ঢাকা: দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় এখনও কম, তবে সম্ভাবনা অনেক। দেশে চামড়া ক্ষেত্র যেমন বড়, এখানে মান সম্পন্ন জুতাও তৈরি হচ্ছে।
প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ( ১৩ অক্টোবর) চামড়ার জুতা, চামড়া পণ্যের উদ্যোক্তা, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও সোর্সিং পার্টনারদের পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে।
মেলায় ৬৪টি স্টল রয়েছে। স্টলে রপ্তানিমুখী জুতা, চামড়ার বিভিন্ন পণ্য-ব্যাগ, পোশাক, প্রদর্শন করা হচ্ছে। এসব স্টলে বিদেশি ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে পণ্য দেখছেন।
বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বলছেন, মেলাতে যতটা ক্রয়াদেশ পাওয়া যাবে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমাদের সক্ষমতা বিদেশি ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরতে। আমাদের সম্ভাবনা ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরতে পারলে আমরা তার সুফল পাবো, পাচ্ছিও। আগের তিনটি মেলাতে আমরা চামড়ার জুতা, চামড়ার পণ্যের নতুন নতুন ক্রেতা পেয়েছিলাম। তাদের মাধ্যমে আমরা আমাদের পণ্যের মান যাচাই করতে পেরেছিলাম, এবারও পারব বলে আশা করছি।
জাপানে জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ফুটমার্ক ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরুল আহসান জানান, তার প্রতিষ্ঠান শতভাগ রপ্তানিমুখী। তারা চামড়াকে প্রক্রিয়াজাত করে ওয়াটারপ্রুফ (পানি নিরোধক) জুতা তৈরি করছে। পানিতে ছয় ঘণ্টা ভিজলেও চামড়ার ক্ষতি হবে না। বাংলাদেশে হাতেগোনা দুয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের পণ্য উৎপাদন করে। এ জুতার বিদেশে চাহিদা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ পণ্য হয়, তা অনেক দেশই তা জানে না।
মেলায় চীনা ক্রেতারা বেশ মনোযোগ দিয়ে ওয়াটারপ্রুফ জুতা দেখেছে। তারা শিশুদের জন্য এ জুতা চায়। মেলায় এভাবে নিজেদের সক্ষমতা দেখাতে পারছেন বলে জানান ইমরুল আহসান ।
পশ এর স্টলে বিদেশি ক্রেতারা তাদের জুতার আউটসোল দেখছে। এসব বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির আউটসোল পছন্দ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি গত বছরও মেলায় অংশগ্রহণ করেছিল; সাড়া পেয়েছিল। এবারও তাদের পণ্যের মান ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরতে পারছে।
জুতার বিভিন্ন রকম বোতাম বেল্ট তৈরি করে টেক্স ফাস্টেনার। তারাও প্রদর্শনীতে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি জিন্সের কাপড়ের বোতামসহ অন্যান্য কিছু বানালেও এ প্রদর্শনীতে এসেছে চামড়ার জুতা, ব্যাগ বেল্ট তৈরি ও সরবরাহের জন্য।
প্রতিষ্ঠানটির সেলস ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, চামড়ার পণ্যের বাজারে আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। চামড়ার জুতা ও চামড়াজাত পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারব।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় দেশ। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগ আসে তৈরি পোশাক থেকে। চামড়া শিল্পের মতো হাঁটি হাঁটি পা পা করে শুরু হয়েছিল তৈরি পোশাক শিল্প। বর্তমানে পরিমাণে কম হলেও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পণ্য চামড়া ও চাপড়াজাত পণ্য। আগামীতে চামড়াকে ওই জায়গাতে নিয়ে যেতে হলে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-য়ের আয়োজন বলে জানালেন লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মন্জুর।
তিনি দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক মার্কেটে সম্ভাবনার পাশাপাশি বেশ কিছু সমস্যাও তুলে ধরে বাংলানিউজকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। এটি করা গেলে জুতা ও চামড়া পণ্যের নতুন দুয়ার খুলে যাবে। কিন্তু আমাদের সাপ্লাই চেনের যেসব সমস্যা রয়েছে, এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। সাভারের সিইটিপি আমরা এতদিনেও ঠিক করতে পারলাম না। রপ্তানি করার ক্ষেত্রে লিড টাইম আমাদের অন্যতম সমস্যা। বন্দর ও কাস্টমসের পেছনে আমাদের বড় সময় ব্যয় করতে হয়। এটি কমিয়ে আনতে হবে। রপ্তানিতে প্রণোদনা দেওয়া ক্ষেত্রে যে অযথা সময়ক্ষেপণ করা হয় তা সহজীকরণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২৩
জেডএ/জেএইচ