ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

জিএসপি ইস্যু

গোয়েন্দা নজরদারিতে পোশাকশ্রমিক নেতারা!

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৫
গোয়েন্দা নজরদারিতে পোশাকশ্রমিক নেতারা!

ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি’র (অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা) নতুন তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ পড়েছে। একে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে নেতিবাচক প্রচারণা রোধে পোশাকশ্রমিক নেতাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।



রানা প্লাজা ধসকে কেন্দ্র করে এখনো অনেক শ্রমিক নেতাই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। এর ধারাবাহিকতায় জিএসপি ইস্যু নিয়ে যাতে নতুন করে আর জল ঘোলা না হয়, সে জন্য বেশ কয়েকজন পোশাকশ্রমিক নেতাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

তাছাড়া বাংলাদেশের শিল্প পরিবেশের তথ্য দেশের বাইরে পাচারের ক্ষেত্রে সন্দেহভাজনদের মধ্যে শ্রমিক নেতারা প্রথম সারিতে রয়েছেন বলে জানা যায়।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রটি জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধার নতুন তালিকা থেকে বাংলাদেশ বাদ পড়ার পর তা যাতে শিল্পক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে, তার জন্য সরকার কাজ করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে মার্কিন সরকারের সঙ্গে নানা ধরনের যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। আর আগে রানা প্লাজাসহ কিছু ঘটনায় শ্রমিক নেতারা বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে নানা অপপ্রচার চালিয়েছেন।

সর্বশেষ, অপপ্রচার চালাতে গিয়ে মার্কিন পুলিশের কাছে আটক হয়েছিলেন শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার। জিএসপি ইস্যুকে কেন্দ্র করে যাতে আর জল ঘোলা না হয়, সে জন্য সন্দেহভাজন কয়েকজন শ্রমিক নেতাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো শ্রমিক নেতাকে সরাসরি কোনো ধরনের বিরক্ত করা হবে না বলে জানায় সূত্রটি।

প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রমিক নেতাদের মোবাইল ফোনের কথোপকথন ও অনলাইন কার্যক্রমের ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানায় গোয়েন্দা সূত্র। তবে শ্রমিক নেতাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি নতুন কোনো বিষয় নয় বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে শ্রমিক নেতাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ধরুন, আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি; হয়ত এসব কথা রেকর্ড হচ্ছে। তবে এ বিষয় নিয়ে আমরা মোটেও চিন্তিত নই। কিন্তু, আমরা চাই বাংলাদেশের কর্মপরিবেশ এমন পর্যায়ে পৌঁছুক, যা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে না পারে। আর জাতীয় স্বার্থে গোয়েন্দা নজরদারি থাকলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

এদিকে, গোয়েন্দা নজরদারির কারণে শ্রমিক নেতাদের ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যা হয় বলে মন্তব্য করেছেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বছরের বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক নেতাদের গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারিতে রাখে এটি সত্যি। এই গোয়েন্দা নজরদারির ফলে অকারণেই নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যেমন, আমরা সবাই এখন মোবাইল ফোনে নানাজনের সঙ্গে কথা বলি। এতে ব্যক্তিগত আলাপ আলোচনাও হয়। এক্ষেত্রে আমাদের অনুরোধ, যাতে ব্যক্তিগত বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়।

চলতি বছরের ২৯ জুলাই থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১২২টি দেশের জন্য জিএসপি নবায়ন করা হয়। তবে এই ১২২টি দেশের মধ্যে নেই বাংলাদেশের নাম।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ইউএসটিআরের ওয়েব সাইট থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই জিএসপি সুবিধা ১২২টি দেশের জন্য কার্যকর থাকবে।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে শ্রমিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) ২০১৩ সালের ২৭ শে প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর কিছুদিন পর অর্থাৎ একই বছরের ৩১ জুলাই মার্কিন বাজারের জিএসপি স্কিমের নির্ধারিত মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। তারপর থেকে সব দেশের জন্য জিএসপি সুবিধা অনেকদিন বন্ধ থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৫
ইউএম/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।