ঢাকা: ব্যাংক থেকে যারা টাকা নিয়ে ফেরত দেয় না, বিদেশে পাচার করে—এমন ঋণখেলাপিদের নাম গণমাধ্যমে প্রচারের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেন, খেলাপি ঋণের জন্য ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের দোষ দেওয়া হয়, নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের দোষ দেওয়া হয়।
রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটলে ডিসিসিআই, সমকাল ও চ্যানেল২৪ আয়োজিত প্রাকবাজেট আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহামুদ আলী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতাসাধন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দেশের আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আমদানির বিকল্প শিল্পপ্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডকে এ বছর বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা আশা করি, এই পদক্ষেপগুলো বেসরকারি খাতের প্রসারসহ আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগামী জাতীয় বাজেট বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক বাজেট হবে।
যারা ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি, বিদেশে পাচার করেছে; নিরীক্ষক বসিয়ে বিষয়টি বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমে তাদের নাম প্রচারের প্রস্তাব করেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ।
বিশেষ অথিতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ঋণের বাড়তি সুদের কারণে নতুন করে অনেক খেলাপি হবে। কম হারে ঋণ নিয়ে বেশি হারে সুদ দেওয়ায় বাড়তি ঋণখেলাপি হবে।
এ কে আজাদ বলেন, ব্যসায়ীরা এক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয় আরেক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছে। এভাবে চলতে থাকলে ঋণের বোঝা আরও বাড়বে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে সক্ষম অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি দরকার। এজন্য অ্যাসেট কোম্পানির আইন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
তিনি বলেন. এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করা নিয়ে যেসব সংশয়ের কথা বলেন, এটা হঠাৎ করে কোনো বিষয় নয। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যালোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে এটা করা হবে। এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের রক্ষা করে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে এ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
আলোচনায় আয়কর ও মূসক, আর্থিক খাত, শিল্প ও বাণিজ্য এবং অবকাঠামো সম্পর্কিত প্রস্তাব তুলে ধরেন ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
আয়কর ও মূসক সম্পর্কিত প্রস্তাব
আগামী বাজেটে আয়কর আইন-২০১৩ এর ধারা ১৬৩ (২)(খ) হতে ধারা ৯০ অব্যাহতি দেওয়া; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিল এবং অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল হতে প্রাপ্ত আয়কে সরকারি কর্মচারীদের অনুরূপ করমুক্ত ঘোষণা করতে হবে; উপযুক্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন সাপেক্ষে সকল ব্যবসায়িক খরচের সম্পূর্ণ অংশ বিয়োজনযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে; ১৬২(১) ধারায় কর দিবসের পূর্বে রিটার্ন দাখিল করা না হইলে ৫০ শতাংশের অধিক হারে সুদ গ্রহণের বিধান বাতিল করতে হবে; মূসক আইনের ধারা ৪৬ (২) (ক) এ ধারা থেকে প্রত্যাহার করে সকল উপরকরণ ব্যয়ের জন্য রেয়াতযোগ্য প্রদান করতে হবে।
আর্থিক খাত সম্পর্কিত প্রস্তাব
মন্দ ঋণ কমানোর জন্য আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আরবিট্রেশন আইন বাস্তবায়ন ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দায়িত্ব প্রদান করা; বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সিএমএসএমই ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের অবশিষ্ট ফান্ড সহজ শর্তে বিতরণ; বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্য শেয়ারবাজারের মাধ্যমে প্রিমিয়াম সরকারি বন্ড, অবকাঠামো বন্ড ও অন্যান্য কার্যক্রম চালু করতে হবে।
অবকাঠামো সম্পর্কিত প্রস্তাব
আকর্ষণীয় অবকাঠামো প্রকল্পগুলো পিপিপির অধীনে বাস্তবায়ন এবং প্রকল্পগুলো অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ গ্রহণ। দীর্ঘমেয়াদী বহু, অবকাঠামো উন্নয়নে বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করণে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদান করা এবং শিল্পক্ষেত্রে সাশ্রয়ী ও নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ