ঢাকা: দেশের উদীয়মান শিল্পগুলোর মধ্যে বিস্কুট শিল্প অন্যতম। দ্রুত বর্ধনশীল এ শিল্প অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে তৈরি করছে আন্তর্জাতিক বাজার।
আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশীয় বিস্কুট পাবে আন্তর্জাতিক মান। দ্রুত বর্ধনশীল এ শিল্পের সঙ্গে ‘বর্ধিত ট্যারিফ মূল্য’ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বাজেটে বর্ধিত ট্যারিফ প্রত্যাহার, আমদানিকৃত বিস্কুটের শুল্ক বৃদ্ধি ও রফতানিতে প্রতিবন্ধকতা দূর না করা গেলে দেশীয় বিস্কুট শিল্প অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ অটো বিস্কুট ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএবিবিএএমএ) কর্তৃপক্ষ অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে।
বিএবিবিএএমএ সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ছোট-বড় পাঁচ হাজারের বেশি বিস্কুট কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক মধ্যম ও বড় কোম্পানি।
গুণমান বৃদ্ধির ফলে প্যাকেটজাত বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিস্কুট দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১২৩টি দেশে সীমিত আকারে রফতানি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশীয় বিস্কুটের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ থেকে বছরে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) পাওয়া যায়।
এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ লোক জড়িত। এ শিল্পের বাজার বৃদ্ধি পাওয়ায় তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ, বৃদ্ধি পাচ্ছে সরকারের রাজস্ব।
সীমিত রফতানি হলেও ফ্রজেন ফুড ও এগ্রো বিস্কুটসহ বেশ কয়েকটি পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বলে সূত্রটি দাবি করে। রফতানি সংক্রান্ত বাধা দূর করা গেলে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি বিস্কুট শিল্প গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যাবে।
চলতি বছর বাজেটে মেশিনে তৈরি স্থানীয় বিস্কুটের ওপর কেজি প্রতি ট্যারিফ (শুল্ক) মূল্য বর্ধিত ও আমদানিকৃত বিস্কুটের সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে।
এর মধ্যে ক্রেকার্স, ডাইজেস্টিভ, চকলেট বিস্কুট কেজি প্রতি ২০ টাকা, ক্রিম বিস্কুট কেজি প্রতি ২৫ ও সাধারণ বিস্কুট কেজি প্রতি ৩০.৭৭ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আমদানিকৃত বিস্কুটের শুল্ক কমানো হয়েছে ১৫ শতাংশ। ফলে বিস্কুট আন্ডার ইনভয়েসিং আর কর ফাঁকি দিয়ে বিস্কুট আমদানির প্রবণতাও বাড়ছে।
এ বিষয়ে এবিবিএএমএ সভাপতি মো. সফিকুর রহমান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, বাজেটে ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় বিস্কুট কোম্পানিগুলো বিপর্যের মুখে পড়বে।
আমদানিকৃত বিস্কুটের শুল্ক কমানোর ফলে স্থানীয় বিস্কুট অসম প্রতিযোগিতা ও সরকার সত্যিকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হবে বলেও জানান তিনি।
একদিকে, সম্পূরক শুল্ক হ্রাস। অপরদিকে, আন্ডার ইনভয়েসিং আর নাম মাত্র মূল্য শুল্ক দিয়ে বিস্কুট আমদানির ফলে দেশীয় বিস্কুট বাজার হারাচ্ছে বলে দাবি ভূঁইয়ার।
ভূঁইয়ার ভাষ্য মতে, আগে আন্ডার ইনভয়েসিং করা হলেও সম্পূরক শুল্ক বেশি থাকার কারণে দেশীয় বিস্কুট শিল্প কিছুটা বাজারের ভারসাম্য রাখতে পারতো।
ট্যারিফ মূল্য না কমিয়ে ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি না করে গত অর্থবছরের ন্যায় ট্যারিফ মূল্য ও সম্পূরক শুল্ক ২০২০ সাল নাগাদ অব্যাহত রাখার দাবি করেন ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, দেশীয় বিস্কুট যেভাবে মানোন্নয়ন হচ্ছে তা ২০২০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক মান পাওয়ার আগেই যদি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে দেশীয় এ শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
সরকারি সহায়তায় বিভিন্ন দেশে ট্রেড শোর (প্রদর্শনী) মাধ্যমে দেশীয় বিস্কুটের বাজার আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। তবে এক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না।
বেশ কয়েকটি কোম্পানি আন্তর্জাতিক বাজারে বিস্কুট রফতানি করছে। এর মধ্যে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ প্রায় ১২৩টি দেশে বিস্কুটসহ এগ্রো ফুড (খাবার) রফতানি করছে।
প্রতি মাসে এ খাতে দেশীয়-আন্তর্জাতিক বাজার প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করা হয়। এতে এ খাত থেকে প্রচুর রাজস্ব আয় করে সরকার।
এনবিআর’র কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে কিছু কোম্পানি সঠিকভাবে ভ্যাট দিচ্ছে না। অনেক কোম্পানি ভ্যাট আওতার বাইরে রয়েছে বলে স্বীকার করেন ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, রাজস্ব বাড়ানোর জন্য ট্যারিফ মূল্য বর্ধিত করেছে সরকার। বর্ধিত ভ্যাটে সরকারের নয় বরং কর্মকর্তারা লাভবান হবে।
বাজেটে ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধি করলেও কোনো কোম্পানি এখন পর্যন্ত বিস্কুটের মূল্য বৃদ্ধি করেনি। বাজার ধরে রাখতে সব কোম্পানি লোকসান দিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
আমদানিকৃত বিস্কুটের শুল্ক কমানো বিষয়ে ভূঁইয়া বলেন, আমদানিকৃত বিস্কুটের শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে বেশিরভাগ বিস্কুট আমদানি হয় আন্ডার ইনভয়েসিং ও নাম মাত্র মূল্য ঘোষণা দিয়ে। এতে তারা সামান্য দামে বাজারে বিস্কুট দিতে পারবে।
দেশীয় বিস্কুটের বাজার ধরে রাখতে হলে বর্ধিত ট্যারিফ প্রত্যাহার ও আমদানিকৃত বিস্কুটের শুল্ক গত অর্থবছরের ন্যায় করার দাবি জানান তিনি।
এফসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বাংলানিউজকে বলেন, ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধি ও আমদানি শুল্ক কমানোর কারণে দেশীয় বিস্কুট তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে।
আমদানির বিকল্প হিসেবে, রফতানিমুখী কার্যক্রম বাড়াতে ও দেশীয় বিস্কুট শিল্প রক্ষার স্বার্থে ট্যারিফ মূল্য পূর্বের ন্যায় বহাল রাখার জোর দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৫
আরইউ/টিআই