চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কমেছে এলসি (ঋণপত্র) খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ। এ সময়ে শুধু শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছে।
ফলে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মোট আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। একইভাবে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ কমেছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশের মতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরেস এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তির হার বাড়লেও সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কমেছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে। ফলে আমদানির পরিমাণও বাড়বে। স্থিতিশীলতা আসবে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৯ কোটি ডলারের। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬২১ কোটি ডলারের এলসি।
শিল্পকারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কাঁচামাল ও নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। আমদানি কার্যক্রম প্রক্রিয়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতা ভিন্ন দেশের নাগরিক হওয়ায় আমদানি কার্যক্রম সম্পন্ন হয় ঋণপত্রের (লেটার অব ক্রেডিট-এলসি) মাধ্যমে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৪১ শতাংশের বেশি। তিন মাসে ৩৮ কোটি ডলারের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানি হয়েছিল ৬৫ কোটি টাকার মূলধনি যন্ত্রপাতি। একই সময়ে নিষ্পত্তি কমেছে ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৯ কোটি ডলারের ঋণপত্র; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৫ কোটি ডলার।
এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি খোলা কমেছে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ সময়ে আমদানি হয়েছে ১৩৭ কোটি ডলারের ভোগ্যপণ্য। এক বছর আগের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৬৬ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে আমদানি হয়েছে ১১৪ কোটি ডলারের পণ্য। আগের বছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১৩২ কোটি ডলার। একইভাবে কমেছে পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানি, পরিসংখ্যানে কমার পরিমাণ ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, মানুষের হাতে টাকাও কম। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। চরম দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির চাহিদাও কমে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই যিনি উৎপাদন করবেন, তিনি তো আগের মতো উৎপাদন করবেন না। উৎপাদন কমলে আমদানিও কমবে। যার প্রভাব পড়ছে এলসি খোলার হারে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার আসার পরেও ২৫০ কোটি ডলারের মতো অতিরিক্ত বকেয়া ছিল। সেগুলো এখন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যে কারণে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে। ’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টর সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কলকারখানা ঠিকমতো চলছে না। অনেক শিল্পকারখানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে শিল্পকারখানা হচ্ছে না। চাহিদা কমেছে। তাহলে আপনি মূলধনি যন্ত্রপাতি কেন আনবেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এখন জরুরি। এটা নিশ্চিত হলে ব্যবসায়ীরা কাজে ফেরত আসবেন। উৎপাদন শুরু করবেন উৎপাদকরা। ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। ’
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তির হার বাড়লেও সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কমেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হয়েছে ৫৭২ কোটি ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৫২৯ কোটি ডলার।
গত সেপ্টেম্বরে এলসি খোলা হয়েছে ৫৫৭ কোটি ডলারের; যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৫২০ কোটি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আমদানি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৮৭ কোটি ডলারের; যা আগের বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ৪৭২ কোটি। এক বছরের তুলনায় ১১৫ কোটি ডলার বা ২৪ শতাংশ বেশি।
সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২৪
এমজে