ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বিদ্যুৎ খাতে অব্যবস্থাপনার দায় জনগণকে নিতে হচ্ছে: সিপিডি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
বিদ্যুৎ খাতে অব্যবস্থাপনার দায় জনগণকে নিতে হচ্ছে: সিপিডি

ঢাকা: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও প্রক্রিয়াগত দুর্বলতার কারণে ভর্তুকি বাড়ছে। আর বাড়তি ভর্তুকির দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে।

ভোক্তারা এখন যে মূল্য পরিশোধ করছে, তা যদি বাজার নির্ভর হতো বাড়তি ভর্তুকি গুনতে হতো না।

সোমবার (২৮ মার্চ) সিপিডির ধানমন্ডি কার্যালয়ে ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪: সিপিডির সুপারিশমালা’ সংলাপে গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব কথা বলেন। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলন, ভর্তুকির যে সমন্বয়, তা সঠিক পদক্ষেপ নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বলানি খাতে যে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি তৈরি হয়েছে এবং এই ক্যাপাসিটির জন্য যে বাড়তি ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে, তার দায় ভোক্তার ঘাড়ে চাপানো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এই বাড়তি ক্যাপাসিটির জন্য যে বাড়তি ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে, তার কারণে সরকারকে ভর্তুকির দায় মেটাতে হচ্ছে। এই ক্যাপাসিটি চার্জের মতো কার্যক্রম থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে।

আগামীতে নতুন প্রকল্প নেওয়া ও পুরাতন প্রকল্প নবায়নের ক্ষেত্রে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে’ ধরনের একটি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাহলে ভর্তুকির দায় থেকে বিদ্যুৎ খাত বের হয়ে আসতে পারবে, বলেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

জ্বালানি খাতে যে উচ্চমূল্য আছে, তা বাজার নির্ভর হলে এই মুহূর্তে মূল্য সমন্বয়ের সুযোগ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের হিসাবে বলছে, এই মুহূর্তে বিপিসি লাভের ভেতরে রয়েছে। কিন্তু সেই সুযোগ আমরা ভোক্তাকে দিতে পারছি না। সেই জায়গা থেকে বাজারভিত্তিক মূল্য কাঠামোতে যাওয়া এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে যে অদক্ষতা, বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, দুর্নীতির সংশ্লেষের কথা বলা হচ্ছে—এগুলোর বিরুদ্ধে আগামীতে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এটা না করে ভোক্তার ওপর বাড়তি খরচের দায় চাপিয়ে দেওয়া অবস্থা থেকে সরে আসার প্রয়োজন আছে।

গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, এক বছর আগেও অর্থনীতির সমস্যা বলতে আমরা সামষ্টিক বা ব্যষ্টিক পর্যায়ের ঝুঁকির কথা বলেছি। এটি এখন ব্যক্তি পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে। ফলে এই বাড়তি ঝুকি এ সময়ের বড় সমস্যা। এটা আরও বিস্তৃত ও গভীর হয়েছে। এটা উত্তরোত্তর বাড়বে এবং শুধু সামষ্টিক বা ব্যস্টিক পর্যায়ে থাকবে না, ব্যক্তি পর্যায়ে বিস্তৃত হবে।

তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বাজার হিসাবে যে ভূমিকা পালন করার দরকার তার প্রক্রিয়া দ্রুত দুর্বল হচ্ছে। কোনো মেকানিজমই কাজ করছে না। যেটা জটিল হচ্ছে, বড়রা ছোট্টদের খেয়ে ফেলছে। বাজারে ক্রমশই ছোটরা আরও ছোট্ট হচ্ছে। বড়দের প্রভাব এখন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়ছে।

সরকার আইএমএফের শর্তাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাচ্ছে উল্লেখ করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এই শর্ত ও সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য যথেষ্ট হবে না। এ ক্ষেত্রে আইএমএফ-এর শর্তের বাইরে গিয়েও বিভিন্ন রকম কার্যক্রম নেওয়ার প্রয়োজন।

বড় বড় খাতগুলোতে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বিশেষ ইনক্রিমেন্টের সুপারিশ করে উল্লেখ করে সিপিডির এই গবেষক বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এক বছরের ব্যবধানে ২৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। এতে শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রার কষ্ট বেড়েছে।

মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রয়োজন। সেই কমিশন ব্যাংকের ভেতরে কী হচ্ছে, তথ্য বের করে এনে সমস্যা নিরূপণের উদ্যোগ নেবে।

ব্যাংক পরিচালন কার্যক্রমে নৈতিকতা ও আপ টু মার্ক মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে, যার মাধ্যম সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আইনি দুর্বল দিকগুলোকে শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার, আদায় কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক করার পরামর্শও দেওয়া হয়।

যাদের টাকা আছে তাদের পকেটে সাধারণ মানুষের টাকা জমা হচ্ছে। সুশাসন না থাকা, দুর্নীতির নানা কারণে এটা হচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে বাজেট প্রণনয়নের সুপারিশ করেন সিপিপি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।