ঢাকা: চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) মে পর্যন্ত অর্থাৎ ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্ধেক বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
আগের তিন অর্থবছরে সংশ্লিষ্ট সময়ের জন্য সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৫৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৬৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই সময়ে এডিপির ৬১ দশমিক ৭৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।
বুধবার (২৬ জুন) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত এডিপির অধীনে তাদের বরাদ্দের ১.৪৬ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
এই নিম্ন বাস্তবায়ন হারের কারণে, সরকারি সংস্থাগুলো জুনের শেষ নাগাদ উন্নয়ন প্রকল্পে দুই লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ব্যয়ের সংশোধিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না। মূলত, এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা, যা প্রায় ১৪০০টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রত্যাশার চেয়ে কম রাজস্ব সংগ্রহ সরকারকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে, যার ফলে এডিপি বাস্তবায়ন ধীরগতি এবং পরবর্তী বাজেটে কাটছাঁট হয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের সময়মতো সমাপ্তির বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট অর্থের মধ্যে, সরকারি তহবিল থেকে ৮৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের মধ্যে ব্যয় করা হয় ৮৭ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা যা অর্থবছর ২০২৩-২৪ সালের জুলাই-মে মাসে তিন হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা কম।
অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বৈদেশিক তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৫৪ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা, যা অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫২ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট এক হাজার ৬৪৭টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে এক হাজার ৫৮৮টি মূল প্রকল্প, ৫০টি উপ-প্রকল্প এবং নয়টি উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১১৪টি প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রকল্প এবং এক হাজার ৩৯৬টি বিনিয়োগ প্রকল্প।
আইএমইডি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এডিপি বরাদ্দের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (জুলাই-মে) ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অপরদিকে পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগ একই সময়ে বরাদ্দের মাত্র ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
ধীরগতির বিষয়ে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে এডিপির বাস্তবায়ন কম। তবে বাস্তবায়নের হার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যদিকে এডিপির ৭৭ দশমিক ১৯ শতাংশ বরাদ্দ ছিল ১৫টি প্রধান মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে। যেমন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের ৪২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সেতু বিভাগ ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগ ৪৩ শতাংশ ব্যয় করেছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ তার বরাদ্দকৃত তহবিলের ৫২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ৫২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৫৪ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ৫৮ দশমিক ২৩ শতাংশ ব্যয় করেছে।
যে-সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বেশি বরাদ্দ পেয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকটির বাস্তবায়নের হার কিছুটা ভালো। যেমন বিদ্যুৎ বিভাগ বরাদ্দের ৭৭ শতাংশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৭২ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ৭১ শতাংশ ব্যয় করেছে।
এছাড়া ৬৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়, ৬৪ দশমিক ১৩ শতাংশ খরচ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে ৫৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০৩ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৪
এসএমএকে/এসএম