ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

নীল বোতলে কুকুর তাড়াচ্ছে কলকাতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
নীল বোতলে কুকুর তাড়াচ্ছে কলকাতা

কলকাতা: কলকাতার কোনো বাড়ির দরজার সামনে বা দোকানে একটি নীল পানির বোতল ঝুলতে দেখলে অবাক হবেন না। শুধু বাসা-বাড়ি, দোকান কিংবা রাস্তা মোড়ে নয় মন্দিরের সামনেও ঝুলছে নীল পানির বোতল।



বেশ কদিন ধরে এভাবে নীল রঙের পানির বোতল দিয়ে কুকুর তাড়াচ্ছেন কলকাতার মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই নীল পানির বোতল ঝোলানো থাকলে বাড়ি কিংবা দোকানের সামনে মল-মূত্র ত্যাগ করছে না কুকুর।

প্রাথমিকভাবে কিছুটা অবিশ্বাস্য হলেও এই নীল পানির বোতল ছড়িয়ে পড়েছে গোটা কলকাতায়। শুধু কলকাতায় কেন? নীল পানি ঝুলিয়ে রাখার খবর পাওয়া গেছে কলকাতার আশপাশের বিভিন্ন জেলাতেও।

কী এই নীল পানি?

‘উজলা’ বা ওই জাতীয় কাপড় ধোয়ার নীল তরল, পানিতে গুলে  স্বচ্ছ বোতলে ঝুলিয়ে রাখছেন বাড়ির বাসিন্দারা।

পরিস্থিতি এমন যে, একেকটি রাস্তায় প্রায় সব কটি বাড়ির সামনেই ঝুলছে নীল পানির বোতল।

কিন্তু নীল পানির বোতল ঝুলিয়ে সমস্যার সমাধান হচ্ছে কী?

কলকাতার বাসিন্দা অবিনাশ পুরকায়ত বললেন, ‘অবশ্যই হচ্ছে। নীল পানির বোতল ঝোলানোর পর কুকুরের মল-মূত্র থেকে আমরা রক্ষা পাচ্ছি। বাড়ির দরজা খুলে কুকুরের বর্জ্য দেখতে হচ্ছে না। ’

‘ঘুম থেকে উঠে বাড়ির সদর দরজা খুললেই আগে বিভিন্ন জায়গায় কুকুরের বর্জ্য দেখতে পেতাম। পা ফেলারই সমস্যা হয়ে গিয়েছিল। এখন নিস্তার পেয়েছে,’ বলছিলেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা রবিন্দ্রনাথ স্যান্যাল।

কিন্তু যুক্তি কী?

সত্যি কী নীল পানি বা ‘উজলা’ গোলা পানিতে কুকুরকে বাড়ির সামনে মল-মূত্রে ত্যাগ থেকে দূরে রাখতে পারে?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু কলকাতায় নয় এই নীল পানি ঝুলিয়ে রাখার বিষয়টি এর আগে হয়েছিল দক্ষিণ ভারতেও।

ভারতের কেরালা রাজ্যে অনেকে শুধু নীল পানি ঝুলিয়েই থেমে থাকেননি, তারা বাড়ির দেয়ালকেও নীল রঙে রাঙিয়েছিলেন।

তাহলে কী নীল রঙ বা নীল পানিকে ভয় পায় কুকুররা? নাকি এর পেছনে আছে অন্য কোনো কারণ।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুকুর নিয়ে  বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বইগুলোর লেখক, ব্রিটিশ কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক এবং গবেষক স্ট্যানলি কোরেন জানান, কুকুর ‘কালার ব্লাইন্ড’। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কুকুর কোনো রঙ দেখতে পায় না।

‘কুকুর রঙ দেখতে পায় কিন্তু সে দেখা আর মানুষের কোনো রঙকে দেখার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। মানুষ যতটা পরিষ্কার দেখতে পায় কুকুর ততটা পারে না। আবার কিছু রঙ মানুষের চোখের থেকেও উজ্জ্বলভাবে ধরা দেয় কুকুরের চোখে। ’

গবেষকরা বলেছেন, রঙ দেখতে ‘কোনিস’ কোষের প্রয়োজন। এই কোষ মানুষের তুলনায় কুকুরের অনেক কম। এছাড়া আলোর প্রতিক্রিয়া যেভাবে মানুষের মধ্যে ঘটে কুকুরের ক্ষেত্রে ঘটে অন্যভাবে।

এর ফলেও কুকুরের রঙ দেখার বিষয়টি মানুষের থেকে বেশ কিছুটা আলাদা। আর এখানেই লুকিয়ে আছে নীল পানি দেখে কুকুরদের দ‍ূরে থাকার রহস্য।

বলে নেওয়া ভালো, নীল রঙ কুকুর দেখতে পায়। এই রঙ দেখার বিষয়টি প্রমাণ করেছেন ইউনিভারসিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান্টা বারবারা, ইউনিভারসিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষক জে নাটিজ।

তিনি পরীক্ষা করে দেখেছেন, রামধনুর সাতটি রঙ যথাক্রমে বেগুনি বা ভায়োলেট, নীল, নীলচে সবুজ, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল রঙকে কুকুর দেখে যথাক্রমে গাড় নীল, হালকা নীল, ধূসর, হালকা হলুদ, গাড় হলুদ বা কিছুটা খয়েরি ধরনের এবং গাড় ছাই রঙ।

অর্থাৎ লাল এবং সবুজ রঙ কুকুর দেখতে পায় না। নীল এবং হলুদ রঙ কুকুর খুব গাঢ় করে দেখতে পায়।

তবে নীল রঙ দেখলে কুকুর ভয় পায় বা কুকুরের মস্তিষ্কে কোনো বিশেষ উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য জানা যায়নি। কিন্তু নীল রঙকে অনেক বেশি গাঢ় করে দেখতে পায় কুকুররা। ফলে গাঢ় নীল রঙ কুকুরের চোখে বেশ প্রভাব ফেলে।

হলুদ রঙও মানুষের থেকে বেশি উজ্জ্বলভাবে দেখতে পায় প্রভুভক্ত এই প্রাণীটি। ঠিক যেমন সূর্যের দিকে তাকালে কিংবা গাড়ির আলো পড়লে চোখে অস্বস্তি হয়, ঠিক তেমনই গাঢ় নীল এবং গাঢ় হলুদ রং চোখে পড়লে কুকুরেরও হয়।

তবে বিজ্ঞানের কারণ যাই হোক না কেন এর ফলে কুকুরের মল-মূত্র ত্যাগের সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছেন কলকাতার বেশ কিছু অঞ্চলের মানুষ।

তাই এ পদ্ধতি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়।

এদিকে এ নিয়ে পশু প্রেমীদের কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তবে নীল জলের বোতল ঝুলিয়ে ফল পাওয়ায় বেশ খুশি কলকাতার মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
ভিএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।