ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আরো বেশি পণ্য চায় ত্রিপুরা

সুকুমার সরকার, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
আরো বেশি পণ্য চায় ত্রিপুরা পরিমল রায় চৌধুরী / ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্য সরকার বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পণ্য আমদানি করতে চায়। পাশাপাশি রফতানিও বাড়াতে চায়।

এজন্য ওই রাজ্যের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে শুল্ক না ধার্য করার আহবান জানিয়েছেন।

আগরতলা ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি পরিমল রায় চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, তাদের পণ্য বিশেষত: আদা বাংলাদেশে রফতানি করতে গেলে শুল্ক ধার্য করা হয়। অথচ চীন থেকে বাংলাদেশ যে আদা আমদানি করে, তার কোন শুল্ক নেই। এজন্য তাদের আদার দাম বেশি হওয়ায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা আমদানিতে আগ্রহী নয়।

আগরতলা শহর থেকে বাংলাদেশের স্থলবন্দর আখাউড়া মাত্র তিন কিলোমিটার। রাজধানী ঢাকা থেকে ট্রেনে-বাসে করে আখাউড়া যেতে সময় লাগে তিন-চার ঘণ্টা।

এই স্বল্প দূরত্বের কারণে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার ব্যবসায়ীরা স্বল্প দূরত্ব ও সাশ্রয়ী খরচে পরিবহনের জন্য ঢাকা থেকে পণ্য নিতে বেশি আগ্রহী। যদিও
তাদের কাছের রাজ্য আসাম।

আগরতলা ও আসামের রাজধানী গৌহাটির মধ্যে সড়ক পথে দূরত্ব ছয়শ‍’ কিলোমিটার। সরাসরি বাস বা ট্রেন যোগাযোগ নেই। ট্রেনে গোয়ালপাড়া হয়ে গৌহাটি যেতে সময় লাগে ১২ ঘণ্টা। বাসে আইজল হয়ে গৌহাটি যেতে সময় লাগে ১৫ ঘণ্টারও বেশি।

শুধু আসাম নয়- তাদের রাজ্য থেকে ভারতের যেকোন রাজ্যের দূরত্ব কয়েকশ’ কিলোমিটারের বেশি।

তদুপরি আসামও নিত্যপণ্যসহ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। এজন্য সেখান থেকে পণ্য কিনে আগরতলায় পরিবহনে সার্বিকভাবে খরচ বেশি পড়ে যায়।

অপরদিকে কলকাতা থেকে আগরতলার সঙ্গে সরাসরি ট্রেন বা বাস যোগাযোগ নেই। লাম্বডিং বা ভুবনেশ্বর হয়ে যেতে পনেরো ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। এজন্য
নিত্যপণ্যের চাহিদা যোগানের ক্ষেত্রে আগরতলার ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে পণ্য আমদানিতে বেশি আগ্রহী।

পরিমল রায় চৌধুরী জানান, বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ঢেউটিন, চিটাগুড়, মাছ, শুটকি, সিমেন্ট, পাটজাত ও প্লাসটিক পণ্য, নরম পানীয়, বিবিধ।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রাণ তাদের পণ্য দিয়ে প্রথমে ত্রিপুরার সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে। প্রাণের বিস্কুট, চিপস, কোল্ড ড্রিঙ্কস, প্লাসটিক পণ্য তাদের রাজ্যের বাজার পাকাপোক্তভাবে দখল করেছে। প্রাণের পণ্য রাজ্যে আমদানি শুরু হয় ১৯৯৭ সালে।

আবুল খায়ের গ্রুপ, আকিজ, আল-আমিনসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি তাদের পণ্য আগরতলায় রফতানি করে থাকে। এ কোম্পানিগুলো সিমেন্ট, ব্যাটারি, জুস, বিস্কুট-পাউরুটি  রফতানি করে।

বাংলাদেশ থেকে নব্বই-এর দিকে ইলিশ যেতো। এরপর অন্যান্য মাছও আমদানি শুরু হয়। পাহাড়বেষ্টিত ত্রিপুরায় নদী-নালা-খাল-বিল কম হওয়ায় মাছের যোগান কম। রাজ্যের জনসংখ্যা পঁয়ত্রিশ লাখ।

তাঁদের অধিকাংশই বাঙালি। বাকি জনগোষ্ঠী উপজাতি। ভারতের অন্ধ্র ও অন্যান্য রাজ্য থেকেও মাছ তাদের রাজ্যে আসে বলে জানান পরিমল রায় চৌধুরী।

তিনি বলেন, ত্রিপুরার পরেই ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য ছয় রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য শুরু হয়। প্রথম দিকে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য
আসা-যাওয়া শুরু হয় এবং অন্য রাজ্যে পাঠানো হতো। ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের পাঁচটি সীমান্ত দিয়ে বর্তমানে আমদানি-রফতানি হচ্ছে।

আখাউড়া-আগরতলা দিয়ে ব্যাপক বাণিজ্যের কারণে এটি এখন ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। কেননা ত্রিপুরাসহ অন্য রাজ্যে শিল্প-কলকারখানা
নেই বললেই চলে। তাই কাছের হিসেবে ভারতের এই সাত রাজ্যে বাংলাদেশের পণ্য বাজার লাভ করেছে।

আগরতলা ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর সাড়ে তিনশ‘ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয় ত্রিপুরায়। আর ত্রিপুরা থেকে বছরে মাত্র এক কোটি টাকার পণ্য বাংলাদেশে রফতানি হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
এসএস/জেডএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।