ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে নিশ্চিন্তে হোক মোবাইল ব্যাংকিং

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৫
নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে নিশ্চিন্তে হোক মোবাইল ব্যাংকিং

ঢাকা: ফরিদার ঢাকায় বছর আড়াই হবে। আগে বেতনের টাকা এক বড় ভাইয়ের হাতে বাবা-মা’র কাছে পাঠাতেন।

বছর খানেকের বেশি হতে চলছে নিজের মোবাইল ফোনে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, তা থেকে সরাসরি টাকা পাঠান গ্রামে বাবার মোবাইলে।

আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন ফরিদা। থাকেন পরিচিত এক বোনের বাসায়। থাকা বাবদ কিছু টাকা দিতে হয়, আর বাকিটা তো পাঠিয়েই দেন বাড়িতে।

গ্রামে টাকা পাঠানো প্রসঙ্গে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, গাইবান্ধা সদর উপজেলার মালিবাড়ী ইউনিয়নে তার গ্রাম। বছর খানেক ধরে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠালেও এখন তিনি মনে করছেন নিজেই যখন অ্যাকাউন্টধারী তাই এজেন্টকে এরমধ্যে এনে কী লাভ। আরও নিরাপদ থাকতে চান বলেই কিনা নিজেই ফোন হাতে তুলে করছেন বিকাশ। সচেতনতায় এমন বোধ বেশ প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কর্মজীবী নারী।

তিনি বলেন, মোবাইল দিয়ে যখন তখন টাকা পাঠাতে পারি, এছাড়া প্রয়োজনে নিজেই তো বাই-এয়ারটাইম সেবা ব্যবহার করে ফোনের ব্যালেন্স রিচার্জ করে ফেলি। তাহলে টাকাও পাঠানো উচিত নিজেকেই। আমি সেটাই করছি।

মোবাইল ব্যাংকিং একটি সুন্দর ও নিরাপদ মাধ্যম এ কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, একে নিজের প্রয়োজনে সুবিধাজনকভাবে ব্যবহার করলে যে কেউই লাভবান হতে পারেন। কোনো সমস্যা থাকে না। এক্ষেত্রে বিকাশেই ভরসা-আস্থা তার। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ফরিদা আরও বলেন, আগে গ্রামের এক বড় ভাইয়ের হাতে টাকা পাঠাতাম, তিনি পৌঁছে দিতেন বটে তবে সময় লাগতো ১ কী ২ দিন। কিন্তু এখন সে সময় মিনিটে নেমে এসেছে। এক ক্লিকেই টাকা চলে যাচ্ছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। নিজের হাতেই তো সব।

এ বিষয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের মহা-ব্যবস্থাপক এ এফ এম আসাদুজ্জামান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময় মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালার ওপর কঠোর নজরদারি রাখছে। দিনে দিনে এক্ষেত্রে আমরা আরও উন্নত হচ্ছি। গ্রাহকরাও সচেতন হচ্ছেন। অর্থিক লেনদেনে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এটি একটি বড় উদ্যোগ।

মো. খালিদের প্রসঙ্গটা অন্যভাবে এলো। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। চাকরিজীবী। রাজধানীর গুলশানে একটি এজেন্ট পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ক্যাশ-ইন করছিলেন। এ সময় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় তার। বলেন, আমি বিকাশ গ্রাহক। নিজেই প্রয়োজনে টাকা আদান-প্রদান করি। এজেন্টের কাছে এসেছি অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা ভরে নিতে।

তিনি জানান, মাসে মাসে বেতন পেয়ে মোবাইলে টাকা ক্যাশ-ইন করে নেন। এ থেকে চলে যায় সারা মাস। ব্যস্ত জীবনে সুবিধা বিকাশ। এছাড়া জমানো টাকার ওপর ইন্টারেস্টও পান, যা খুব কার্যকর।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার দুই মেয়ে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর আরেকজন স্কুলে পড়ে। ওদের হাত খরচের টাকা আমি নিজেই মোবাইল থেকে প্রয়োজন বুঝে বিকাশ করে দেই। বড় মেয়েটা ইডেনে পড়ছে। কখন কিসে টাকা লাগে আমাকে জানালেই আমি ওর অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেই।

‘স্বচ্ছ আর্থিক লেনদেনে বিশ্বাসী আমি এবং চাই সবাই এমনভাবে এই সেবা কাজে লাগাক যেন সত্যিই এর সুফল পাওয়া যায়’- যোগ করেন খালিদ।

বিকাশ এজেন্টের কাজ কেবল তিনটি। ক্যাশ-ইন করে দেওয়া, ক্যাশ-আউট এবং গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া। ক্যাশ-ইন সেবার মাধ্যমে গ্রাহক যে কোনো বিকাশ এজেন্ট থেকে নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা ভরে নিতে পারেন।

দিন দিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতা এবং সুবিধা বাড়ছে। এ কারণে বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা এবং আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ। একই সঙ্গে বাড়ছে গ্রাহকদের নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করার প্রবণতাও। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানা যায়, কেবল এক স্থান থেকে আরেক স্থানে টাকা পাঠানোই নয়, দেশের অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। যোগ হয়েছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। এছাড়া এই সেবার আওতা ও সুবিধা বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা ও লেনদেন যেমন বেড়েছে, তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার ধারাবাহিকতা এবং কঠোর নজরদারির কারণে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের প্রবৃদ্ধি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে তথা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এসব বিষয়ে বিকাশের হেড অব মার্কেটিং আসিফ আহমেদ বলেন, গ্রাহকরা যাতে নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করে লেনদেন করেন সে ব্যাপারে বিকাশ সব সময় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষের মধ্যে নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করে লেনদেন করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও যোগ করেন, অর্থ লেনদেনের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ফোনের এয়ারটাইম ক্রয়, দোকানে কেনাকাটাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যাচ্ছে। এছাড়া অ্যাকাউন্টে জমা টাকার ওপর দেওয়া হচ্ছে ইন্টারেস্ট। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে নিজের অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করার উৎসাহ বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব শেষ পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১৩ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। জুনে হয় ১২ হাজার ৯৬৯ কোটি। এতে দৈনিক কগড় লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬০ কোটি টাকা। আগের মাসে যা ছিল ৪৩২ কোটি টাকা। এ হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নিয়েছে। এরমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে ১৯টি। লেনদেন ও গ্রাহক বাড়ার সঙ্গে এজেন্ট সংখ্যাও বেড়ে সাড়ে ৫ লাখে উন্নীত হয়েছে। তবে এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশের এজেন্ট, গ্রাহক সংখ্যা, ও গ্রাহক আস্থা অন্যদের চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৫
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।