ঢাকা: পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বসুন্ধরা গ্রুপ তেল, ময়দা, সেমাই, হলুদ, মরিচসহ মোট ৩১টি ভোগ্যপণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি শুরু করেছে। রাজধানীর ছয়টি স্পটসহ সারা দেশের ২০টি স্থানে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে মিল গেইটের দামে পণ্যগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারদরের চেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে এসব নিত্যপণ্য পেয়ে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল সংলগ্ন ফটকের সামনের সড়কে ট্রাকে করে এই পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান।
‘বসুন্ধরার পণ্য, ভোক্তার জন্য’ স্লোগানকে সামনে রেখে ‘ট্রাক সেল’র মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে নিত্যপণ্যগুলো বিক্রি করছে বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর শুরু করা আমাদের এই কার্যক্রম আরও ব্যাপকতার সঙ্গে এই পবিত্র রমজান মাসেও আমরা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সামনের বছর আমরা দেশজুড়ে ৬৪টি জেলায় সাশ্রয়ী মূল্যে ‘ট্রাক সেল’ কার্যক্রম চালু করতে পারবো বলে আশা রাখি।
উদ্বোধন শেষে সাফিয়াত সোবহান নিজেই কিছু পণ্য ক্রয় করেন এবং উপস্থিত জনসাধারণের মাঝে বিতরণ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের (সেক্টর-এ) চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার ক্যাপ্টেন (অব.) শেখ এহসান রেজা, বসুন্ধরা গ্রুপের (সেক্টর-এ) ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং সিওও এম এম জসীম উদ্দিন, বসুন্ধরা গ্রুপের (সেক্টর-এ) সাপ্লাই চেইন ডিভিশনসের সিওও আব্দুস শুক্কুর, বসুন্ধরা ফুড ডিভিশনসের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার বেলাল হোসেন, বসুন্ধরা গ্রুপের (সেক্টর-এ) প্ল্যানিং এবং পাবলিক রিলেশনসের হেড অব স্ট্র্যাটেজি জাকারিয়া জালাল প্রমুখ।
বসুন্ধরা ফুড ডিভিশনস এবং বসুন্ধরা এলপিজির হেড অব সেলস রেদোয়ানুর রহমান বলেন, প্রতি বছর রমজানের আগে থেকেই বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করে, এতে করে ভোক্তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পেতে বেশ কষ্ট হয়। বসুন্ধরা ফুড ডিভিশনস গত বছর থেকেই সীমিত আকারে ‘ট্রাক সেল’ কার্যক্রম শুরু করে। ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে এই বছর কিছুটা ব্যাপক আকারে বসুন্ধরা এলাকা, কারওয়ান বাজার, সচিবালয় ভবনের সামনে এবং মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ দেশের মোট ২০টি স্থানে আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে ‘বসুন্ধরার পণ্য, ভোক্তার জন্য’ স্লোগানে এ কার্যক্রম শুরু করেছি। আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশক্রমে সামনের বছর আমরা সারা দেশেই এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। এই বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তর বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক উৎসাহ দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে।
তিনি আরও বলেন, ট্রাক সেলে সবাইকে একটি বিষয় অনুরোধ করা হচ্ছে, কেউ যেন একের অধিক পণ্য (মজুতের উদ্দেশ্যে) না কেনেন। যাতে অন্য ভোক্তাকে আমরা কেনার সুযোগ করে দিতে পারি। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ একটি ক্যাটাগরি থেকে একটি পণ্যই কিনতে পারবেন। যদি তেল কিনতে চান, তাহলে তিনি তেলের যে কোনো একটি বোতল (১ অথবা ২ অথবা ৫ লিটার) নিতে পারবেন। আটা, মশলা, চা, চিনিগুঁড়া চালসহ সব পণ্যই এই নিয়মে কিনতে হবে। অসাধু কেউ যেন অতিরিক্ত পণ্য কিনে অন্যদের বঞ্চিত করতে না পারে, তার জন্য এই নিয়মে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
কোথায় কোথায় বিক্রি
এ বছর রাজধানীর ছয়টি স্থানে ও ঢাকার বাইরে ১৪টি জেলায় ট্রাক সেলের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। রাজধানীর ছয় স্থান হলো- সচিবালয়ের সামনে, কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনের সামনে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল সংলগ্ন ফটক, মোহাম্মদপুরের লিমিটেড এলাকা, মিরপুর ও উত্তরা বিজিবি মার্কেটের সামনে।
ঢাকার বাইরে গাজীপুরের জয়দেবপুর, নারায়ণগঞ্জের সদর, ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী স্কুল গেইট, নরসিংদীর বেলানগর, টাঙ্গাইলের নিরালা মোড়, কুমিল্লার কান্দিরপাড়, চট্টগ্রামের সিএনবি কলোনি মোড়, সিলেটের বন্দরে, বগুড়ার সাতমাথা জিলা স্কুল গেইট, রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়, রংপুরের পাবলিক লাইব্রেরি গেইট, খুলনার ডাকবাংলা মোড়, ফরিদপুরের চকবাজার হেলিপ্যাড ও বরিশালের চৌমাথা হাতেম আলী কলেজের সামনে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
কোন পণ্যের কত দাম
ট্রাক সেলের মাধ্যমে এক লিটার সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকার পরিবর্তে ১৫৫ টাকা, দুই লিটার সয়াবিন তেল ৩২৬ টাকার পরিবর্তে ৩১০ টাকা, তিন লিটার সয়াবিন তেল ৪৮৮ টাকার পরিবর্তে ৪৬৫ টাকা, পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৮০০ টাকার পরিবর্তে ৭৬৫ টাকা, আট লিটার সয়াবিন তেল ১২৮০ টাকার পরিবর্তে ১২২৫ টাকা, এক লিটার সরিষার তেল ৩৬০ টাকার পরিবর্তে ২৬৫ টাকা, এক কেজি আটা ৬৫ টাকার পরিবর্তে ৪৮ টাকা, এক কেজি ময়দা ৭৫ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা, ২৫০ গ্রাম সুজি ২৫ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা, এক কেজি মসুর ডাল ১৫০ টাকার পরিবর্তে ১৪০ টাকা, এক কেজি চিনিগুঁড়া চাল ১৮০ টাকার পরিবর্তে ১৪১ টাকা, ২০০ গ্রাম সেমাই ৩০ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা, ২০০ গ্রাম লাচ্ছা সেমাই ৫০ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকা, ইনস্ট্যান্ট মাসালা নুডলস (৮ প্যাক) ১৪০ টাকার পরিবর্তে ১১০ টাকা, ১৫০ গ্রাম স্টিক এগ অ্যান্ড চিকেন নুডলস ২৫ টাকার পরিবর্তে ২২ টাকা, ৩০০ গ্রাম পান্ডা অথেনন্টিক চাইনিজ নুডলস ৬০ টাকার পরিবর্তে ৪৮ টাকা, ২০০ গ্রাম সি-শেল পাস্তা ৫০ টাকার পরিবর্তে ৩৭ টাকা, ২০০ গ্রাম ম্যাকারনব অ্যাসরটেড ৪৫ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকা, ৫০০ গ্রাম হলুদের গুঁড়ার প্যাকেট ২৪০ টাকার পরিবর্তে ১৭৫ টাকা, ৫০০ গ্রাম মরিচের গুঁড়ার প্যাকেট ৪১০ টাকার পরিবর্তে ৩১৫ টাকা, ৫০০ গ্রাম ধনিয়ার গুঁড়ার প্যাকেট ২৪০ টাকার পরিবর্তে ১৭৫ টাকা, ৫০০ গ্রাম জিরার গুঁড়ার প্যাকেট ৯০০ টাকার পরিবর্তে ৭৭৫ টাকা, ২০০ গ্রাম হালিম মিক্স ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, ১০০ গ্রাম মুরগির মসলা ৭৮ টাকার পরিবর্তে ৬২ টাকা, ৪০ গ্রাম বিরিয়ানি মসলা ৬০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, ১০০ গ্রাম গরুর মাংসের মসলা ৮৪ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা, ৫০ গ্রাম কাবাব মসলা ৯০ টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকা, ৫০ গ্রাম বোরহানি মসলা ৪০ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা, ৫০ গ্রাম চটপটি মসলা ৪০ টাকার পরিবর্তে ৩২ টাকা, ২০০ গ্রাম বসুন্ধরা চা (প্রিমিয়াম) ১১০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, ১০০ গ্রাম বসুন্ধরা প্রিমিয়াম টি ব্যাগ ৯০ টাকার পরিবর্তে ৬৫ টাকায় বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
মোহাম্মদপুর এলাকায় ট্রাক সেল
এদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকার সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বসুন্ধরা গ্রুপের এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, সব কোম্পানি যেন বসুন্ধরা গ্রুপের মতো উদ্যোগ নেয়, সাশ্রয়ী মূল্যে ভোক্তাদের সেবার কাজ সম্প্রসারণ করে।
বসুন্ধরা গ্রুপের বিপণন বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে। কম আয়ের, খেটে খাওয়া মানুষ যেন সাশ্রয়ী দামে পণ্য পায় সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিল গেটের দামে ভোক্তারা পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ডিএসএম পিযুস সাহা, ব্র্যান্ড এক্সিকিউটিভ মাহমুদুল হাসান নাদিম, স্পেশাল সেলস মনিটরিং ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
‘বসুন্ধরার এ উদ্যোগে মানুষের উপকার হবে’
দুপুর ১২টায় সচিবালয়ের পাশে খাদ্য অধিদপ্তরের সামনে সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম-সচিব মো. দাউদুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের এজিএম কাজী মনিরুজ্জামান মনি, ডিএসএম (সেলস) মো. আল আমিন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (স্পেশাল সেলস মনিটরিং) মো. রবিউল হক ভূঁইয়া, স্পেশাল সেলস মনিটরিং জুয়েল আহমেদ, এএসএম রোকনুজামান, এএসএম নাজমুল করিম প্রমুখ।
তখন যুগ্ম-সচিব মো. দাউদুল ইসলাম বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু দিন আগে রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে একটি মিটিং হয়েছিল। সেখানে আমাদের প্রতিমন্ত্রী বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করেন, রমজান মাসে গরিব মানুষকে সহায়তা করার লক্ষ্যে সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য বিক্রি করার জন্য। তখন তারা সাড়া দিয়েছিলেন। তারই অংশ হিসেবে আজ বসুন্ধরা গ্রুপ সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। এটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। এতে মানুষের উপকার হবে। আমরা স্বাগত জানাই।
‘সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রিতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে’
কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনের সামনে বিকেল ৩টায় এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। এসময় তিনি বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বসুন্ধরার এই উদ্যোগের ফলে আশা করছি আমাদের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বসুন্ধরার এ কার্যক্রমের ফলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। ’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের এজিএম কাজী মনিরুজ্জামান মনি, ডিএসএম মো. আল আমিন, টেরিটরি সেলস ম্যানেজার কামরুজ্জামান খান রবিন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২৪
ইএসএস/এইচএ/