৯ সালে জাতীয় মোর্চা সরকার সঠিত হয় জনতা দল, আসাম গণপরিষদ, ডিএমকে, তেলেগু দেশম পার্টি ও ভারতীয় সমাজবাদী কংগ্রেস দল নিয়ে। ১৯৯৬ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে গঠন হয় ১৩ দিনের সরকার। কিন্তু অন্য কোন শরিক দলের সমর্থন না থাকায় বাজপেয়ীর সে সরকারের বদলে গঠিত হয় ১৩ দলের সংযুক্ত মোর্চার সরকার। কংগ্রেসের সমর্থনে সে সরকার টিকে থাকে দু’বছর। এরপর ক্ষমতায় আসে বিজেপির নেতৃত্বে ২২ দলের এনডিএ জোট। তারপরই ২০০৪ সালে ২৪ দলের নেতৃত্ব দিয়ে ইউপিএ সরকার গঠন করে কংগ্রেস। ২০০৯ সালে আসে একই সরকার। এবারের নির্বাচনী হিসাব সেদিকেই যাচ্ছে কিনা দেখার অপেক্ষায় ভারতের ৮০ কোটি ভোটার।

 

** ফল ঘোষণার আগেই জয়-পরাজয়ের আভাস

 

বাংলাদেশ সময়:  ১০৪৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৪              

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।