ঢাকা: দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও আবারও ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও ডলার সংকট কাটছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছেও প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার মার্কিন ডলার রয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন এলসি খোলার ক্ষেত্রে ভালো অবস্থায় আছে। কিছুদিন আগেও যে সমস্যা ছিল, এখন আর সেই অবস্থায় নেই। পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।
মার্চ ও এপ্রিল দুই মাসের এশিয়া ক্লিয়ারিং হাউজের ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় মেটানোর পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৯ ডলারে নেমে আসে। মঙ্গলবার (২০ জুন) রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা যোগ হওয়ার ফলে বিরাজার্ভের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এলসি খোলার ক্ষেত্রে যে চাপে ছিল, এখন আর সেই চাপ নেই। ফলে ডলারের অভাবে এলসি খোলা হচ্ছে না, এমন ঘটনা আর ঘটবে না আশা করছি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসের ১৬ দিনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১ দশমিক ৬৯১ বিলিয়ন ডলার। এ প্রবাসী আয় আগের মাস মে এবং আগের বছর জুনের চেয়ে বেশি। মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১ দশমিক ৬৮৪ বিলিয়ন ডলার। আর আগের বছর ২০২২ সালের জুন মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১ দশমিক ৮৩৭ বিলিয়ন ডলার।
ঈদুল আজহাকে সামনে করে প্রবাসী আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। প্রবাসী আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাতে ডলারের বিপরীতে টাকা বৃদ্ধি ও প্রণোদনার কারণে বেশি প্রবাসী আয় আসছে বলে মনে করছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। ফলে ঈদের পরও প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। আর প্রবাসী আয় বেশি এলে ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য রেখে বাকিটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাবে যুক্ত হয়।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও খাদ্যপণ্য, জ্বালানির মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করে।
১০ পণ্য আমদানিতে আরোপিত কড়াকড়ি শিথিল
ডলার সংকট কমে আসার ফলে আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শিখিল করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত জুলাই মাসের পর থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। যাতে আমদানি ব্যয় কমে, সাশ্রয় হয় ডলারের। উৎপাদন সহায়ক এই ১০ পণ্যের ওপর আরোপিত কড়াকড়ি শিথিল করতে গত ২০ জুন সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ সব পণ্যের মধ্যে রয়েছে, প্যাকেজিং আইটেম ও এর কাঁচামাল, চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম ও রিএজেন্ট, ইউপিএস বা আইপিএসের যন্ত্রাংশ ও আনুষঙ্গিক পণ্য, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট পণ্য, নির্মাণ সংশ্লিষ্ট স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা পণ্যের সম্পূরক হার্ডওয়্যার, স্টিল শিট, এইচ-বিম, কম্পিউটার টেক্সটাইলের কাঁচামাল, রাসায়নিক ও আনুষঙ্গিক পণ্য, প্লাস্টিক ও ল্যাপটপের যন্ত্রাংশ, তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট হার্ডওয়্যার, যানবাহনের খুচরা যন্ত্রাংশ, টায়ার, টিউব ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্য।
সার্কুলারে আরও বলা হয়, কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের বাণিজ্যিক আমদানিকারকের মাধ্যমে আনা পণ্য সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসা প্রসারের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
এ ধরনের পণ্য অর্থনৈতিক গতি বাড়ানোসহ কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সেই বিবেচনায় সিএমএসএমই ও অন্যান্য খাতের বাণিজ্যিক আমদানিকারকের মাধ্যমে আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকার/ গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনে নগদ মার্জিন সংরক্ষণের হার নির্ধারণ করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
জেডএ/এমজেএফ