ঢাকা: বাজারের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ লাইন ঠিক রাখার তাগিদ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তিনি বলেন, বাজারে পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে না পারলে যত আইনই করেন বা থাকুক, তা কার্যকর করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে ‘দ্রব্যমূল্যে অস্থিরতা: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দৈনিক যুগান্তরের পঁচিশ বছর উদযাপন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়।
মসিউর রহমান বলেন, দেশে দোষ চাপানোর প্রবণতা বেশি। এখানে দোষ হলো- ব্যবসায়ীর, শিল্পপতির ও সরকারের। আর কারও দোষ নেই! এ ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সামনে কীভাবে সমস্যা থেকে উত্তরণ করা যায়, সেজন্য কাজ করতে হবে।
সংবাদপত্রে বিভিন্ন দেশের তুলনা করা হয়। বিভিন্ন দেশের তুলনা করার পাশাপাশি সে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও বাজার ব্যবস্থা তুলে ধরার পরামর্শ দেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বাজারে যে পণ্য ঢুকছে তা কিন্তু অবিক্রিত থাকছে না। কেউ আবার খালি হাতে ফিরছে না। এ দেশে কিন্তু দুর্ভিক্ষ বা খাদ্যের সংকট ছিল। তখন বাজারে টাকা দিলেও খাদ্য পাওয়া যেত না। সেখান থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি। আমাদের এখন চাল আমদানি করতে হয় না। মানুষের হাতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টাকা আছে।
বাজারে কখনো নজরদারি করে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজারের একটা সাপ্লাই চেইন আছে। এ সাপ্লাই চেইনে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ের প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, কৃষি পণ্যগুলো হার্ভেস্টিংয়ের সময় বেশি উৎপাদন হয়। তারপর ৩-৪ মাস উৎপাদন হয় না। এ সময় যদি আপনি এটাকে গুদামজাত না করেন…গুদামজাত করা ও মজুতদারি- এ দুটির মধ্যে যদি পার্থক্য নির্ধারণ না করতে পারি বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইভাবে আমদানি পণ্য আমরা যদি সিজনে না কিনে অফ-সিজনে কিনি আমাদের বেশি দাম দিতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তেল এবং চিনি এ দুটি পণ্যে আমরা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। আমাদের মতো একটা দেশে ১৭ কোটি মানুষকে আমদানি করে সরবরাহ করা বেশ কঠিন।
বিআইডএসের সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরী বলেন, মূল্যস্ফীতি ও অস্থিরতা আলাদা বিষয়। এর মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি বেশি হলে অস্থিরতাও বাড়ে, এটা ঠিক। সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা থাকলেও অস্থিরতা বাড়ে। এর সমাধানের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে কাজ করতে হবে। যাতে তাৎক্ষণিক সমাধানের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে সমাধান করা যায়।
তিনি এ সম্পর্কিত নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতি ঠিক করতে হবে। এটি ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। এটি সমাধান করা গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো যাবে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিলে আশা করছি লক্ষ্য অর্জন সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, এক এক ক্ষেত্রে এক এক তথ্য থাকে। তথ্যের এ বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। এছাড়া কৃষিপণ্য বা ভোগ্যপণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। যাতে তারা কোনো পণ্য রপ্তানি বন্ধ করলে তা আগে থেকে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি পণ্যের ভবিষ্যৎ বাজার দর নির্ধারণে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা যেতে পারে।
সরবরাহের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক থেকে শুরু করে তদারকিতে যতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের শক্তি বাড়ানোর পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দ্রব্যমূল্য বাড়লে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয় এবং দাম কমে গেলে ব্যবসায়ীদের কষ্ট হয়। এর মধ্যে অতি ধনী বা ধনী শ্রেণি এবং অতি দরিদ্র বা দারিদ্র্যসীমার নিচের লোকদের কোনো সমস্যা হয় না। এর কারণ হলো, যারা দরিদ্র তাদের লক্ষ্য থাকে টিসিবি আসবে কবে, বিধবা ভাতা পেল কি না, বয়স্ক ভাতা পেল কি না ইত্যাদি। আর যারা ধনী তারা যা চায় তাই পায়। এজন্য তাদের চিন্তা নেই। সমস্যা হলো, মাঝখানের ১০ কোটির বেশি মানুষের। যারা মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
গোলটেবিল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম। যুগান্তরের প্রকাশক ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের সভাপতিত্বে এতে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) রিসার্চ ফেলো ড. বদরুন্নেসা আহমেদ। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার প্রমুখ অংশীজন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪
জেডএ/এইচএ/