ঢাকা: ডলারের দাম বাড়ায় প্রবাসী আয় প্রবাহ বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দাম বাড়ানোর পর দুদিনেই তার লক্ষণ দেখাও গেছে।
গত ৮ মে প্রবাসী আয়ে ডলারে দাম বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে ১১০ টাকা দরে প্রবাসী আয়ের ডলার পেতেন প্রবাসীদের দেশে থাকা স্বজনরা। পাশাপাশি আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা পেতেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন দামের ফলে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১১৭ টাকার সঙ্গে ২ দশমিক ৯২ টাকা প্রণোদনাসহ মোট ১১৯ টাকা ৯২ পয়সা পাচ্ছেন। এর ফলে প্রবাসীরা বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। ইতোমধ্যে তার লক্ষণ দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, প্রবাসী আয়ের ডলারে দাম ১১০ টাকা থাকাকালীন চলতি ১৩ মে পর্যন্ত প্রতিদিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন চার কোটি ৯০ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। ৮ মে ডলারে দাম ১১৭ টাকা হওয়ার পর প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের পরিমাণ বেড়ে যায়। পরের সপ্তাহে প্রবাসীদের গড়ে প্রতিদিন ডলারের পাঠানোর পরিমাণ বেড়ে ৯ কোটি ৫২ লাখ ৩৭ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়।
এক-দুই দিনে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের চিত্র দিয়ে প্রবাসী আয় প্রবাহ না বোঝা গেলেও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর ডলারের দাম বাড়ার ফলে প্রবাসীরাও খুশি।
এ বিষয়ে রাজধানী ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা রাশিদা বেগম জানান, তার স্বামী ইতালিতে থাকেন। গত মাসে যে টাকা স্বামী পাঠিয়েছেন; ডলারের দাম বাড়ার ফলে আনুপাতিক হারে এ মাসের মাঝামাঝিতে টাকা কিছুটা বেশি পেয়েছি।
ডলারের দাম বাড়ায় রাশিদাও বেশ খুশি।
তিনি বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম বেড়েছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে তাতে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের কিছুটা ব্যালেন্স হয়েছে।
ডলারের দাম বাড়ায় প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রবাহ বাড়বে বলেন মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নেওয়ার ফলে বাজারে ডলারের দাম প্রায় এক দামে চলে এসেছে। এতে প্রবাসী আয় দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সুবিধা পাচ্ছে। প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি করে টাকা পাঠাবে। এটা একটা ভালো খবর।
তিনি বলেন, যারা প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন তার বিপরীতে যদি প্রবাসীদের একটি ফরেন অ্যাকাউন্টস খোলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। আর তা থেকে যদি ইন্টারেস্ট পাওয়ার সুবিধা করে দেওয়া যায় তাহলে প্রবাসী আয় আরও বাড়বে; যেমন ভারতে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে করা হয়। বাংলাদেশে বিকাশ, নগদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাপ চালুর মাধ্যমে আরও বেশি প্রবাসী আয় আনতে পারে। ভারত যেমন ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেসের মাধ্যমে প্রবাসী আয় সহজেই দেশে আনছে, বাংলাদেশও এমন করতে পারে। সহজে যদি মানুষ টাকা পাঠাতে পারে তাহলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বেড়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের পরই দ্বিতীয় প্রধান খাত হলো প্রবাসী আয়। এই প্রবাসী ও প্রবাসী আয় নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, বিদেশে বাংলাদেশের জনশক্তি চাহিদা রয়েছে। বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আহরণ করতে না পারা যেমন সমস্যা, তার চেয়ে বড় সমস্যা দক্ষ কর্মী পাঠাতে না পারার কারণে বিদেশে লোক পাঠানোর সুবিধা পুরোপুরি ঘরে তোলা যায় না। একই জনবল পাঠিয়ে যে হারে প্রবাসী আয় ভারত বা ফিলিপাইন আহরণ করে বাংলাদেশ সে হারে আনতে পারে না।
দেশে প্রবাসী আয় আসার ক্ষেত্রে ডলারের দাম বৃদ্ধি বা বেশি বেশি মানুষ পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত ও ভাষা জ্ঞান দিয়ে পাঠাতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সাবেক উপাচার্য ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় শ্রম বাজার মধ্যপ্রাচ্যে। এসব দেশের ভাষা আরবি। বাংলাদেশ থেকে যেসব মানুষ বিদেশে যায় তারা ভাষাগত সমস্যায় পড়েন। সমস্যা আয় রোজগারেও প্রভাব ফেলে, কম বেতন পান তারা। দেশের যেসব কওমি মাদরাসা আছে সেখানে কোরআনে হাফেজ হয়। তারা সবাই আরবি জানেন। তাদের যদি আরবি ভাষায় কথা বলার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয় তাহলে এসব মানুষ দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তর হবে। তাদের মধ্য থেকে প্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠিয়ে ভালো প্রবাসী আয় আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৩ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৪
জেডএ/এসএএইচ