ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন ভোক্তার ডিজি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন ভোক্তার ডিজি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান

ঢাকা: প্রতি বছর রমজান এলেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব ধরনের দ্রব্যের বাজার। এবার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রমজানের অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল সে অস্থিরতা।

রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ভোক্তার সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে কিনা সেটি নিয়েও দেখা দিয়েছিল নানা শঙ্কা।

এমন পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ী ও তাদের সংগঠন এবং বাজার কমিটিগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বাজারে প্রতিনিয়ত মনিটরিংয়ের পাশাপাশি চালানো হয়েছে অভিযান। তবে এতে কতটুকু সফল হয়েছে সরকারি এই সংস্থাটি? সেটিই ফেসবুক লাইভে এসে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।

সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুর ১২টায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে আসেন তিনি।

ফেসবুক লাইভে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশে ব্যবসায়ীরা রমজানের সময় বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেন। আরব দেশগুলোতে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ছাড় দেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশ হওয়ার পরও ব্যবসায়ীরা রমজানকে উপলক্ষ্য করে সুযোগ নেন। কারণ এ সময় ভোক্তাদের দ্রব্যের চাহিদা বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, রমজানে যেহেতু আমাদের নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়, তাই আমরা আমদানি নির্ভর জরুরি খাদ্য পণ্যগুলোর মজুদ ঠিক রাখার জন্য তিন-চার মাস আগে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। এজন্য আমদানিকারকরা যাতে পণ্য আমদানির সময় কোনো বাধার সম্মুখীন না হন, এলসি খুলতে সমস্যা না হয়, বন্দর থেকে যাতে দ্রুত পণ্য খালাস হয় সে ব্যবস্থা করেছিলাম। এ কারণে রমজানে চাহিদা অনুযায়ী আমরা পণ্য মজুদ রাখতে পেরেছিলাম। তাই এখন বাজারে কোনো পণ্য সরবরাহ বা পাওয়া ঘাটতি নেই। সরকারি গুদামগুলোতে এখনো প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ আছে।

রমজানে খাদ্যপণ্যের মজুদ ঠিক রাখলেও, দাম ঠিক রাখা যায়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখতে না পারার একটি কারণ হলো- ডলারের মূল্য বেড়েছে। এই কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারায় তিন-চার মাস আগে থেকে প্রতিটি পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল ছিল। এছাড়া ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার যেসব কারণ দেখায় এর কোনোটি যৌক্তিক, কোনোটি অযৌক্তিক। এটি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

ভোক্তার ডিজি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে বাড়তি দাম যেনো রমজানে আর অস্থির না হয়। ভোক্তারা যাতে স্বস্তিতে রমজান পার করতে পারেন। এ জন্য রমজানের দুই তিন মাস আগে থেকে আমরা সেক্টর ভাগ করে একাধিকবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। আমরা খাদ্যপণ্য আমদানিকারক, ফল আমদানিকারক, মসলার বাজারের ব্যবসায়ীসহ অনেকের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা অনেক সময় অতিরিক্ত চাহিদাকে পুঁজি করে বাজারকে অস্থির করে দেয়। এ জন্য আমরা এফবিসিসিআই ও ঢাকার বাজার মালিক সমিতিগুলোর সঙ্গে মিটিং করেছিলাম। এবার আমরা বাজার যাতে অস্থির না হয়, সেজন্য বাজার কমিটিগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, কোনো বাজার যদি অস্থির হয়, তাহলে সেই বাজারের কমিটির বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো। এরই মধ্যে সে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।

উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, মুরগির বাজার যখন অস্থির ছিল, তখন আমরা কাপ্তান বাজারের দোকান মালিক সমিতিকে শোকজ করেছিলাম। আজকেও সোমবার (২৭ মার্চ) কাপ্তান বাজারে আমাদের টিম অভিযান চালিয়েছে। কোথাও কোনো ব্যত্যয় হলে আমরা বাজার কমিটিকে দায়ী করবো এবং প্রয়োজনে বাজার কমিটি বিলুপ্ত করবো বলেছিলাম। এছাড়া এবার আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বাজার মনিটরিং জোরদার করার পদক্ষেপ নিয়েছি।

প্রথম রমজান থেকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সারাদেশে নিবিড়ভাবে বাজার মনিটরিং করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সারাদেশে আমাদের ৬২টি টিম কাজ করছে। শুধু ঢাকা শহরেই আমাদের ৭টা টিম কাজ করছে। এর ফলে রমজানে বিশেষ কিছু পণ্যের দাম আর বাড়েনি। বরং কিছু কিছু পণ্যের দাম কমেছে। তারপরও কেউ যাতে পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থির করতে না পারে, সেজন্য আমরা নজর রাখছি।

এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান বলেন, এবার রমজানে আমরা কিছু বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে তাদের পণ্যে ছাড় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। দেশবন্ধু গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ট্রাক সেলের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে এরই মধ্যে কাজ করছে। সেখানে বাজার থেকে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে তারা ভোক্তাদের পণ্যে দিচ্ছেন। এছাড়া সরকারিভাবে টিসিবি এক কোটি পরিবারকে, অর্থাৎ ৫ কোটি মানুষকে ন্যায্যমূলে পণ্য দিচ্ছে। এর বাইরেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওএমএস কার্যক্রম চলছে। সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে ৫০ লাখ পরিবারকে চাল দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে কিছু ট্রাকে করে ডিম, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও দুধ  সাশ্রয়ী মূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

রমজানে পণ্যের সরবরাহ নিয়ে ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যথেষ্ট পণ্য মজুদ আছে। সরবরাহও ঠিক রয়েছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে সেটা সত্য। কিন্তু রমজান নিয়ে যত রকমের শঙ্কা ছিল, সেটা সেভাবে হয়নি। আমরা সেই শঙ্কা উত্তরণ করতে পেরেছি। দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দাম আর নতুন করে বাড়েনি। বরং কিছু কিছু পণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে রমজানের আগের দিন আমরা যে কাজ করেছি, এর প্রভাব এরই মধ্যে বাজারে পড়েছে। আমাদের অনেক সমস্যা আছে, তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ব্যবসায়ী সমিতিগুলোও কাজ করছে।

ডিজি আরও বলেন, জামকাপড়ের দাম নিয়ে যাতে এবার বাজার অস্থির না হয়, সেজন্য আমরা কাজ করবো। আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) আমরা রাজধানীর বসুন্ধরা, যমুনা, আড়ংসহ গুলশান-বনানীর যেসব বড় বড় মার্কেট আছে তাদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করবো। ঈদের আগে আমরা লঞ্চ ও বাসের টিকেট নিয়ে কাজ করবো। আমি আশা করবো, রমজান সংযমের মাস, আপনারা (ভোক্তা, ব্যবসায়ী) সুন্দরভাবে সেটি পালন করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।