ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হলে বা হলমার্ক কেলেঙ্কারির মত ঘটনা ঘটলে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হবে। এতে পিছ পা হবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার (৯আগস্ট’২০১৫) বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
একইভাবে ২০১৬ সালের মার্চের মধ্যে সব ব্যাংকে অটোমেশন চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক অগ্রগতি বিষয়ক ত্রৈমাসিক আলোচনা সভায় গর্ভনর আরও বলেন, বারবার আপনাদের মূলধন ঘাটতি পূরণে যোগান দেবে না সরকার। কেননা, পুন:মূলধনীকরণ জনগণের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ায়। তাই আয় ও মুনাফা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। দক্ষতা বাড়াতে হবে। তাহলেই ফুটো বালতিতে আর পানি ঢালার প্রয়োজন পড়বে না।
গর্ভনর আরও বলেন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইনগুলো অনুপুঙ্খ অনুসরণ এবং যথাযথ ঋণ নিয়মাচার মেনে নতুন ঋণ দিতে হবে। গুণমানের ঋণ মঞ্জুরির জন্য পরিচালনা পর্ষদকে দায়িত্ব নিতে হবে। নতুন ঋণ প্রস্তাব মূল্যায়ন, ঋণ মঞ্জুরি ও ঋণ হিসাব ব্যবস্থাপনায় অনুসরণীয় নিয়মাচার এসব প্রধান নির্বাহী এবং পর্ষদের অডিট কমিটির সতর্ক নজরদারির মধ্যে থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মঞ্জুরিকৃত ঋণ একবারে বা এক চেকেই বিতরণ না করে পার্ট-বাই-পার্ট বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। আগের বিতরণকৃত ঋণের সঠিক ব্যবহার যাচাই করে ঋণের পরবর্তী কিস্তি বিতরণ করবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকও ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে প্রধান নির্বাহীর কাছ থেকে ‘অ্যান্ড ইউজ কমপ্লায়েন্স’ চাইবে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, যে কোনো শাখার গুরুতর অনিয়মের জন্য প্রথমে প্রধান নির্বাহীকেই জবাবদিহি করতে হবে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় গাফিলতি থাকলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। যে কোনো বিষয়ে নন-কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে গাফিলতির জন্য দায়ী প্রধান নির্বাহীদের বিরুদ্ধে অপসারণসহ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পর্ষদের সদস্যদের গাফিলতির দৃষ্টান্তও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের নজরে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংকের পর্ষদের অডিট কমিটি গতানুগতিকতার পরিবর্তে একটি যথোপযুক্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করেছে। এ বিষয়ে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে। আশা করছি, সংশ্লিষ্ট পর্ষদও তার অডিট কমিটির রিপোর্ট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনের আলোকে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
সব ব্যাংকের পর্ষদের অডিট কমিটি যাতে নির্ভয়ে কাজ করতে পারে সে ব্যাপারে পর্ষদকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এরপরেও যদি অবস্থার কোনো উন্নতি না হয় তাহলে ব্যাংকগুলোর পর্ষদে ক্যামেলস রেটিংয়ের ভিত্তিতে প্রয়োজনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা মোতাবেক জড়িত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনতে কোনো রকম সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই রেটিংয়ের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত নতুন শাখা খোলার আবেদন করবেন না।
লোকসানী শাখাগুলোকে লাভজনক শাখায় পরিণত করুন এমন আহ্বান রেখে গভর্নর বলেন, আপনাদের ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর কৌশল গ্রহণ, শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ কাঠামো, দৃঢ় কর্পোরেট সুশাসন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকে পর্ষদকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। বর্তমান চেয়ারম্যান ও পরিচালকগণ অনেক বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ।
নতুন উদ্যমে ব্যাংকগুলোতে স্বার্থানেষী প্রভাবমুক্ত বস্তুনিষ্ঠ ঋণ ঝুঁকি মূল্যায়ন ও ঋণ ব্যবস্থাপনা, সকল পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং সুষ্ঠু ঋণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলো সক্রিয় ও সচেষ্ট থাকবে এটাই আশা করি।
বৈঠক শেষে ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকগুলোর ক্যাশ রিকভারি, কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স, অটোমেশন ও সুশাসনের অভাব রয়েছে। এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে ব্যাংকার্স রিক্রুটসমেন্ট কমিটির মাধ্যমে জনবল নিয়োগের দাবি করেন চেয়ারম্যান ও এমডিরা। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে গর্ভনর জানান।
সভার শুরুতেই ব্যাংকগুলোর সাবির্ক চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রথম বারের মত এই সভায় চেয়ারম্যানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৫
এসই/এনএস/