ঢাকা: জিএসপি প্রাপ্ত অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, কী কারণে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়নি তা স্বচ্ছতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দেখাতে হবে।
বুধবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সিপিডি ও এফইএস আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পোশাক খাত: কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে প্রাপ্ত মূল্য কী পর্যাপ্ত?’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
রেহমান সোবহান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের থাকা উচিত ছিলো। বাংলাদেশ নিজের সক্ষমতা ও দায়িত্ব পালন করে যাবে অথচ সুবিধা পাবে না। এভাবে কোনো অর্জনই ভালো হয় না।
তিনি বলেন, ‘গরু-ছাগল’ এদেরকেও জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশেরটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। শর্তপূরণের পরও ঠিক কী কারণে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেওয়া হয়নি তা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দেখাতে হবে।
জিএসপির বিষয়ে সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা না দেওয়া খুবই খারাপ কাজ হয়েছে। তবে সম্পূর্ণটা রাজনৈতিক বানানো উচিত নয়। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এমন কোন খারাপ অবস্থায় রয়েছে যে, তাদের প্রতি এই অবিচার করা হয়েছে।
‘তবে এতে হতাশ হয়ে এটিকে (জিএসপি) ছেড়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। অন্তর্জাতিক বিশ্বে যেসব নিয়ম-নীতি আছে তার মধ্যে জিএসপি বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনার একটি। ন্যায্য পাওনার বিষয়কে রাগ অভিমান করে ছেড়ে দেওয়া ঠিক না’, বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
পোশাক খাতের কম্পালয়েন্স’র বিষয়ে তিনি বলেন, জি ৭৭ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে অনেক দেশে ভাগ ভাগ হয়ে পণ্য উৎপাদ হয়ে উন্নত দেশের বাজারে যায়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশেই শ্রমের মান, পণ্যের মান, কর্যপরিবেশ ও জলবায়ু পরিবেশ- এগুলো মানা হলো কি না একটি নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। এই নজরদারি ব্যবস্থা কী হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে এটি একটি ইতিবাচক দিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি ভাগ্যবান দেশ। রানাপ্লাজার মতো ঘটনার পর সকল উদ্যোক্তা বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে পারতো। কিন্তু তারপরও তারা বাংলাদেশে রয়ে গেছেন। তবে শেষ বিচারে আমার কাছে কমপ্লায়েন্স হলো- উদ্যোক্তার মুনাফা টেকসই হতে হবে এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্য শ্রমিকের মজুরি বাড়াতে হবে।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সঞ্চলনায় সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েল সচিব মিকাইল শিপার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল্য প্রবন্ধে তিনি বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের যে মূল্য নিতে হয় তা খুবই কম। ফলে তাদের পক্ষে কমপ্লায়েন্স’র জন্য পর্যন্ত ব্যয় করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাশ্ববর্তী যেসব প্রতিযোগী দেশ আছে তাদের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পণ্য উৎপাদনের জন্য সব থেকে কম মূল্য পায় এবং তার ভিতর থেকে সব থেকে কম ব্যয় করেন কমপ্লায়েন্স’র জন্য।
খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমান যে মূল্য কাঠামোতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের পক্ষে কমপ্লায়েন্স’র জন্য বাড়তি মূল্য ব্যয় করা খুবই কঠিন। কারণ শুধুমাত্র কম্পালেয়ন্স‘র জন্য ব্যয় করে তরা পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখতে পারবেন না।
সেদিক থেকে আমাদের পরামর্শ যে মার্জিন (মূল্য) উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন সেখান থেকে কমপ্লায়েন্স’র উন্নয়নে কিছুটা বিনিয়োগ করা যায় কি না। তবে কমপ্লায়েন্স’র উন্নয়ন শুধু বাজার কাঠামোর ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। বাজারের বাহিরেও অন্যান্য কাঠামগুলোতেও নজর দিতে হবে।
এ জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি উন্নত করতে হবে। একই সঙ্গে বাজার পরিচালনা ও তথ্যগত যে দুর্বলতা রয়েছে তা দূর করতে হবে। পাশাপাশি মূল্য বাড়িয়ে ক্রেতাদের দিক থেকে উদ্যোগ নিলে কম্পালেয়ন্স উন্নত করার সুযোগ রয়েছে বলেন সিপিডির এই অতিরিক্ত গবেষণা পরিচারক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৫/আপডেট: ১৪২৪
এএসএস/এমজেএফ