ঢাকা: সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রির পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, দেশের বাজারে চিনির ঘাটতি এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বুধবার (১০ মে) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
বাজারে প্যাকেটজাত চিনি নেই, খোলা চিনি থাকলেও সেগুলো প্রচুর দাম। তেলও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভ্যাটের ক্ষেত্রে মওকুফ ছিল। যেহেতু সেটা আর নেই পহেলা মে থেকে সেজন্য দাম বাড়ানোর জন্য অ্যাসোসিয়েশন থেকে আমাদের কাছে লেখা হয় এবং ট্রেড এবং ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ আমরা সমন্বয় করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, চিনির ক্ষেত্রে একটু ঘাটতি আছে, এই ধরনের খবর আছে। আমরা ভোক্তা অধিকারে ইতোমধ্যে বলেছি। আমরা চিটাগাং পোর্ট থেকেও খবর নিচ্ছি, চিনি নিয়ে জাহাজ কতগুলো এসেছে। চিনির দামের ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েশনের দাবি ছিল সেটাও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করেছে। সে দাম আমরা সেটা তাদের জানিয়ে দিয়েছি।
সিনিয়র সচিব বলেন, প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২০ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১২৫ টাকা সর্বোচ্চ মূল্য, এই হিসাবে বিক্রি করার জন্য আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি, আমরা পরশুদিন বিকেলে জানিয়েছি। এখন অবজারভেশনে আছে। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, এটা বাস্তবায়ন করবে কি না। তবে বাজারে রমজানের আগে থেকেই আমদানির ক্ষেত্রে কিছুটা ঘাটতি ছিল চিনির। সেটা কাটিয়ে উঠতে হবে।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম অনেক বেড়েছে, এটা আপনারা খবর নিলে জানবেন। সেজন্য তারা যে দাবি করেছে, এটা আমাদের যে অভিন্ন নির্ধারণ পদ্ধতি আছে, সে হিসেবে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন হিসাব করে দেখেছে যে আসলে তাদের যে দাবি ততটা হয়তো সমন্বয় করা সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা ১০৪ টাকা এবং ১০৯ টাকার জায়গায় ১২০ টাকা এবং ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে সেভাবে বিপণন করতে আমরা অনুরোধ করেছি। আমরা দেখব যে এটা তারা বাস্তবায়ন করছে কি না। ভোক্তা অধিকারসহ অন্যদেরও বলা হয়েছে। বাস্তবায়নে এখন তারা যাবে মাঠপর্যায়ে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যারিফ নির্ধারণের বিষয়টি কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেখে। আমরা যখন দেখি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনটার দাম বেশি বেড়ে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে আমরা তাদের অনুরোধ করি শুল্ক কমানোর জন্য। আপনারা জানেন যে বিভিন্ন সময় কমানোও হয়। ইতোপূর্বে সয়াবিন তেল এবং পামওয়েলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এখন কিন্তু চিনির জন্য শুল্ক কমানো হয়েছে। কমানোর পরেও দাম অতটা কমানো যাচ্ছে না। এরমধ্যে মূলত দুটি কারণ যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হয়ে গেছে এবং ডলারের দাম বেড়ে গেছে। দেশের মধ্যে পরিবহন খরচ কিছু বেড়ে গেছে। এটা হয়তো দামে প্রতিফলিত হচ্ছে। এ বিষয়টি এনবিআর দেখছে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, চিনির জন্য যে ট্যারিফ হার কমানো হয় সেটি ৩১ মে পর্যন্ত বহাল আছে। আমরা আবার চিঠি লিখতে যাচ্ছি এনবিআরকে যে এটা যেন কমানো হয়। কারণ চিনির দামটা অনেক বেশি বেড়ে গেছে, গত বছরের সঙ্গে যদি তুলনা করি। তবে এনবিআর স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা করে দেখবে যে রাজস্ব ঘাটতি কতটা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকে। রাজস্ব আদায় না হলে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, আমরা সমন্বয় করি, আমরা এনবিআরের সঙ্গে সব যোগাযোগ করি, আমরা লিখি এবং তার ফলে কিন্তু মাঝেমধ্যে এগুলোর দাম বাড়ানো-কমানো হয়। এখন বলার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো তাৎক্ষণিক করা যায় না, কিন্তু আমরা সার্বক্ষণিক এটা মনিটরিং করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২৩
জিসিজি/এএটি