ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বিজেপি অফিস গমগম, সংবাদকর্মীতে জেগে আছে কংগ্রেস অফিস

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৪
বিজেপি অফিস গমগম, সংবাদকর্মীতে জেগে আছে কংগ্রেস অফিস

নয়াদিল্লি থেকে: ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)র অফিসে এখন বৈঠক আর বৈঠক চলছে। বুধবার দুই দফা ঘুরে দেখা গেলো সবাই বৈঠকেই ব্যস্ত।

কথা বলার ফুসরত নেই। সংবাদকর্মীরা গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে এক-আধটু কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন নীতিনির্ধারণী নেতাদের সঙ্গে। ছিটে ফোটা যেটুক কথা হলো তাতে জানা গেলো দলটির নেতাদের এখন ব্যস্ততা একটি বিষয়কে ঘিরেই। তা হচ্ছে- কোনে পথে সরকার গঠন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের দেশটির ১৬তম জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ। ১৬ মে প্রকাশিত হবে ভোটের ফল। তবে ফলের আগেই যেনো ফল জেনে গেছে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। আর সে কারণেই তাদের সরকার গঠনের আলোচনা। মধ্যমসারির একজন নেতা বলেই দিলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও যেকোন মূল্যে সরকার গঠনে জোট বাড়াবে বিজেপি। এজন্যও নাকি চলছে দেনদরবার।

অন্যদিকে পরাজয় আঁচ করতে পেরে খানকিটা চুপসে আছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস। মিডিয়ার বুথফেরত জরীপে নিজেদের হারের আভাসকে আমলে না দিলেও সরকার গঠনের বিষয়ে তৎপরতা নেই তাদের। মুলত: ফলাফলের জন্যই অপেক্ষা করবেন তারা। বুধবার কংগ্রেসের পার্টি অফিসে গিয়ে খুব একটা প্রাণের ছোঁয়া পাওয়া গেলো না।

তবে ভেতরে ভেতরে এখানেও চলছে অন্য কিছু কাজ। এখনো শেষ আশা ছাড়েনি সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন দলটি। আশে পাশে যাদের পাওয়া গেলো তাদের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে বুঝা গেলো, চূড়ান্ত ফলাফলে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেই তৎপর হয়ে উঠবে কংগ্রেস। চেষ্টা চালাবে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের। আর সেটিও সম্ভব না হলে অন্তত নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে যাতে আঞ্চলিক দলগুলো সরকারে না যায় সে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে তারা।  

এ বিষয়গুলো যে মোদীর দল বুঝতে পারছে না তা কিন্তু নয়। তাদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পেলে আঞ্চলিকদলগুলো যদি মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ জোটে না ভীড়তে চায় সে জন্য বিকল্প নেতৃত্বের চেষ্টা চালাবে দলটি।

বিজেপি অফিসে যে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে তার আলোচনার বিষয়বস্তুতে এই প্রসঙ্গটিও রয়েছে বলেই জানালেন একাধিক নেতা।

বিজেপি অফিস নেতা-কর্মীতে গমগম। সবার চোখে মুখেই যেন খুশি ভর করেছে। বৈঠক ছাড়াও বিভিন্ন কক্ষে কক্ষেও জমে আছে গল্প-আড্ডার আসর।

অন্যদিকে কংগ্রেস অফিসে তার উল্টো চেহারা। মনে হলো গণমাধ্যম কর্মীরাই জাগিয়ে রেখেছে কংগ্রেস কার্যালয়। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন গনমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে আলাপ জমে। তারা বাংলানিউজকে জানান, নির্বাচন চলাকালে বেশ জমজমাট ছিল এই কার‌্যালয়। নিয়মিত ব্রিফিংও করেছেন দলের মুখপাত্ররা। কিন্তু এক অজানা কারণে অনেক নেতাই কার্যালয়মুখী নন।

এটা তো গেল কার‌্যালয়ের চিত্র। তবে কোনও দলের শীর্ষ নেতারাই কার্যালয়ের বাইরে বৈঠকে ব্যস্ত বলে জানা গেলো।

বিজেপির মধ্যম সারির একাধিক নেতা জানালেন, মন্ত্রীসভা কেমন হবে, কাকে কোন মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে, মন্ত্রীসভায় কতজন তরুণ নেতাকে ডাকা হবে সেসব বিষয়ে আলোচনা করছে বিজেপি এবং তার শরীকরা। তারাই জানালেন বুধবার গান্ধিভবনে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিজেপির প্রধান প্রধান নেতা রাজনাথ সিং, অরুন জেটলি এবং নিতিন গাটকর।

তাদের মতে, নির্বাচনের পরে মিডিয়ার বুথ ফেরত ভোটার জরিপের ফলকে গুরুত্ব দিয়েছে বিজেপি। এতে আস্থা বেড়েছে জয়ের বিষয়ে। তবে সংখ্যা গরিষ্ঠতার ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই গেছে।

বিজেপি নেতা বি কে সিংকে হঠাৎই পাওয়া গেলো কার্যালেয়ের সামনে। ছুটে গিয়ে ‍আটকে ফেললাম গাড়িতে ওঠার মুখে। বেশ আস্থার সঙ্গেই বললেন, “আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছি বিষয়টি নিশ্চিত। ১৬ তারিখ শুধু আসন সংখ্যা জানা যাবে। এবার আমরা একটি স্থায়ী সরকার গড়তে যাচ্ছি। ”

বিজেপির এই বিশ্বাস যেন দিল্লীবাসীর মনেও গেঁথে গেছে। ইন্ডিয়া গেট এলাকায় স্বস্ত্রীক ঘুরতে আসা বীরেন্দ্র বালন বাংলানিউজকে বলেন, খুবই চমৎকার একটি নির্বাচন হয়েছে। ১৬ তারিখের ফলাফলে মোদীজিই জিতবেন। তিনি সফল মানুষ। ভারতের উন্নয়নই করবেন তিনি। এবার কোনভাবেই কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। কারণ, গত ১০ বছরে তারা কোন উন্নয়নই করে দেখাতে পারিনি।

তবে এখনো শেষ কথাটি বলে দিতে রাজি নন অশোক রোড এলাকার ট্রাক্সি চালক অরুণ। তিনি বলেন, ফল বেরুতে একদিন বাকি। মিডিয়ার হিসেব এবং মানুষের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে এবার বিজেপির সরকারই আসছে। কিন্তু চূড়ান্ত ফলের আগে কিছুই বলতে চাই না।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।