ঢাকা: করদাতাদের উৎসাহিত করতে গত ২০২১–২২ কর বর্ষে সেরা করদাতা হিসেবে ১৪১ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে ট্যাক্সকার্ড বা করকার্ড দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণিতে ৭৬ জন, প্রতিষ্ঠান শ্রেণিতে ৫৩টি ও অন্যান্য শ্রেণিতে ১২টি।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে অফিসার্স ক্লাবে বিভিন্ন ক্যাটাগরি বা শ্রেণিতে বছরের সেরা করদাতাদের ট্যাক্সকার্ড ও সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। এ উপলেক্ষে এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানে ব্যক্তি পর্যায়ে ৭৬ জনকে এই ট্যাক্সকার্ড দেওয়া হয়। তার হলেন-
জ্যেষ্ঠ নাগরিক: হাকিমপুরী জর্দার মালিক মো. কাউছ মিয়া, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক খাজা তাজমহল, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, এমএসএ স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম সাহাবুদ্দিন আহমেদ এবং ব্যবসায়ী খন্দকার বদরুল হাসান।
গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা: এ মতিন চৌধুরী, মো. নাসির উদ্দিন মৃধা, মো. আমজাদ হোসেন, মো. জয়নাল আবেদীন ও আবু সালেহ মো. নাসিম।
প্রতিবন্ধী: ঢাকার আকরাম মাহমুদ, সিলেটের মো. মামুনুর রশিদ ও ঢাকার লুবনা নিগার।
নারী: আনোয়ারা হোসেন, আমিনা আহমেদ, ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমান, তাসমীন মাহমুদ ও পারভীন হাসান।
সাংবাদিক: চ্যানেল আইয়ের এমডি ফরিদুর রেজা, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম।
তরুণ: দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান, আসিফ ইকবাল মাহমুদ, নাসিরুদ্দিন আকতার রশীদ, ওয়ালটনের পরিচালক রাইসা সিগমা হিমা ও রবিন রাজন সাখাওয়াত।
ব্যবসায়ী: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী; ওয়ালটনের পরিচালক এস এম আশরাফুল আলম ও ভাইস চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আলম; ব্যবসায়ী মো. মাহবুবুর রহমান এবং গাজী গ্রুপের এমডি গাজী গোলাম মূর্তজা।
বেতনভোগী: এ শ্রেণির পাঁচজনই একই পরিবারের। তারা হলেন ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল পরিবারের মোহাম্মদ ইউসুফ, রুবাইয়াৎ ফারজানা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন, লায়লা হোসেন এবং এম এ হায়দার হোসেন।
চিকিৎসক: জাহাঙ্গীর কবির, এ কে এম ফজলুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, নার্গিস ফাতেমা এবং এন এ এম মোমেনুজ্জামান।
আইনজীবী: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, আহসানুল করিম, তৌফিকা আফতাব, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন।
প্রকৌশলী: রাজশাহীর মো. জহুরুল ইসলাম, ঢাকার মো. মোখলেছুর রহমান ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
স্থপতি: মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ, এনামুল করিম নির্ঝর ও ইয়াফেস ওসমান।
হিসাবরক্ষক (অ্যাকাউন্ট্যান্ট): মাশুক আহমেদ, মো. মোক্তার হোসেন ও রাকেশ সাহা।
নতুন করদাতা: এরিক এম ওয়াকার, ওবায়দুল ইসলাম, নাজমা আক্তার, লুইস এনরিক মায়র্গা মনকাডা, জুমারা বেগম, সাকেব মোহাম্মদ আলী এবং সাদরুদ্দিন আহসান আলী।
খেলোয়াড়: ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল খান ও কাজী নূরুল হাসান।
শিল্পী (অভিনয়) : মাহফুজ আহমেদ, মেহজাবীন চৌধুরী ও পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিল্পী (সংগীত): তাহসান রহমান খান, এস ডি রুবেল ও কুমার বিশ্বজিৎ।
অন্যান্য: নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার, মো. মনির হোসেন ও নাফিস সিকদার।
প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ট্যাক্স কার্ড পাওয়া ৫৩ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে-
ব্যাংক: স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ, ইসলামী ব্যাংক, এইচএসবিসি ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক।
অ-ব্যাংকিং আর্থিক: ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এবং বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড।
টেলিকমিউনিকেশন: গ্রামীণফোন।
প্রকৌশল: বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, বাংলাদেশ স্টিল রি–রোলিং মিলস (বিএসআরএম) এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক: অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রাণ ডেইরি ও স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ।
জ্বালানি: তিতাস গ্যাস, যমুনা অয়েল এবং পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি।
পাটশিল্প: আকিজ জুট মিলস, আইয়ান জুট মিলস এবং রোমান জুট মিলস।
স্পিনিং ও টেক্সটাইল: কোটস বাংলাদেশ, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, নাহিদ কটন মিলস, এসিএস টেক্সটাইল, বাদশা টেক্সটাইলস, অ্যাপেক্স টেক্সটাইল প্রিন্টিং মিলস এবং এনজেড টেক্সটাইল।
ওষুধ ও রসায়ন: স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়া: মিডিয়াস্টার লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড, সময় মিডিয়া ও টাইমস মিডিয়া লিমিটেড।
আবাসন: বে ডেভেলপমেন্টস, কনকর্ড এবং বিটিআই।
তৈরি পোশাক: স্কয়ার ফ্যাশনস, ইউনিভার্সেল জিনস, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস, রিফাত গার্মেন্টস, ইয়াংওয়ান হাইটেক স্পোর্টসওয়্যার, প্যাসিফিক জিনস এবং স্নোটেক্স আউটারওয়্যার।
চামড়াশিল্প: বাটা শু, অ্যালায়েন্স লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ও লালমাই ফুটওয়্যার।
অন্যান্য: ব্রিটিশ–আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি, সেখ আকিজ উদ্দিন লিমিটেড, আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স ও মেঘনাঘাট পাওয়ার।
এছাড়া অন্যান্য শ্রেণিতে ১২টি ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হয়। করদাতা পর্যায়ে মেসার্স এস এন করপোরেশন, মেসার্স ফখর উদ্দিন আলী আহমদ, মেসার্স মো. জামিল ইকবাল, মেসার্স ছালেহ আহাম্মদ, সেতু কর্তৃপক্ষ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), সেনাকল্যাণ সংস্থার প্রধান কার্যালয়, বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ডেভেলপমেন্টস এবং রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার।
উল্লেখ্য, ট্যাক্স কার্ড প্রাপ্তরা বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাবেন। ট্যাক্স কার্ডধারীরা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাবেন। সড়ক, বিমান, নদীপথে ভ্রমণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকিট পাবেন। হোটেল- রেস্তোরাঁয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা পাবেন। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। চিকিৎসায় হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শয্যা সুবিধা পাবেন।
এছাড়া স্বামী-স্ত্রী, নির্ভরশীল পুত্র-কন্যা নিজেদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেবিন সুবিধা পাবেন। বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার এবং তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিং পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন তাঁরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮,২০২২
জিসিজি/এমএমজেড