ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শ্রাবণঢলে বগুড়ায় সবজি চাষে সর্বনাশ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৫
শ্রাবণঢলে বগুড়ায় সবজি চাষে সর্বনাশ

বগুড়া: উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সবজি উৎপাদনকারী অঞ্চল বগুড়া। সবজি চাষে জীবন চলে এ অঞ্চলের বহু মানুষের।

এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকায়ও যায় এসব সবজি। কিন্তু ‍আষাঢ়ে শুরু হওয়া বৃষ্টি শ্রাবণেও অব্যাহত থাকায় চরম বিপাকে চাষিরা।

খেতের পর খেত এখন মৃতপ্রায়। সবুজ পচে হয়েছে হলুদ। পানি জমে অধিকাংশ খেতে নেই সবজির দেখা নেই। গাছ মরে গেছে শুকিয়ে। সেদিকে কৃষকের অসহায় দৃষ্টি। সান্ত্বনা খোঁজার জায়গাটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন তারা।

এ অঞ্চলের সব কৃষকের আতঙ্কের নাম এখন বৃষ্টি। একটুখানি বৃষ্টি হলেই খেতে ছোটা পানি সরাতে। কেউ সেটা পারছেন না, কেউ পারছেন। এ অবস্থায় চাষিরা সামনে দেখছেন ঘোর অমানিশা। তাদের মতে, এ অবস্থা চলতে থাকলে বাজারে যেমন তারা সবজি তুলতে পারবেন না, তেমন যা পাওয়া যাবে সেগুলোর দামও বাড়বে কয়েকগুণ।

মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগেও টাল থেকে গড়ে দেড় থেকে দুই মণ হারে করলা উঠিয়েছেন চাষিরা। কিন্তু আষাঢ় ও শ্রাবণের ঢলে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে তাদের। কয়েক সপ্তাহের টানা বর্ষণে পানি জমে মরে গেছে অধিকাংশ খেতের সবজি গাছ।

রকমারি সবজি বিক্রির টাকায় চলে এসব চাষির সংসার। টানা বর্ষণে সর্বনাশ তাদের। বেঁচে থাকার জন্য আয়ের উৎসটুকু চরম হুমকিতে। সংসার চালানোই এখন কঠিন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. এস এম আবুল হোসেন এসব তথ্য মানতে নারাজ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের এ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, বগুড়া, জয়পুরহাট ও সিরাজগঞ্জ জেলায় মধ্য মানের বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই সোমবার (২০জুলাই) পর্যন্ত এই তিনটি জেলায় সবজি খেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বললেই চলে।

এরপরও যদি এসব জেলায় কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েও থাকে তা জানতে আরও দু’একদিন সময় লাগবে। কেননা ঈদের ছুটির কারণে এখনও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেননি।

তবে পাবনা জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হলেও সবজি ক্ষেতের তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. এস এম আবুল হোসেন দাবি করেন।

সোমবার বগুড়া জেলার সবজির জন্য খ্যাত শেরপুর, শাজাহানপুর, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সবজি চাষি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য ওঠে আসে।

সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন সবজি চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহত্তর বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় গ্রীষ্মকালীন সবজি হিসেবে লাল শাক, বেগুন, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, করলা, বরবটি, ডাটা, ঢেঁড়শ, ঝিঙা, গিমা, কলমি, পুঁইশাক, চাল কুমড়া, পানি কচু, মুখী কচু, লতিরাজ, পটল, মরিচ, আদা, হলুদ, কলা, পেঁপোসহ রকমারি সবজি চাষ করা হয়।

শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম, শামছুর রহমান, নুরুল ইসলাম, হায়দার আলীসহ একাধিক সবজি চাষি বাংলানিউজকে জানান, এই ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের অন্তত ২০টি গ্রামের প্রধান আবাদযোগ্য ফসল রকমারি সবজি। এছাড়া খামারকান্দি, খানপুর, মির্জাপুর ও সুঘাট ইউনিয়নের সবজি চাষ হয়।

তারা জানান, গত কয়েক সপ্তাহের টানা বর্ষণে এসব এলাকার প্রায় সবজি খেতেই পানি ঢুকেছে। ফলে করলা, বেগুন, মরিচ, ঢেঁড়স, পেঁপে, লাউ, পটল, লাল শাকসহ বেশ কিছু সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। নিচু এলাকার অধিকাংশ ক্ষেতের সবজি গাছে ধরেছে পচন। আবার অনেক খেতের গাছ পচে মরে গেছে।

শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের মেহেদী হাসান, মনোয়ার হোসেন, আব্দুল মান্নানসহ একাধিক সবজি চাষি জানান, অতি বর্ষণে তাদের এলাকার অধিকাংশ চাষির সবজি খেত নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক খেতের গাছগুলো লালবর্ণ ধারণ করে আছে। যেগুলো আস্তে আস্তে পচে মরে নষ্ট হওয়ার প্রহর গুনছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গ্রীষ্ম মৌসুমে বগুড়া জেলায় বিভিন্ন ধরনের সবজি ৭০০০ হেক্টর, মরিচ ৪৮৩ হেক্টর, আদা ২৮২ হেক্টর, হলুদ ৬৬৭ হেক্টর, পেঁপে ২৬০ হেক্টর, কলা ৪৬৭ হেক্টর জমিতে লাগানো হয়েছে।

একইভাবে জয়পুরহাট জেলায় সবজি ৫৫১০ হেক্টর, মরিচ ২০৫ হেক্টর, আদা ৫০ হেক্টর, হলুদ ৩১৫ হেক্টর, পেঁপে ৭৫ হেক্টর, কলা ৭২৫ হেক্টর, পাবনায় সবজি ১০ হাজার ৩২২ হেক্টর, মরিচ ৪২৫৭ হেক্টর, হলুদ ১৬৩৮ হেক্টর, পেঁপে ৩৯৯ হেক্টর, কলা ৯৮৫ হেক্টর ও সিরাজগঞ্জে সবজি ৪৩৫৫ হেক্টর, মরিচ ১৯৫ হেক্টর, আদা ১৮৭ হেক্টর, হলুদ ২৬৫ হেক্টর, পেঁপে ১০৫ হেক্টর, কলা ১৭০ হেক্টর জমিতে এসব সবজি জাতের ফসল চাষ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৫
এমবিএইচ/এএ/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।