ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

লোকসভার তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বিষয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৪
লোকসভার তাৎপর্যপূর্ণ কিছু বিষয়

কলকাতা: ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়ে গেছে। ফলাফল প্রকাশের পর উঠে এসেছে বেশ কিছু তথ্য যা ভারতে নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবার ঘটেছে।

উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ ও অবাক করা বিষয়। ফলাফল পর্যবেক্ষণের পর সেই বিশেষ তথ্য গুলোকে তুলে ধরা হল।

সর্বোচ্চ সংখ্যায় মহিলা জয়ী- ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে  স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সব থেকে বেশি মহিলা প্রার্থী লোকসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ৬১ জন মহিলা এমপি। ৫৪৩ জন লোকসভা সদস্যের হিসেবে শতাংশের হারে সেটি দাঁড়ায় ১১.২৩।


২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ৫৯ জন মহিলা এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন । ১৯৭৭ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী মহিলা প্রার্থীদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৯ জন। ভারতের ইতিহাসে সেটিই এখনও পর্যন্ত সব থেকে কম মহিলা সদস্য যুক্ত সংসদ সদস্য।

গড় বয়স বেড়েছে সদস্যদের- গত লোকসভায় সংসদ সদস্যদের থেকে এবার কিছুটা বেশি বয়েসের সদস্যরা ভোটে জিতে লোকসভার সদস্য হয়েছেন। ২০০৯ সালে লোকসভায় ৫৫ বছরের অধিক বয়েসের প্রার্থী ছিলেন ৪৩ শতাংশ। আর ২০১৪ সালের লোকসভায় ৫৫ বছর বয়েসের অধিক প্রার্থী হয়েছেন ৪৭ শতাংশ।

তবে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এমন ৭১ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন যাদের বয়স ৪০ বছরের নীচে।

নোটায় ভোট ৬০ লক্ষের – ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে নোটা বা কোন প্রার্থীকেই পছন্দ নয় এমন বোতামে ভোট দিয়েছেন ৬০ লক্ষ। ৮১ কোটি ৪৫ লক্ষ ভোটারের মধ্যে হিসেব করলে এই ভোটের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ০.৭৩ শতাংশ। তবে মোট প্রদত্ত ভোটের পরিমাপে “না ভোট”-এর পরিমাণ ১.১০ শতাংশ।

৫৪৩ টি কেন্দ্রে ৫ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫৪ জন এই ‘না ভোট” বেছে নিয়েছেন। না ভোটের পরিমাণ সব থেকে বেশি পড়েছে পণ্ডিচেরিতে। এখানে না ভোটের পরিমাণ ৩ শতাংশ। এর পরেই আছে মেঘালয়। এখানে না ভোটের পরিমাণ ২.৮ শতাংশ।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাত্র ১৪ টি রাজনৈতিক দলে না ভোট পড়া মোট ভোটের পরিমাণের থেকে বেশী। অর্থাৎ ১.১০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে ১৪ টি রাজনৈতিক দল। নোটার থেকে কম ভোট পেয়েছে এমন দলগুলির মধ্যে আছে  সি পি আই, ফরোয়ার্ড ব্লক, আর এস পি, শিরোমণি আকালি দল ইত্যাদি।

সবথেকে কম মুসলিম সদস্য- ২০১৪ লোকসভায় মাত্র ২০ জন মুসলিম সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৫২ সাল থেকে হিসাব দেখলে দেখা যাবে ২০১৪ লোক সভাতেই সব থেকে কম মুসলিম  সদস্য থাকছেন। ২০০৯ সালের লোক সভায় মুসলিম সদস্যের সংখ্যা ছিল ৩০।

আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে, স্বাধীনতার পর এই প্রথম উত্তর প্রদেশ থেকে একজনও মুসলিম প্রার্থী জয়ী হননি। বিপুল আসন নিয়ে জিতে আসা বিজিপি‘র সদস্যদের মধ্যে কোন মুসলিম নেই। বিহারের ভাগলপুর থেকে পরাজিত হয়েছেন বিজেপি’র সংখ্যালঘু নেতা শাহনাওয়াজ খান।

ভোটের হার আর আসন সংখ্যার বৈপরিত্য- প্রাপ্ত ভোটের শতাংশের হিসেবে ভারতের প্রথম দুটি দল হল বিজেপি এবং কংগ্রেস। বিজেপি ভোট পেয়েছে ৩১ শতাংশ এবং কংগ্রেস ভোট পেয়েছে ১৯.৩০ শতাংশ। ২০০৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ২৮ শতাংশ এবং বিজেপি পেয়েছিল ১৯ শতাংশে কিছু কম ভোট।

কিন্ত মজার বিষয় হল শতাংশের হিসেবে তৃতীয় স্থানে থাকা দল বি এস পি ৪.১০ শতাংশ ভোট পেলেও একটি আসনও পায়নি। অপরদিকে ৩.৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে এ ডি এম কে দল পেয়েছে ৩৭ টি আসন। আবার ৩.৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে সারা দেশে সি পি এম পেয়েছে মাত্র ৯ টি আসন। ঠিক তেমন ভাবেই ৩.৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ৩৪ টি আসন।

অঙ্কের হিসেবে আরও একটু গভীরে গেলে দেখা যাবে ১.৯০ শতাংশ ভোট পেয়েছে শিবসেনা দল। আর এই ভোট পেয়েই তারা আসন পেয়েছে ১৮ টি । ১.৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে শারদ পাওয়ারের দল এন সি পি জিতেছে ৬ টি আসনে। অপর দিকে আম আদমি পার্টি ২ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছে ২ টি আসনে। আসলে ভোট কাটাকাটির ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে।

উত্তরপ্রদেশের আমেথি এবং রায়বেরিলি দুটি আসন থেকে জয়লাভ করেছেন যথাক্রমে রাহুল গান্ধী এবং সোনিয়া গান্ধী। উত্তর প্রদেশের ভোট চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এই রাজ্যে বিজেপি পেয়েছে ৪২.৩০ শতাংশ ভোট। তারা দখল করেছে ৭১ টি আসন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ২২.২০ শতাংশ ভোট। তারা জিতেছে ৫ টি আসনে।

এখানে কংগ্রেস পেয়েছে ৭.৫০ শতাংশ ভোট। পেয়েছে ২ টি আসন। কিন্তু প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেলেও একটি আসনেও জিততে পারেনি বি এস পি দল। প্রাপ্ত ভোট এবং আসন সংখ্যার বৈপরিত্যই ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের সব থেকে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, ১৯ মে , ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।