ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ব্যবসায়ীরা কি এতই খারাপ যে সবার সবক শুনতে হবে?’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
‘ব্যবসায়ীরা কি এতই খারাপ যে সবার সবক শুনতে হবে?’

ঢাকা: ‘যেখানে যাই ব্যবসায়ীদের সবাই শুধু শেখায়। আ রে ভাই, এই যে ১৮ কোটি মানুষ, এরা কি এমনিই খায়? কেউ উপোস আছে নাকি? কিন্তু ব্যবসায়ীদের এমন শিক্ষা দেন, উদাহরণ দেন, আমরা নবীর কথা বলি, অমুকের কথা বলি, তমুকের কথা বলি।

আমরা (ব্যবসায়ী) কি এতই খারাপ এদেশে, যে আমাদের সবার সবক শুনতে হবে? আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই। ’

কথাগুলো বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিনের। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, আমি মনে করি এদেশের ব্যবসায়ীরা স্মার্ট, ভালো এবং সৎ মানুষ। দুয়েকজন খারাপ থাকতে পারে। এমন কোনো শ্রেণি-পেশা নেই যেখানে খারাপ নেই। সবার মধ্যে দুই-চার-দশজন খারাপ মানুষ পাবেন। তাদের জন্য আইন আছে, আদালত আছে, কেরানীগঞ্জে জেলখানা আছে, সেখানে যাবে- এতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু লট ধরে ব্যবসায়ীদের বলবেন- এটা বন্ধ করুন। এ দেশের ব্যবসায়ীরাই ১৮ কোটি মানুষকে খাইয়ে-পরিয়ে রেখেছে। কারও পকেট থেকে জোর করে ব্যবসায়ীরা টাকা নেয় না, পণ্য দিয়েই টাকা নেয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত। এখন আমাদের সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। সমাধান হলো- পণ্য উৎপাদন, আমদানি এগুলোর সঠিক পরিসংখ্যান চাই, ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে আমাদের বেকায়দায় পড়তে হয়; সেটি ঠিক করতে হবে, মনিটরিং করতে হবে। এই কাজগুলো না করে আমরা যতই কথা বলি রমজান মাসে মার্কেট ঠিক রাখা যাবে না।

ভোগ্যপণ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দশটা ভোগ্যপণ্য দশটা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কেউ কারও কর্তৃত্ব ছাড়তে চায় না। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলে আমরা ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি, মুরগিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এত ভালো কাজ করছে, সব স্বয়ংসম্পূর্ণ। আবার কৃষি মন্ত্রণালয় এসে বলবে, আমি চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ডালে স্বয়ংসম্পূর্ণ, কৃষিতে বাম্পার ফলন ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার এনবিআর বলবে, ট্যাক্স-ভ্যাট কমালেই কি পণ্যের দাম কমে যাবে। অর্থাৎ যার যার জায়গায় উনি সম্রাট। এভাবে চললে আমরা কোনোভাবেই ভোগ্যপণ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো না। এজন্য প্রয়োজন একটি ভোগ্যপণ্যের মন্ত্রণালয়। আমরা সবাই মিলে এফবিসিসিআইর মাধ্যমে দাবি করি, আমরা ভোগ্যপণ্য মন্ত্রণালয় চাই। যার মাধ্যমে আমরা যেকোনো সমস্যা এক মন্ত্রণালয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করতে পারবো।

সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন৷ তারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণসহ তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এজন্য দ্রুত এলসি খোলার ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন পণ্যের ট্যাক্স কমানো, সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখার পরামর্শ দেন।

এ সময় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা, ভোজ্যতেল মিলমালিকদের সংগঠনের সভাপতি ও সিটি গ্রুপের পরামর্শক অমিতাভ চক্রবর্তী, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান, বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি বিকাশ চন্দ্র সাহা, তাজা ফল আমদানিকারকদের সংগঠনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার, বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বশির উদ্দিন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি মাহমুদুল হাসানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।