ঢাকা: পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া, বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করা, দাম না কমালে আমদানি করার ঘোষণা দেওয়া—বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের এসব নির্দেশনা কোনো কাজেই আসেনি। ডিম, আলু, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের দাম আবারও হয়েছে লাগামহীন।
রোববার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর এলাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসব বাজারে আলুর কেজি ৫০ টাকা; প্রতি হালি ডিম ৫২ থেকে ৫৫ টাকা; দেশি পেঁয়াজ ৯৫ টাকা থেকে ১১০ টাকা, আমদানি করা বড় পেঁয়াজ ৯০ টাকা আর প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বেশি দামে এসব পণ্য বিক্রি করলেও বলতে নারাজ কেন দাম বাড়ল। আকুল আলী মিরপুর ১৪ নম্বরের ব্যাটালিয়ন বাজারে পেঁয়াজ, আলু ও ডিম বিক্রি করছেন। ব্যাটালিয়ন কোয়ার্টার থেকে বাজার করতে আসা কল্পনা আক্তার পণ্যের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে জবাব দেননি ওই বিক্রেতা।
কল্পনা আক্তার বলেন, গত বৃহস্পতিবার আলু ৪৫ টাকা দরে কিনলেও এখন ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করবে না। এক ডজন ডিমের দাম বলছে ১৬০ টাকা। দুই দিন পর আসলেই দেখা যাবে আর আগের দাম নেই, বেড়ে গেছে। এটা কি মগের মুল্লুক!
দাম বৃদ্ধির কারণ জিজ্ঞস করলে বিক্রেতা আকুল আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে গেছে। কেন দাম বাড়ল জিজ্ঞেস করলে পাইকাররা বলতে চায় না। দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করলে বলে— নিলে নাও, না নিলে অন্য জায়গায় দেখ। এ জন্য জিজ্ঞেস করি না। দাম বৃদ্ধি মানে আমরাও বাড়িয়ে বিক্রি করব, করছি। খরিদ্দারকে একই কথা বার বার বলতে ভালো লাগে না।
বাজার করতে এসে মেজাজ খারাপ হয়েছে মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের কুলসুম বেগমেরও। তার ছেলে ও ছেলের বউ কাজ করেন পোশাক কারখানায়। বাজারে এসে মরিচ, আলু ও ডিমের বাড়তি দাম দেখে চোখ যেন চরক গাছ কুলসুম বেগমের। ছেলের বউ তাকে যে টাকা দিয়েছে, আর যেসব বাজার করতে বলেছে—টাকায় তার কুলাবে না।
ক্ষিপ্তি হয়ে কুলসুম বেগম বলেন—কয়েকদিন আগেই তো কমল ডিম, আলুর দাম। টেলিভিশনে বলল, সরকারের দামের উপরে দাম নেওয়া যাবে না, তাহলে আবার বাড়লো কেন? এরা কি সরকারের কথা শোনে না।
আপনি তো ডিম, আলু, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ কিনেছেন দেখছি। দাম কত বাড়ল জানতে চাইলে কুলসুম বেগম বলেন, কিনেছি তো। যা কেনার দরকার তার চেয়ে কম কিনেছি!
উল্লেখ্য, সরকার গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিমের সর্বোচ্চ দাম ১২ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬২ থেকে ৬৫ টাকা এবং আলুর দাম ৪৫ টাকা বেঁধে দেয়।
আড়তে প্রতি ১০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকা। তবে বাছাই করা ছোট সাইজের ১০০ ডিমের দাম ১২০০ টাকা। ডিমের দাম বাড়ল কেন বলতে নারাজ মিরপুর-১১ নম্বরের পাইকারি বিক্রেতা ইমরান আলী। তিনি বলেন, বাড়লো কেন ফার্মে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন!
আরেক আড়তদার আশরাফুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির কারণে দাম বেড়েছিল। আজ থেকে বৃষ্টি না হলে কাল থেকে আবার ডিমের দাম কমবে।
বাজারে পণ্যের মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার শর্ত কোনো বিক্রেতা মানছেন না। মিরপুর ১৩, ১৪ সিটি কর্পোরেশনের বাজারেও একই অবস্থা। দুই একটি বাজারে মূল্য তালিকার বোর্ড দেখা গেলেও তাতে আপডেট নেই।
মিরপুর ১১ নম্বরের পাইকারি বাজারে ১১টি আড়তের মাত্র একটিতে মূল্যতালিকার আপডেট দেখা গেছে। তাছাড়া কোনোটি ৬ তারিখের, কোনোটি ৭ তারিখের। ৪ তারিখের বিক্রয় মূল্যও দেখা গেলো এক দোকানে।
এ বিষয়ে জননী এন্টারপ্রাইজের শামসুল হক জানালেন, তালিকার আলু না থাকার কারণে আপডেট করিনি। একই অজুহাত দেখালেন শরিয়তপুর বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার।
এসব পাইকারি বাজারে দেখা যায়, দেশি ছোট্ট পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯২ টাকা কেজি দরে। ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ দোকান ভেদে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। মুন্সিগঞ্জের আলু পাইকারি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা আলু ৪২ টাকা।
মুন্সিগঞ্জ বাণিজ্যালয়ের মালিক আমিরুল হক বলেন, পেঁয়াজের দাম বেশি কী দেখছেন! কাল পরশু আমদানি না হলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে।
দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়বে কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করেন, চাহিদামতো পেঁয়াজ কি আছে?
পাইকারি কাঁচামরিচ বিক্রেতারাও একই কথাই জানালেন। বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচ যথেষ্ট না আসায় দাম বেড়েছে দাবি তাদের। আগের দুই দিন দাম আরও বেশি ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২৩
জেডএ/এমজেএফ