ঢাকা: হঠাৎ করেই আর্থিক খাতের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কৃষি ঋণে খেলাপির হার বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংক খাতে।
এক বছর আগে যে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, চলতি বছরের মার্চে সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশে।
কৃষি ঋণের সাম্প্রতিক তথ্য পর্যালোচনা করে এমন তথ্য মিলেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মার্চ প্রান্তিকে কৃষিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ সময় মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি আট বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।
অন্যদিকে, বেসরকারি খাতের ৪৮ বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকের এই খেলাপি ঋণের ভারই পুরো ব্যাংক খাতের কৃষিঋণের বোঝা বাড়িয়েছে।
করোনা মহামারী, করোনা পরবর্তী এবং পূর্ববর্তী যে কোনো সময়ের চেয়ে এ ভার ঢের বেশি।
২০২১-২২ অর্থ বছরের মার্চ মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ সময় মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। ঋণ স্থিতির পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এক বছরে যে হারে ঋণ স্থিতি বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
দুই বছর আগে ২০২১ সালের ঋণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, খেলাপি ঋণের হার যেমন কম ছিল; পরিমাণও ছিল কম। ওই বছরের মার্চে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তখনো করোনা মহামারি চলমান। সে সময় কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে যেমন সমস্যা ছিল, কৃষিকে সহায়তা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনাও বিদ্যমান ছিল।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে এর এক বছরের মাথায় কৃষিতে খেলাপি ঋণের কমে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ হয়।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মার্চে এসে খেলাপি ঋণ বেড়ে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশে পৌঁছানো অস্বাভাবিক মনে করছেন ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা। বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে কৃষি খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
একক ব্যাংক হিসেবে বেশ কিছু বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। আর এর প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংকিং খাতে। তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের বর্তমানে খেলাপি ঋণের হার ২১ শতাংশ; এক বছর আগে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে।
এক্সিম ব্যাংকের ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে এক বছরের ব্যবধানে বেড়ে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ হয়েছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ হয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংকের ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ১ শতাংশ খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ শতাংশ হয়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের কৃষিতে ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ খেলাপি ঋণ বেড়ে ২৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ হয়েছে; মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৪ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ; এনসিসি ব্যাংকের ১ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ৩ শতাংশ; শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৩ শতাংশ; স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ থেকে বেড়ে এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশে।
অন্যদিকে, এই খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে ভালো করেছে মাত্র দুটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংক দুটি হলো- ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক।
কৃষি ঋণে সরকারি ব্যাংকগুলো মূলত সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মার্চ প্রান্তিকে আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের কৃষি ঋণের মোট ঋণ স্থিতি যেখানে ৩৫ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। সেখানে ৪৮টি দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ স্থিতি ১৫ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা।
বেসরকারি এসব ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
জেডএ/এনএস