ঢাকা: ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি পাওয়ার মতো অনেক পণ্য থাকার পরও বাংলাদেশ এসব সম্পদ রক্ষার প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে এবং জিআই পণ্যের সুরক্ষায় প্রয়োজন প্রগাঢ় সচেতনতাবোধ।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি (আইপি) ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত বাংলাদেশ আইপি ফোরাম ও সেন্টার অব এক্সিলেন্স বাংলাদেশের কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশি জিআই পণ্যের সুরক্ষা' শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ আইপি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও মেধাস্বত্ববিষয়ক আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিজবাহর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আইপি ফোরামের প্রধান নির্বাহী ও প্রাক্তন আইপি সচিব মনজুরুর রহমান, বাংলাদেশ আইপি ফোরামের ট্রাস্টি ও প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব মো. সানোয়ার হোসেন ও বাংলাদেশ অরগানাইজেশন ফর লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বোল্ড) সভাপতি কাজী মাহমুদ আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আইপি ফোরামের প্রধান নির্বাহী ও প্রাক্তন আইপি সচিব মনজুরুর রহমান বলেন, পৃথিবীর সব দেশে জিআই পণ্য আছে। এসব পণ্য চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হয়। এক- মাটি, দুই- জলবায়ু, তিন- পরিবেশ ও চার- দক্ষতা। একই প্রজাতির পণ্য বিভিন্ন দেশে উৎপন্ন হলেও কেবল ভৌগোলিক কারণে একটি অঞ্চলের সঙ্গে আরেকটি অঞ্চলের জলবায়ুর সঙ্গে লালিত হওয়ায় ভিন্নতা ও গুণাগুণে বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়। এ কারণে একটি অঞ্চলের জিআই পণ্যের সঙ্গে আরেকটি অঞ্চলের একই পণ্যের পার্থক্য থাকে।
তিনি বলেন, কোনো অঞ্চলের জিআই পণ্যের একক কোনো মালিকানা থাকে না। এটি একটি সমষ্টিগত জাতিগত পণ্য। সে কারণে কোনো বিশেষ অঞ্চলের সমবেত মানুষের সম্পদ হচ্ছে জিআই, যার পেছনে ঐতিহ্যের পাশাপাশি ৫০ বছরের বেশি সময় প্রয়োজন। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন জিআই সম্পর্কিত বিধি-বিধান না থাকায় আমরা দেশ এবং বিদেশে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্য প্রদর্শন, বিক্রয় ও প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছিলাম।
মনজুরুর রহমান বলেন, ২০১৩ সালে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন আইন ও ২০১৫ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন ও সুরক্ষা বিধিমালা প্রণয়ন করে সরকার। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের ২৮টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি অর্জন করেছি। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার মতো আমাদের আরও অনেক পণ্য রয়েছে। কিন্তু আমরা এই সম্পদ রক্ষার প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি। সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ আমাদের দুটি পণ্যের স্বীকৃতি নিয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে প্রয়োজন প্রগাঢ় সচেতনতাবোধ।
বাংলাদেশ আইপি ফোরামের ট্রাস্টি ও প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৬ সালে আমরা প্রথম আমাদের কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি পাই। একটি পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি পেতে হলে প্রথমে সে পণ্যের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তারপর সেই পণ্যের বিষয়ে জার্নাল তৈরি করতে হয়। এ রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করতে হয় যে গোষ্ঠী পণ্যটি তৈরি করে তাদের। কিন্তু আমাদের দেশে সেই সচেতনতা নেই। যেটি সরকারসহ অংশীজনদের দেখতে হবে। পাশাপাশি জিআই পণ্য প্রিমিয়ার মানের হওয়ায় এর দামও বেশি হয়, যার লভ্যাংশ পণ্যটি তৈরি করা গোষ্ঠীকে দিতে হবে। তাহলে জিআই পণ্য তৈরি ও স্বীকৃতির বিষয়ে আগ্রহ বাড়বে।
বাংলাদেশ অরগানাইজেশন ফর লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বোল্ড) সভাপতি কাজী মাহমুদ আহমেদ বলেন, জিআই পণ্য যেহেতু প্রিমিয়ার মানের হয়, তাই এসব পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ট্যাগ থাকা প্রয়োজন, যাতে এর সঠিক মূল্য পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশের জিআই পণ্যের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ট্যাগ থাকে না। যার কারণে আমরা সঠিক মূল্য পাই না। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের দেখতে হবে।
বাংলাদেশ আইপি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও মেধাস্বত্ব বিষয়ক আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিজবাহ বলেন, আমাদের ৭৩-৭৪টি পণ্য আছে যেগুলো জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। এগুলোকে জিআই স্বীকৃতি এনে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারসহ সবার। পাশাপাশি জিআই পণ্য যেহেতু একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থার সঙ্গে জড়িত, তাই সেই পণ্যের স্বীকৃতি অন্য দেশের নিয়ে যাওয়া অনৈতিক।
বাংলাদেশের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি অন্য দেশ কীভাবে নিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি সচেতনতা ও ফোকাসের অভাবে হচ্ছে। সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বপূর্ণ হয়, তাহলে আমরা আমাদের পণ্যগুলোর জিআই স্বীকৃতি এনে দেশকে লাভবান করতে পারব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
এসসি/আরএইচ