আলোচিত অ্যাননটেক্স গ্রুপ তাদের বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে দুই বছরে জনতা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের সুযোগ পেয়েছে। ব্যাংক, ঋণগ্রহীতা ও ক্রেতা—তিন পক্ষের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে ভেঙে ভেঙে কিংবা একসঙ্গে এ ঋণ শোধ করবে তারা।
অ্যাননটেক্স গ্রুপের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০২২ সালের নভেম্বর পযর্ন্ত আদায়কৃত আরোপিত, অনারোপিত সুদসহ জনতা ব্যাংকের পাওনা ছিল আট হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। ওই সময় পযর্ন্ত সুদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। পরে এককালীন ঋণ পরিশোধ সুবিধার (ওয়ান টাইম এক্সিট) আওতায় তিন হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। সুদ মওকুফ-পরবর্তী চার হাজার ৮১৯ কোটি টাকা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করার শর্ত দেওয়া হয়। তাতে ব্যর্থ হয় অ্যাননটেক্স গ্রুপ। নতুন করে সুদ যোগ হয়ে এখন এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৬০ কোটি ৭৭ লাখটাকা। গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় দিলো ব্যাংক।
অ্যাননটেক্স ও ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি ২৩ লাখ টাকারও বেশি পরিশোধ করেছে। ২০১৪ সালে অ্যাননটেক্স গ্রুপ জনতা ব্যাংককে ১৯২ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এরপর ২০১৫ সালে ২৩৬ কোটি, ২০১৬ সালে ২৯৬ কোটি, ২০১৭ সালে ৩৪২ কোটি ও ২০১৮ সালে ২৮৬ কোটি টাকা পরিশোধ করে গ্রুপটি। ২০১৯ সালে নানা বিতর্ক সত্ত্বেও ৮৬ কোটি টাকা পরিশোধ করে অ্যাননটেক্স। আর ২০২১ সালে পরিশোধ করেছে প্রায় ৮৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত নিয়মিত ঋণের টাকা পরিশোধ করেছে অ্যাননটেক্স। করোনা মহামারিতেও প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিমুখী বাণিজ্য সচল ছিল। তবে পরে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ডলার সংকটে কাঁচামাল আমদানি না করতে পারার প্রভাব পড়ে প্রতিষ্ঠানটিতেও। এ বাস্তবতায় ঋণের টাকা আদায়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেয়, সুদ মওকুফ বহাল রেখে আদায়যোগ্য দায় চার হাজার ৯৬০ কোটি টাকা ২০২৫ সাল পর্যন্ত পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার। এ জন্য গত ৩০ মার্চের মধ্যে ৩০ কোটি জমা দিতে বলা হয় গ্রুপটিকে। তবে গ্রুপটি এখনো সেই টাকা জমা দিতে পারেনি। নতুন করে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।
ব্যাংক সূত্র বলছে, অ্যাননটেক্সের আশুলিয়া ও টঙ্গীর তুরাগ নদসংলগ্ন প্রায় ১২৮ একর জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রয়েছে। উত্তরা দিয়াবাড়ি, মেট্রোরেল প্রকল্প, সম্প্রসারিত টঙ্গী মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট, আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, বিজিএমইএর ফ্যাশন ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস পাশ্ববর্তী হওয়ায় অ্যাননটেক্সের জমির দাম তার কেনা দামের পাঁচগুণ বেশিতে কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে অ্যাননটেক্স গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ ইউনুস জানান, জনতা ব্যাংকে ঋণের বিপরীতে তাদের বিশাল জায়গা-জমি বন্ধক দেওয়া আছে; যার বাজারমূল্য ব্যাংক ঋণের চেয়ে অনেক বেশি। ব্যাংক মনে করেছে জমি বিক্রিকরে ঋণ শোধ করা যাবে। তাই ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে জমি বিক্রিতে তাদের আপত্তি নেই। তিনি ব্যাংকের টাকা দ্রুত পরিশোধ করে দিতে চান। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়তো বছর দুয়েক লাগবে।
জমি বিক্রির টাকায় প্রথমে ব্যাংকের ঋণ শোধ হওয়ার পর বাকিটা তিনি পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২৪
এইচএ/