ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

একীভূত হচ্ছে না ন্যাশনাল ব্যাংক: নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৪
একীভূত হচ্ছে না ন্যাশনাল ব্যাংক: নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান

ঢাকা: একীভূত হচ্ছে না বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা মূলধন সরবরাহ ও খেলাপি ঋণ আদায়ের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংককে আবারও ঘুরে দাঁড় করানো হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির পুনর্গঠিত বোর্ডের চেয়ারম্যান আলহাজ খলিলুর রহমান।

তিনি বলেন, যারাই ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এই ঋণের কোনো মাপ নেই, ফেরত দিতে হবে।

সোমবার (৬ মে) পুনর্গঠিত ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খলিলুর রহমান। রাজধানীর বাংলামোটরে  ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

খলিলুর রহমান বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের মূলধনে শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করা হবে। এছাড়া পরবর্তীতে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন সংগ্রহ ক্যাম্পেইনের ও প্রকল্পের মাধম্যে আমানত সরবরাহ করা হবে। এতে করে ন্যাশনাল ব্যাংকের চলমান তারল্য সংকট নিরসন হবে আশা করছি। এছাড়া মন্দ ঋণ পুনরুদ্ধারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মন্দ ঋণ পুনরুদ্ধারে কাউকেই কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছি, অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে আমরা ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত করতে রাজি নই। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সময় দিয়েছে। আমরা যাতে তারল্য সংকট নিরসন করতে পারি, সেই চেষ্টাই করব।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরও বলেন, নতুন পরিচালনা পর্ষদ ন্যাশনাল ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করতে ও গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে নিরলসভাবে কাজ করবে। বিভিন্ন সূচকে ব্যাংকের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনতেও কাজ করবে বর্তমান পর্ষদ।

এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই সংবাদ সম্মেলন শেষ করা হয়।

ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমানে ২২১টি শাখা, ৬৫টি উপশাখা, দেশে ভেতরে ২টি ও দেশের বাইরে ৪টি সাবসিডিয়ারি, জিসিসি অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রে ২টি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা চুক্তিসহ দেশের নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) এবং রেটিং প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকটি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে ব্যাংকটিতে ২০ লাখের অধিক আমানতকারী ও প্রায় ১ লাখ ঋণগ্রহীতা আছে। বিদেশ থেকে বৈধ পথে ও নিরাপদে টাকা প্রেরণের লক্ষ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকই সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। এছাড়া কৃষি খাতের উন্নয়নেও ন্যাশনাল ব্যাংকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ক প্রভাবমুক্ত দক্ষ কর্মীরা পরিচালনা করে সমস্যা কাটিয়ে উঠবে বলে জানান নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান।

১৯৮৩ সালে প্রথম দেশীয় মালিকানায় বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল ব্যাংক। ঋণ বিতরণসহ নানা অনিয়ম, বিধি-বিধান ভেঙে ঋণ অনুমোদন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করায় গত বছর ২১ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পাঁচ মাসের মধ্যে আবারও ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয় বলে জানানো হয়। আর এই নতুন পর্ষদ গঠনের পরই সোমবার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বর্তমান পর্ষদ পুনর্গঠনের আগে পদত্যাগ করা পরিচালকরা হলেন—বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, পারভীন হক সিকদার, ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ও সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—ব্যাংকটির উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রতিনিধি পরিচালক লে.জে মো. সফিকুর রহমান (অব), প্রতিনিধি পরিচালক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক বাবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজুল করিম, ব্যবসায়ী ও প্রতিনিধি পরিচালক এরশাদ মাহমুদ, প্রতিনিধি পরিচালক অ্যাডভোকেট এহসানুল করিম, প্রতিনিধি পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ কে এম তফাজ্জল হক। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ড. রত্না দত্ত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হদা উপস্থিত ছিলেন।

এরমধ্যে রিয়াজুল করিম কেওয়াই স্টিলের প্রতিনিধি, এরশাদ মাহমুদ স্টিচেস  অ্যান্ড ওয়েব ফ্যাশন, আহসানুল হক সুন্দরবন কনসোর্টিয়াম ও তোফাজ্জল হক ইস্ট-কোস্ট হোল্ডিংসের প্রতিনিধি বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।