ঢাকা: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, জুয়েলারি শিল্প একটি বড় শিল্প হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ আমাদের দেশে ভালো কারিগর আছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে স্বর্ণালঙ্কারের যে কদর, তা কিন্তু ইউরোপ বা আমেরিকাতে তেমন নেই। তাই আমি মনে করি, এখন থেকে মনোযোগ দিলে আমাদের দেশ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের জুয়েলারি রপ্তানি করা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরত্ন হলে ‘সেলিব্রেটিদের গহনা ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সাবেক সভাপতি ডা. দীলিপ কুমার রায়ের সভাপতিত্বে কথা সাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ও এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি আমিন হেলালী।
অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার, মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া জান্নাতুল, অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া, উপস্থাপক ও অভিনেত্রী জাহারা মিতু, মডেল ও অভিনেত্রী মৌটুসি বিশ্বাস, অভিনেত্রী বর্ষা, ইয়াসমিন হক ববি, মাহিয়া মাহি ও সংগীতশিল্পী জাকিয়া সুলতানা কর্নিয়া।
সেমিনারে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, স্বর্ণালঙ্কারের সঙ্গে আমার সংযোগ খুবই কম। এটি সত্য যে, বউ যখন রাগ করে, তখন তার মান ভাঙাতে মাঝে মাঝে ছোটখাট স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে আসি। খুব বেশি দামের আনি না। আমি মিতব্যয়ী মানুষ।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য পুরোপুরি নির্ভর হয়ে পড়েছে গার্মেন্টস শিল্পের ওপর। আমাদের রপ্তানির ৮৫ ভাগ গার্মেন্টেসের ওপর নির্ভরশীল। এটি কোনো দেশের জন্য খুব বেশি স্বস্তিদায়ক নয়। এজন্য বাণিজ্য ও রপ্তানিকে বহুমুখীকরণ করা দরকার। রপ্তানি বহুমুখী করার ক্ষেত্রে আমরা যেমন আইসিটির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতোমধ্যে এই খাত থেকে ২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছি।
তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে নিশ্চিতভাবে কয়েক বিলিয়ন ডলার জুয়েলারি রপ্তানি হয়। আমি মনে করি, বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন ডলারের জুয়েলারি রপ্তানি করা সম্ভব। এজন্য নীতিমালার অভাব ছিল, তা প্রধানমন্ত্রী করে দিয়েছেন। নীতিমালার সহযোগিতা নিয়ে জুয়েলারি শিল্পের মালিকরা জুয়েলারি তৈরি করে রপ্তানি করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রেও অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। এজন্য প্রায়ই স্বর্ণের চোরাচালান হতো। নীতিমালার মাধ্যমে এটি বন্ধ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী গোল্ড রিফাইনারি করার অনুমতি দিয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন, তাদের আমি অনুরোধ জানাব, কীভাবে জুয়েলারি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, মানবসভ্যতা বিকাশের পর থেকে স্বর্ণালঙ্কারের কদর ছিল। মানুষ তখন থেকে এটা লালন করে আসছে। আজ যে মেলার আয়োজন করা হয়েছে, তার সাফল্য কামনা করছি। তবে আমি জানি না, এই মেলায় বিদেশি ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কি না। ভবিষ্যতে মেলাগুলোতে বিদেশি ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য অনুরোধ জানাব। তাহলে এই মেলাকে আন্তর্জাতিকীকরণ করা হবে। বিদেশি ক্রেতারা আসবেন। সবশেষে বলতে চাই, এই শিল্পের বিকাশের জন্য আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী ও নিয়ম নীতি অনুযায়ী যা করা সম্ভব, সব কিছুই করা হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, বাজুস ১৯৬৫ সালে যাত্রা শুরু করলেও এখন ব্যাপক জাগরণ তৈরি করেছে। বাংলাদেশ বড় পরিসরে জুয়েলারি উৎপাদন করতে যাচ্ছে। এটি বড় ঘটনা। জুয়েলারির গায়ে লেখা থাকবে মেড ইন বাংলাদেশ। বড় কথা হলো বাংলাদেশে গহনা তৈরি হয়ে দেশের বাইরে রপ্তানি হবে।
বাজুস ফেয়ার ২০২৩ আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে চলবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। প্রবেশ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। তবে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের টিকিট লাগবে না।
এছাড়া বাজুস ফেয়ারে ক্রেতাদের জন্য র্যাফেল ড্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্রেতারা যে প্রতিষ্ঠানের অলঙ্কার কিনবেন, সেই প্রতিষ্ঠান থেকেই র্যাফেল ড্রয়ের কুপন সংগ্রহ করবেন। এ ছাড়া জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণে বিশেষ অফার দিচ্ছে। এবার বাজুস ফেয়ারে আটটি প্যাভিলিয়ন, ১২ টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ৩০টি স্টলে দেশের ঐতিহ্যবাহী ৫০টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
জিসিজি/আরএইচ