ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কোরবানির পশুর সঙ্কট হবে না, তবে দাম হবে চড়া

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
কোরবানির পশুর সঙ্কট হবে না, তবে দাম হবে চড়া ছবি: শাকিল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর সেদেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গরু পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর ভারত থেকে বাংলাদেশে গরুসহ কোরবানির পশু  আসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

এ-অবস্থা চলতে থাকলে এবার ঈদুল আযহার সময় দেশীয় পশুই হবে কোরবানির একমাত্র ভরসা। তবে দাম হবে অন্যবারের চেয়ে চড়া।   অবশ্য পশুর কোনো সঙ্কট হবে না। কেননা এ-মুহূর্তে দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু রয়েছে। এমনটাই অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
 
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও রাজধানীর অদূরের একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে গিয়ে বেপারিদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা ও অভিমতই পাওয়া গেছে।
 
বেপারিরা জানান, বর্তমানে দেশে যে যতো গরু আছে তাতে ভারতীয় গরু না এলেও কোরবানির পশুর কোনো সঙ্কট হবে না। তবে দাম একটু বেশি হতে পারে। গাবতলী পশুর হাটে ওজনের ওপর ভিত্তি করে এখন গরু বিক্রি হচ্ছে--- মণপ্রতি ১৬ হাজার টাকা ধরে। তবে কোরবানির ঈদের সময় মণপ্রতি দাম ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। সে-হিসেবে চার মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন একটি কোরবানির গরুর দাম দাঁড়াতে পারে ৮০ হাজার টাকা।
 
এই বিষয়ে কথা হয় কুষ্টিয়া দৌলতপুরের শহিদুল ইসলাম বেপারির সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় চার মণ মাংস মিলবে এমন একটা দেশীয় কোরবানির গরুর দাম পড়বে ৮০ হাজার টাকার মতো। এখন ১৫-১৬ হাজার টাকা মণ দরে মাল যাচ্ছে (গরু বিক্রি হচ্ছে)। এবার গরুর দাম বাড়বে কিন্তু সঙ্কট হবে না। ’
 
আসন্ন ঈদুল আযহাতে পশুর দাম কেমন হবে এ-নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাট অনেকটা তিন তাসের খেলার মতো। অনেক সময় তিন তাসের খেলায় একটি দান অন্তত পাওয়া যায়; কিন্তু কোরবানির বাজারে লস খেলে ব্যাপারি আর বাঁচে না। পুঁজি হারিয়ে তাদের পথে বসতে হয়। তবে এখনই কোরবানির বাজারের বিষয়ে শেষ কথাটা বলা যাবে না। ঠিক কথাটা বলা যাবে ঈদের ঠিক একদিন আগে। ভারতের গরু শেষ পর্যন্ত আসবে কি আসবে না তার উপরেই নির্ভর করবে দাম কেমন হবে। ’
 
গরু গাবতলীর পশুর হাটে এবার ভারতীয় সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। বেপারিরা এবার যেসব পশু বিক্রি করছেন তার প্রায় সবই দেশীয়। ঢাকার বাইরের কিছু ক্রেতা কোরবানির পশু দেখতে এরই মধ্যে হাটে আনাগোনা শুরু করে দিয়েছেন।  
 
বেপারিরা জানান, চামড়ার রঙ, এক রঙের চামড়া, লেজ, চোখ ও শিং দেখতে ভালো এমন গরুই /পশুই কোরবানির জন্য পছন্দ করেন ক্রেতারা। এজন্য একটু বেশি দাম দিতেও রাজি তারা।
 
তবে গাবতলী পশুরহাটে বেপারিরা এখনো স্পষ্ট দুই শিবিরে বিভক্ত। এক পক্ষ চায় ভারত থেকে গরু আসুক। তবে অন্য পক্ষ চায় ভারতের গরু যেন না আসে। দেশের টাকা দেশেই থাকুক। দেশী গরু যারা পালেন তারা যেন একটু লাভের মুখ দেখতে পান। যেন আগের বারের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেন।
বেপারিরা জানান, নানা কারণে গরুর দাম এবার একটু চড়া হবে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, পাবনা, মেহেরপুর ও দেশের উত্তরবঙ্গ থেকে বর্তমানে গরুবাহী প্রতিটি ট্রাকের ভাড়া গড়ে ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা। চার মণ মাংস পাওয়া যাবে এমন ১৫ থেকে ১৬টি গরু পরিবহন করা যায় একেকটি ট্রাকে।
 
কোরবানির সময় এসব গরুবাহী ট্রাকের ভাড়া এক লাফে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এছাড়া, পথে পথে নানা ধরনের চাঁদাবাজিসহ হাট-খরচও তো আছেই।
 
মানিকগঞ্জের নওশের আলী বেপারি বলেন, ‘এখন যে ট্রাকের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা, কোরবানির আগে সেটির ভাড়া গিয়ে দাঁড়াবে ৩০ হাজারে। পথে পথে চাঁদাবাজি, মাস্তানি ও হাট-খরচ তো বাদই থাকলো। এখনই গিরস্থের( গৃহস্থ) কাছ থেকে চড়া দামে গরু কিনতে হয়। এ-কারণে কোরবানির সময় এবার গরুর দামও হবে অন্যবারের চেয়ে বেশ চড়া। ’
 
বেপারিদের কথার সঙ্গে মিল রয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর(বিবিএস) দেওয়া তথ্যের। তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করলে এ ধারণাই পাওয়া যায়, শেষ পর্যন্ত ভারতীয় গরু যদি না-ই আসে তাহলে দাম এবার বাড়বে। তবে সরবরাহের ঘাটতি হবে না, সঙ্কট তৈরি হবে না।
 
‘বেসরকারিভাবে চাষকৃত জৈবিক সম্পদ’ শীর্ষক এক জরিপে  দেখা গেছে,  বর্তমানে দেশে মোট গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮১ লাখ ৮৯ হাজার। এর মধ্যে ষাঁড় এক কোটি ৯ লাখ ৭৬টি এবং গাভীর সংখ্যা ১ কোটি ৭২ লাখ ১৩ হাজারটি।
 
অন্যদিকে দেশে মোট মহিষের সংখ্যা ৫ লাখ ৫২ হাজার। এর মধ্যে ষাঁড়-মহিষ ২ লাখ ৬৭ হাজারটি। দেশে মোট ছাগলের সংখ্যা এক কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজারটি। দেশে মোট ভেড়ার সংখ্যা ১৩ লাখ ৮৫ হাজারটি।
 
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর-সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮৬ লাখ ২২ হাজার গরু-মহিষ জবাই হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭২ লাখই গরু। ঈদুল আযহাতে প্রায় ৩৫ লাখ গরু কোরবানি হয়েছিল। সেই হিসেব মাথায় রেখে বলা যায়, গরুর কোনো সঙ্কট তৈরি হবে না। কেননা প্রতিবার দেশীয় গরুতেই কোরবানির ৭০ শতাংশ চাহিদা মেটে। বাকি ৩০ শতাংশ ভারত থেকে আসে। ভারত-সীমান্ত দিয়ে গরু আসা বন্ধ থাকায় এবার গরু কোরবানি অন্যবারের চেয়ে ৫ লাখ কম হতে পারে।
অন্যদিকে এবার বেড়ে যেতে পারে ছাগল, মহিষ ও ভেড়া  কোরবানির হার।
 
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (উৎপাদন) কালিদাস সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘গতবছর ৩৫ লাখ গরু কোরবানি হয়েছিল। এবার হবে তার চেয়ে ৫ লাখ কম। তবে কোরবানির পশুর কোনো সঙ্কট হবে না। দাম একটু বাড়বে কেবল। শেষ পর্যন্ত ভারত থেকে গরু যদি না-ই আসে তাহলে ছাগল, ভেড়া ও মহিষ কোরবানি বাড়বে। ’
 
ভারতীয় গরু না এলে হাসিল-ব্যবসায় ভাটা পড়তে পারে গাবতলী  পশুর হাটে। তবে শেষ পযর্ন্ত ভারতীয় গরু আসবেই—এমন আশায় বুক বেঁধে আছে গাবতলী পশুর হাট পরিচালনা কমিটি। তারা মনে করেন, শেষ পর্যন্ত ভারতীয় গরু আসবেই। কেউ কেউ তো এবার কতো গরু আসবে সেটাও বলে দিলেন।
 
কমিটির সদস্য সানোয়ার  হোসেন বাংলানিউজকে  বলেন, ‘ভারত থেকে ১০ লাখ গরু অচিরেই দেশে আসছে। এটা আমাদের সবার জন্য ভালো হবে। তুলনামূলক কম দামে গরু কোরবানি দিতে পারবেন দেশের মানুষ। ভারতের গরু না এলে ছাগল ও ভেড়া কোরবানি দিয়েও কুল কিনারা পাবো না। আমরা চাই ভারতীয় গরু বাংলাদেশে আসুক। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।