ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

খেলাপি ঋণের চেয়ে বেনামি ঋণ অর্থনীতির বড় ব্যাধি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৩
খেলাপি ঋণের চেয়ে বেনামি ঋণ অর্থনীতির বড় ব্যাধি

ঢাকা: খেলাপি ঋণের চেয়ে বেনামি ঋণের অস্তিত্ব অর্থনীতির জন্য বড় ব্যাধি মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, কোনো উদ্যোক্তা ঋণ নেওয়ার পর তা খেলাপি হওয়ার পর আর্থিক খাতে যতটা ক্ষতি করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে রাজনৈতিক ছত্র ছায়ায় বাড়ির গৃহকর্মী, কর্মচারী ও ড্রাইভারের নামে ঋণ নিয়ে তা না দেওয়া।

রোববার (০৯ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আইসিএবি-ইআরএফ আয়োজিত মুদ্রানীতি ও এর প্রভাব শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এ কথা বলেন। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন আইসিবি সভাপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লা সৃধা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো পরপর বড় দুটি সংকটের কারণে মূল্যস্ফীতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। বড় ধরনের সংকট থেকে উত্তরণে অর্থনীতিতে যে পরিমাণ অর্থ ছাড়া (ইনজেক্ট) হয়, সে তুলনায় উৎপাদন না হওয়া  ও যুদ্ধের কারণে সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, এ সময় অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিস্থিতি সামাল দিতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় এলাকায় ২০২২ সালের জুনের তুলনায় ২০২৩ সালের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। এ সব দেশ কঠোর আর্থিক নীতিও নেয়। বাংলাদেশ সে সময় অনুরূপ সংকোচনমূলক ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল। ফলে মূল্যস্ফীতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাকের অবদান ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। হোম টেক্সটাইলসহ রপ্তানি খাতে মোট অবদান ৮৮ শতাংশ। তার মানে হলো, এই খাতটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এ খাতের জন্য কোনো সুবিধা চাইলে কেমন যেন বিতৃষ্ণা ভাব দেখানো হয়। মনে করে, এ খাত সরকারের কাছে থেকে অনেক কিছু নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, তৈরি পোশাক সত্যিকার অর্থেই ভালো করছে। এটা যুক্তরাষ্ট্র-চীনের অর্থনৈতিক যুদ্ধের কারণে নয়;  নতুন মার্কেটেও তৈরি পোশাক ভালো করছে। গত অর্থবছরে নতুন মার্কেটে রপ্তানি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। জাপানে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার, ভারতে এক বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। এমন নতুন মার্কেটে রপ্তানি বাড়ছে। বাংলাদেশকে যদি উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হয়, মাথাপিছু আয় যদি আরও বেশি উন্নীত করতে হয়, তাহলে বেশি বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদ হারে সম্ভব নয়। প্রস্তাবিত মুদ্রানীতিতে আরও বেশি সুদ হার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়।

টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ খোকন বলেন, চলতি বছরের চেয়ে আগামী বছর গ্যাসের সমস্যা আরও বেশি হবে। বর্তমানে যে হারে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, এটুকু পেতে হলে আগামী বছরে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে। এটা কোথায় থেকে আসবে? এ ক্ষেত্রে রপ্তানিমুখী শিল্প, ব্যাক লিংকেজ ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ শিল্পকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাত থেকে সরকার যে ঋণ নিবে তা বেসরকারি খাতের ঋণে সংকট তৈরি হবে, বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। স্বল্প মেয়াদী ঋণ নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দেওয়ার ফলে ব্যাংকিং খাতের ক্ষতি করা হচ্ছে। আর্থিক খাতের ক্ষতির প্রভাবে ব্যাকওয়ার্ড শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরে পাট শিল্পের মতো শত চেষ্টা করেও এ শিল্পকে তোলা যাবে না।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে ইডিএফ সংকোচন করা হলে রপ্তানিমুখী শিল্পের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে উল্লেখ করে এই উদ্যোক্তা নেতা বলেন, এ শিল্পের প্রাণ হলো ইডিএফ। ইডিএফের পাশাপাশি আর্থিক খাতের তারল্য যাতে নিশ্চিত করা যায় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

শীঘ্রই রুপিতে ট্রেনিং শুরু হবে। ভারতের সঙ্গে রুপির এ ট্রেডিংকে স্বাগত জানান নীট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) কার্যনির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি একমাত্র ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সম্ভব হলে রাশিয়ার রুবল ও চীনের ইউয়ানে ট্রেনিং শুরু করার পরামর্শ দেন।

বাজেটের সঙ্গে মূদ্রানীতি সমন্বয়ের তাগিদ দেন আইসিবি সভাপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২৩
জেডএ/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।