ব্রাহ্মণবাড়িয়া: শীত মানেই পিঠা-পুলিসহ নানা রকম মুখরোচক খাবারের স্বাদ। আর এ মৌসুমকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উৎপাদিত হচ্ছে সুস্বাদু রসালো গুড় “লালি”।
লালি গুড়ের জন্য প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী উপজেলা বিজয়নগর। শীত মৌসুমে উপজেলার বিষ্ণুপুর, দুলালপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করেন আখের লালি গুড় তৈরি করে। আখের রস চুলায় তিন/চার ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় লালি গুড়।
এক কানি (এক কানি = ৩৯ শতাংশ) জমির আখ দিয়ে ১৭/১৮ মণ লালি তৈরি হয়। মৌসুমি এ পেশার সঙ্গে উপজেলার ১০/১২ জন উদ্যোক্তা জড়িত। আর তাদের সঙ্গে কাজ করেন শতাধিক কৃষক। স্বাদে ও গুণে অনন্য হওয়ায় প্রতিদিন ভোজনরসিকরা ছুটে আসছেন লালি গুড় কিনতে। প্রতি কেজি লালি বিক্রি হচ্ছে ১৪০/১৫০ টাকা দরে। সেই সঙ্গে আখের রস খেতেও ভিড় করছেন অনেকে।
শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাই নয়, আশপাশের জেলাগুলোতেও রয়েছে এ গুড়ের চাহিদা।
লালি গুড় তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা জানান, বাবা-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই যুগ যুগ ধরে তারা আখের লালি তৈরি করে আসছেন। তবে দিন দিন আখ চাষ কমে যাওয়ায় লালির চাহিদা থাকলেও উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তবে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য বছরে ৪ মাস এ লালি তৈরি করা হয়। প্রতিদিন ৭০-৮০ লিটার লালি উৎপাদন করা হয়। লালি বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। বাড়ি থেকেই পাইকার ও দূর দূরান্তের লোকজন এসে কিনে নিয়ে যান। প্রতি মৌসুমে তাদের পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয় আর লাভ হয় লাখ দেড়েক টাকা।
লালি কিনতে আসা কয়েকজন বলেন, বাজারের লালিতে প্রায়ই ভেজাল মেশানো থাকে। কিন্তু এখানকার লালি নির্ভেজাল এবং প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হয়। ফলে এর চাহিদা অনেক বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা আখের রসের লালির জন্য বিখ্যাত। সুস্বাদু ও নির্ভেজাল হওয়ায় এর চাহিদা জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে। কৃষকরা এখানে বেশির ভাগ স্থানীয় জাতের আবাদ করেন। ফলে আখের রসের পরিমাণ কম হয়। আমরা বাংলাদেশ ইকো গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, যাতে নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষকরা লাভবান হন। আশা করছি, আগামী বছর থেকে সেটা সম্ভব হবে। নতুন জাতের আখে রসের পরিমাণ বাড়বে, ফলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন। এ বছর প্রায় ২ কোটি টাকার লালি গুড় বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৪
এসআই