ঢাকা: দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আমরা দেশের দুর্নীতি ধরার জন্য আসিনি। এটি দুর্নীতি ধরার কমিটি নয়।
তিনি বলেন, কোন খাতে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তার ব্যাপ্তি নির্ণয় করার জন্য আমাদের কমিটি কাজ করবে। ব্যক্তি নয়, সার্বিক দুর্নীতির মাত্রা তুলে ধরে সমাধানের ইঙ্গিত দেওয়া হবে। আমাদের মূল কাজ বর্তমান অর্থনীতির অবস্থা ভিত্তি ঠিক করা।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের এ কমিটি আর্থিক খাতের সংস্কারে সরকারের উদ্যোগকে সহযোগিতা করব। এ কমিটি ব্যাংক বা আর্থিক খাতের মূল্যায়ন করবে না। সেটির জন্য সরকার আলাদা ব্যাংকিং কমিশন করবে। তবে কমিটির কার্যক্রমে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম আসলে তার নানা দিক বিবেচনা করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা এটিই বলব, এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সে বিষয়ে আমরা সর্তক করবো। নাগরিকদের বিনিয়োগ সুরক্ষার কথা আমরা বলব। মূলত বিদায়ী সরকার যা করেছে, তার পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন এ কমিটি করবে না।
তিনি আরও বলেন, বিদায়ী সরকার অনেক নীতিমালা তৈরি করেছে। সেগুলোর প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করা হবে। এ ছাড়া নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কেমন হবে, তার ইঙ্গিত এবং এলডিসি থেকে উত্তরণ কতটা মসৃণ হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিদেশি সহযোগীদের সঙ্গে আগামীতে সম্পর্ক কেমন হবে, সে বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্পের ব্যয় বা যৌক্তিকতা যাচাই করা হবে না। তবে মেগা প্রকল্পের নানা দিক খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ কমিটি মূল তিনটি বিষয়ে কাজ করবে জানিয়ে বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, যেসব তথ্য-উপাত্ত সরকারের পক্ষ থেকে মিলবে, সেসব বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কোনো একটি বিষয় যদি প্রস্তুত হয়ে যায়, তাহলে সময়ের আগেই প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে আপাতত আমরা যাচ্ছি না, তবে এডিপি উন্নতির বিষয়ে আমরা পরামর্শ দেব।
পাচার হওয়া অর্থ সম্পর্কে তিনি বলেন, পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা জটিল প্রক্রিয়া। এ অর্থটা হাত বদল হতে হতে গেছে, দেশের আইনে মামলা করতে হবে। টাকা পাই বা না পাই, এ লোকগুলোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী ইকবাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম. তামিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরুর) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২৪
এসএমএকে/আরএইচ