ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সোনালী লাইফে অনিয়মই নিয়ম!

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৫
সোনালী লাইফে অনিয়মই নিয়ম!

ঢাকা: বিমা আইনের শর্ত না মেনেই নিবন্ধন সনদ পেতে আবেদন করেছিল সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। তারপরও প্রতিষ্ঠানটিকে জীবন বিমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধন সনদ দিয়ে দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।


 
বিমা আইন অনুযায়ী, কোনো বিমা কোম্পানিতে এক পরিবার থেকে দু’জনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবে না। আর এক পরিবার থেকে দু’জন পরিচালক থাকলে তাদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
 
আইনে এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও সোনালী লাইফে একই পরিবারের দখলে রয়েছে ১০ শতাংশের ওপরে শেয়ার। প্রতিষ্ঠানটিতে পরিচালক হিসেবে একই পরিবার থেকে আছেন দুই ভাই--- শেখ ওমর ফারুক ও ওমর খৈয়াম। এদের প্রত্যেকের দখলেই আছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ করে শেয়ার। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির ১১ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ার তাদের দখলে।
 
শুধু পারিবারভিত্তিক শেয়ার ধারণ নয়, পরিচালকদের এককভাবে শেয়ার ধারণের নিয়মকেও থোড়াই কেয়ার করেছে সোনালী লাইফ। আইনে এককভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির তিন পরিচালকের কাছে ১০ শতাংশের ওপরে শেয়ার থাকাটা সেকথাই বলছে।
 
এর মধ্যে পরিচালক ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া’র দখলে আছে ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ শেয়ার। সাফিয়া সোবহান চৌধুরী নামের আরেক পরিচালকের কাছে আছে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া পরিচালক হিসেবে থাকা রূপালী ইন্স্যুরেন্স’র দখলে আছে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ শেয়ার।
 
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের শেয়ার ধারণের এই চিত্র দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে একাধিক জীবন বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে পরিচালকদের পারিবারিক ও এককভাবে শেয়ার ধারণে কোন নিয়ম মানা হয়নি। এ ধরনের কোম্পানি অনুমোদনের আবেদন প্রাথমিক বাছাইয়ে বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা।
 
বিষয়টি নিয়ে আইডিআরএ’র সদস্য মো. কুদ্দুস খান ও সুলতান-উল-আবেদিন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এ-ব্যাপারে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
 
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নূর ই হাফজা বাংলানিউজকে বলেন, ‘৭০টি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সোনালী লাইফ অনুমোদন পেয়েছে। আইন অনুযায়ী সবকিছু খতিয়ে দেখেই কোম্পানিটির অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাহলে নিশ্চয় সবকিছু ঠিক আছে। ’
 
আর প্রতিষ্ঠানটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত চন্দ্র আইচ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আইনেই আছে কোনো পরিচালক দুই শতাংশের কম এবং ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। সুতরাং পরিচালকদের শেয়ার ধারণে অনিয়ম করলে আইডিআরএ অবশ্যই তা মানবে না। ’
 
এ সময় ‘বাংলানিউজের কাছে পরিচালকদের ১০ শতাংশের ওপরে শেয়ার ধারণের তথ্য প্রমাণ আছে’ উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে যে তথ্য আছে, সেতথ্য আমাদের তথ্যের সঙ্গে নাও মিলতে পারে। আমাদের তথ্য মোতাবেক কোনো পরিচালকের কাছে ১৪ শতাংশ শেয়ার নেই। ’
 
এদিকে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রেও নানা অনিয়ম করছে এই বিমা কোম্পানি। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে হাতে নগদ ৮ লাখ ৪৬ হাজার এবং ব্যাংকে জমা ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা আছে। অপরদিকে পলিসি হোল্ডারদের কাছে দায়ের পরিমাণ ৭৫ লাখ টাকা।
 
২০১৩ সালে ব্যবসা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম বছর ১ হাজার ৪৮১টি পলিসি বিক্রি করে। এক বছর পর ২০১৪ সালে পলিসি বিক্রি হয় ৫ হাজার ৩৫৫টি। এর বিপরীতে তামাদি (বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয় ১ হাজার ৭৬১টি।
 
আর চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে পলিসি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫৬৪টি। এর বিপরীতে তামাদি হয়েছে ১ হাজার ১০৯টি। অর্থাৎ প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটিতে মোটা অঙ্কের পলিসি তামাদি হয়ে যাচ্ছে।
 
ব্যবস্থাপনা-ব্যয়ের ক্ষেত্রেও অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই প্রতিষ্ঠানটি আইন লঙ্ঘন করে ৬ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যবস্থাপনা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।
 
প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নির্বাহী অজিত চন্দ্র আইচ বাংলানিউজকে আরও বলেন, ‘আমাদের রেকর্ড অনুযায়ী অপনার তথ্য সঠিক না। চলতি বছর আমাদের ব্যবস্থাপনাব্যয় ৫৫ শতাংশের বেশি হবে না। যেখানে নতুন অনুমোদন পাওয়া কোনও কোনও কোম্পানি ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।